Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভাষা আন্দোলন ছিল অনিবার্য ছিল যে কারণে

ফিচার ডেস্ক
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৪:১১

১৯৪৭ সালে অখণ্ড ভারতবর্ষ ভেঙে তিন খণ্ডে দু’টি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। একটি রাষ্ট্র আজ অবধি অখণ্ড টিকে গেলেও আরেকটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাত্র ২৩ বছরের মাথায় ভেঙে যায়। দ্বিতীয় রাষ্ট্রটি পাকিস্তান। দুই ভৌগলিক খণ্ডে জন্ম নেওয়া দেশটি এতটাই অদ্ভুত ভৌগলিক ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো নিয়ে সৃষ্টি হয় যে, প্রতিষ্ঠার শুরুতেই এর পতন নিশ্চিত হয়ে যায়। পাঁচ বছরের মাথায় ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে প্রাণ দেয় বাঙালিরা। ১৯৪৭ সালে গঠিত পাকিস্তান এরপর অখণ্ড হিসেবে টিকেছে মাত্র ১৯ বছর। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয়ে যায় তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান। গঠিত হয় নতুন দেশ—বাংলাদেশ।

বিজ্ঞাপন

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ছিল অনিবার্য। বলা চলে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের আদিপর্ব। তৎকালীন সরকার পূর্বপাকিস্তানকে স্বাধীন রাষ্ট্রের অংশ নয়, বরং একটি উপনিবেশের মতো শাসন করার নীতি গ্রহণ করে। পূর্বপাকিস্তানকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে শোষণের পাশাপাশি সাংস্কৃতিকভাবেও কঠোর দমন-পীড়ন করে সরকার। বাংলার মানুষ যেন ব্রিটিশ উপনিবেশ শাসন থেকে আরেক উপনিবেশ শাসনের কবলে পড়ে। বাংলার মানুষদের দমনের চীর ব্যবস্থা হিসেবে পাকিস্তান সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা বাংলা’র পরিবর্তে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্র শুরু করে।

বিজ্ঞাপন

ড. অজিত কুমার দাস তার রচিত—‘ভাষা আন্দোলনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা’ বইয়ে ভাষা আন্দোলনের কারণ হিসেবে লিখেছেন, “আমরা দেখেছি যে, ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তি সম্পন্ন হবার পর নবগঠিত ভারত রাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দ দেশে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রকৃতির সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের নীতি গ্রহণ করেন। অপরদিকে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ও মুসলিম লীগ নেতৃত্ব দেশে যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রকৃতির সংসদীয় শাসন অর্থাৎ জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠার নীতি গ্রহণ না করে পূর্ব বাংলার নিরীহ শান্তিপ্রিয় মানুষের ওপর এক উপনিবেশ সুলভ নীতি চাপিয়ে দিতে চায়। এই নীতির অংশ হিসেবে তারা পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা বাংলার পরিবর্তে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্র শুরু করে। যেখানে পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৪.৬% লোক বাংলা এবং মাত্র ৭% লোক উর্দু ভাষায় কথা বলে সেখানে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার অর্থই ছিল বাঙালি জনগণকে দাবিয়ে রাখা, শোষণ করার এক ষড়যন্ত্র।”

ভাষা এমন একটি বিষয় যার মাধ্যমে মানুষের সকল দক্ষতা চূড়ান্ত রূপ পায়। ফলে ভাষাকেই লক্ষ্য করে পাকিস্তানিরা। রাষ্ট্রভাষায় দক্ষতা না থাকলে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ কঠিন হয়ে পড়বে আর এতে বাঙালিরা পিছিয়ে পড়বে— এমনটাই ছিল পাকিস্তানিদের উদ্দেশ্য।

অজিত কুমার দাস তার বইয়ে লিখেছেন, “বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর এই ষড়যন্ত্রের মূল উদ্দেশ্য ছিল দুটি। প্রথমত, পূর্ব বাংলার জনগণকে নেতৃত্বশূন্য ও আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা। কারণ, বাংলার পরিবর্তে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করা হলে বাঙালি জনগণকে চাকরি তথা প্রশাসনে অংশগ্রহণের জন্য একটি বিদেশী ভাষা শিক্ষার বোঝা বহন করতে হতো। এতে করে বাঙালির স্বাভাবিকভাবেই অবাঙালিদের থেকে পিছিয়ে পড়তো।”

দ্বিতীয় কারণ হিসেবে অজিত কুমার দাস উল্লেখ করেছেন ভাষায় আঘাতের মাধ্যমে সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি বাংলার মানুষের যে গভীর যোগাযোগ, সেই যোগাযোগকে শিথিল করে দেওয়ার চেষ্টাকে। কেননা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি টান দুর্বল হয়ে গেলে বাঙালিরা আত্মপরিচয় ভোলা জাতিতে পরিণত হবে এবং এতে তাদের মধ্যে স্বাধীনতার বাসনা কোনোদিনই জাগবে না।

অজিত কুমার দাস লিখেছেন, “দ্বিতীয়ত, পূর্ব বাংলার জনগণ বাংলাভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি গভীরভাবে অনুরক্ত ছিল। তারা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জন্য গর্ববোধ করতো। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ ছিল তাদের আদর্শ, চেতনা, মূল্যবোধ। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার জনগণের এমন বাঙালি সংস্কৃতি প্রীতিকে সন্দেহের চোখে দেখতো। তারা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে হিন্দুদের সংস্কৃতি বলে মনে করতো। তারা আরও মনে করতো যে, পূর্ব বাংলার জনগণের এ ধরনের সংস্কৃতি চর্চা ভারতের ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়।”

ভাষা নিয়ে পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্রের কারণ হিসেবে অজিত কুমার দাস উপসংহার টেনে লিখেছেন, “মোটকথা, পূর্ব বাংলার জনগণের বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে তাদের নেতৃত্বশূন্য এবং আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যেই পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্র শুরু করে এবং এই ষড়যন্ত্রের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ইসলামীকরণের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে।”

এসব কারণে ভাষা আন্দোলন হয়ে পড়ে অনিবার্য। পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের মাত্র ৫ বছরের মাথায় ঢাকায় পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে তুমুল আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। আর ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথে রক্তে ঝরে বাঙালিদের।

সারাবাংলা/এসবিডিই

ইতিহাস ফিচার ভাষা আন্দোলন ছিল অনিবার্য ছিল যে কারণে

বিজ্ঞাপন

খুলনায় যুবকের পেটে মিলল ইয়াবা
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর