অগ্নি দুর্ঘটনা এড়াতে সচেতনতা জরুরি
১৯ মার্চ ২০২৩ ১৬:৫৩
একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না। মানুষের জীবনে সুখ দুঃখ উভয় আছে। অনেক সময় দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে অনেক সমস্যায় পড়ে। অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগ আছে, যার পূর্বাভাস দেয়া যায়। কিন্তু দুর্ঘটনা পূর্বাভাস দিয়ে আসে না। অগ্নি দুর্ঘটনা তেমন একটি মারাত্মক। দেশের অধিকাংশ মানুষ কাজের সন্ধানে গ্রাম ছেড়ে শহরে আসছে। ফলে গ্রামের তুলনায় শহরের জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি। আর শহরের মানুষ বাসায় রান্নার জন্য গ্যাস সংযোগ ব্যবহার করে। বাংলাদেশের ভয়াবহ দুর্ঘটনার মধ্যে গ্যাস সংযোগ থেকে অগ্নিকাণ্ড অন্যতম। অগ্নিকাণ্ড হলে অনেক মানুষ নিহত ও আহত হয়। কারণ বহুতল ভবন থেকে তাড়াহুড়ো করে বাইরে আসতে পারে না। অনেকে আবার ১০-১২ তলা ভবন থেকে নিচে লাফ দিয়ে আরো ঝুঁকির সম্মুখীন হয়। এতে লাখ লাখ মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করে। অগ্নিকান্ডে শুধু মানুষের জীবন নিয়ে ঝুঁকিতে থাকে না। এছাড়া অনেক অর্থ-সম্পত্তির ক্ষতি হয়ে যায়। চোখের সামনে মুহূর্তে জ্বলেপুড়ে ছাড়খার হয়ে যায়। বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালে মোট অগ্নিদুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ২১,৬০১টি। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২১৮ কোটি ৩১ লাখ ৯৭ হাজার ৪০৩ টাকা।
অগ্নিদুর্ঘটনার অনেক কারণ আছে। তার মধ্যে প্রধান কারণ বৈদ্যুতিক গোলযোগ। বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে গতবছর প্রায় ৮০০০টি অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে, যা মোট অগ্নিদুর্ঘটনার ৩৮ শতাংশ। বৈদ্যুতিক, গ্যাস এবং মাটির চুলা ইত্যাদি অগ্নিদুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। তাছাড়া অগ্নিদুর্ঘটনার অন্যান্য কারণ বিড়ি-সিগারেটের আগুন। আজকাল পাবলিক প্লেসে ধুমপানের পরিমাণ অতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ধূমপায়ী যত্রতত্র সিগারেট ফেলে। ফলে অবিশিষ্ট সিগারেট থেকে অগ্নিকাণ্ডের উৎপত্তি হয়। মোট দুর্ঘটনার ১৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ ঘটেছে এই কারণে। মূলত অসতর্কতা ও অবহেলার কারণে প্রতি বছর অগ্নিদুর্ঘটনায় অগণিত মানুষ ও প্রাণী মারা যাচ্ছে ও সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। শর্টসার্কিট, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, দাহ্য কেমিক্যালের গোডাউনে অগ্নিদুর্ঘটনা, রান্নাঘরের ত্রুটিপূর্ণ চুলা ও বিড়ি-সিগারেটের ফেলে দেওয়া জ্বলন্ত অংশ থেকেই ঘটছে ছোট থেকে বড় ধরনের অগ্নিদুর্ঘটনা। আর অগ্নি দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে থাকার জন্য সচেতনতা সবচেয়ে দরকার। বিশেষ করে অনেক গুদামে অগ্নি দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। তাই জরুরি ভিত্তিতে আবাসিক এলাকা থেকে গুদাম বা কারখানা সরিয়ে নেওয়া, অনুমোদনহীন কারখানার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া, রাসায়নিক দ্রব্যের মজুত, বাজারজাতকরণ এবং বিক্রির জন্য লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া জোরদার করা, ‘অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন ২০০৩’ ও ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ভবন নির্মাণ নিশ্চিত করা।আবাসিক এলাকায় রাসায়নিক দ্রব্য বা বিস্ফোরকজাতীয় পদার্থ মজুতকরণ বা বিপণন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। ঘরবাড়িতে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক তারের গুণগতমান নিশ্চিত করতে হবে এবং কিছুদিন পর পর সংযোগ চেক করতে হবে। অগ্নি দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের কাজে নিয়োজিত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের অবকাঠামো, জনবল, প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামের উন্নয়ন করতে হবে। জরুরি হেল্পলাইন ৯৯৯ বিষয়ে জনগণকে জানাতে হবে। তবে অগ্নিকাণ্ডের মূল কারণ অবহেলা। বাসাবাড়িতে গ্যাসের চুলা চালু করে রাখলে ঝুঁকির পরিমাণ বেড়েই চলে। রান্না করার পরে, চুলার আগুন সম্পূর্ণরূপে নিভিয়ে দিতে হবে। যত্রতত্র ধূমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। দরজা-জানালা খুলে দিতে হবে এবং গ্যাসের চুলা জ্বালানোর আগে নিয়মিত গ্যাস সংযোগ ও লাইন চেক করতে হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এসবিডিই