আহলান সাহলান মাহে রমজানুল মোবারক
২৫ মার্চ ২০২৩ ১৫:১২
পবিত্র রমজানের রোজা ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ ও বিধান। রহমত, মাগফিরাত, নাজাতের সওগাত নিয়ে উপস্থিত রমজানুল মোবারক। এটিকে আল্লাহ মুসলমানদের জন্য ফরজ করেছেন। এ মাসটির প্রতিটি মুহূর্ত বরকতমন্ডিত। আর এই বিধানের অন্যতম লক্ষ্য হলো তাকওয়া বা আল্লাহভীতির গুণ অর্জন করা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে মুমিনরা! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান দেওয়া হয়েছিল পূর্ববর্তীদের, যাতে তোমরা মুত্তাকি (তাকওয়াসম্পন্ন) হতে পারো।” [সুরা বাকারা, আয়াত, ১৮৩] এ রমজান মাস হলো রহমতের মাস, মাগফিরাতের মাস, নাজাতের মাস। এ মাস কুরআন নাজিলের মাস। এ মাস ইবাদতের মাস।
রমজান শব্দটি পাঁচটি অক্ষরের সমন্বয়ে গঠিত। ৫টি অক্ষরের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ। ‘রা’ অক্ষর দ্বারা সন্তুষ্টি, ‘মীম’ দ্বারা মুহাব্বত, ‘দাল’ দ্বারা জামিন, ‘আ’ দ্বারা ভালোবাসা ও ‘নূন’ দ্বারা নূর কে বোঝানো হয়েছে। আর রমজান শব্দের অর্থ হলো আত্মশুদ্ধি লাভ করা।
রোজা শুধু উম্মতে মুহাম্মাদীরা রাখছে না পূর্ববর্তী নবীগণও রোজা রেখেছেন। প্রথম নবী হযরত আদম (আ.) আইয়ামে বিজের রোজা রাখতেন। আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজাকে আইয়ামে বিজের রোজা বলা হয়। হযরত নূহ (আ.) সব সময়ই রোজা রাখতেন। এছাড়াও হযরত দাউদ (আ.) এর উম্মতের ওপর একদিন পর একদিন রোজা ফরজ ছিল। হযরত মুসা (আ.) এর উম্মতের ওপর আশুরার দিন এবং প্রত্যেক শনিবার রোজা ফরজ ছিল। হযরত ঈসা (আ.) এর উম্মতের ওপর একদিন রোজা রেখে ২ দিন বিরতি দিয়ে আবার রোজা রাখার বিধান ছিল। আর উম্মতে মুহাম্মদির জন্য বছরে এক মাস রোজা ফরজ করা হয়েছে। এমনকি বড় আসমানি কিতাব ছাড়াও ১০৪ খানা আসমানি কিতাব পবিত্র রমজানে নাজিল হয়।
মানুষের ‘নফস’ সবসময় মন্দ কাজে আনন্দিত হয়ে থাকে। রমজান তার বিরুদ্ধে মুখ্য ভূমিকা রাখে। রমজানে মুসলমানের অন্তর পরিশুদ্ধ হয়। পবিত্র রমজানে সমাজের মধ্যে মাদকাসক্ত, চুরি-ডাকাতি, ধর্ষণ, হত্যা, খুন, যৌতুক, সুদ, ঘুষ, ছিনতাই, যেনা-ব্যভিচার ও জুলুম-অত্যাচারের বিরুদ্ধে জোরালো অবদান রাখে। সমাজের সব মানুষের মাঝে সাম্য-সম্প্রীতি সৃষ্টি হয়।খোদাভীতি, ধৈর্য, ত্যাগ, সাধনা ও নৈতিক গুণাবলির বিকাশ সাধন হয় এই পবিত্র রমজান মাসে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তবে যে সংযত ও সংশোধিত হয়, পরে তাহাদের জন্য ভয় নাই এবং তাহারা দুঃখিত হইবে না।” [সূরা আরাফ : ৩৫]
রমজানের পাঁচটি সুন্নত পালনে সচেষ্ট থাকতে হবে। যথা: ১. সেহরি খাওয়া, ২. ইফতার করা, ৩. তারাবির নামাজ পড়া, ৪. কোরআন তিলাওয়াত করা ও ৫. ইতিকাফ করা। যারা কোরআন তেলাওয়াত জানেন না তারা কোরআন শেখার চেষ্টা করতে হবে, আর যারা জানেন তারা অবশ্যই শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে। সেহরি ও ইফতার করতে হবে। সাহরি একটু দেরীতে করা ভালো আর ইফতার সাথে সাথে করতে হবে। মনে রাখতে হবে আজানের সময় সেহরি খেলে রোজা হবে না। রমজানের একটি অতিব গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত হলো রমজানের শেষের ১০ দিন ইতিকাফ করা। এর যদি কম সময় ইতিকাফ করে তাহলে নফল হিসেবে গণ্য করা হবে। পুরুষরা মসজিদে ইতিকাফ করবে এবং মহিলারা নিজ ঘরে নিজ কক্ষে ইতিকাফ করবে। হাদিসের মধ্যে ইতিকাফে ফজিলত অনেক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
রমজানের বিশেষ তিনটি আমল হলো: ১. কম খাওয়া, ২. কম ঘুমানো ও ৩. কম কথা বলা। হারাম থেকে বেঁচে থাকা, চোখের হেফাজত করা, কানের হেফাজত করা, জবানের হেফাজত করা। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে: তোমরা আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হও [মুসলিম] একটা হাদিসে প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:- “তোমরা রমজান মাসে চারটি কাজ বেশি বেশি করো। তন্মধ্যে দুটি কাজ এমন যা করলে তোমাদের প্রতিপালক সন্তুষ্ট হন । আর অপর দুটি কাজ হলো এমন যা না করে উপায় নেই। যে দুটি কাজে তোমাদের প্রতিপালক খুশি হন তাহলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ সাক্ষ্য দেয়া (কালিমা পাঠ) ও ইসতেগফার করা । আর যে দুটি কাজ না করে উপায় নেই তাহলো তোমরা আল্লাহর নিকট জান্নাত প্রার্থনা কর এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা কর। [সহীহ ইবনে খুজাইমা হাদিস নং ১৮৮৭]
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- “রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দঘন মুহূর্ত রয়েছে। একটি হলো ইফতারের সময় (এ সময় যেকোনো নেক দোয়া কবুল করা হয়)। আর অন্যটি হলো (কেয়ামতের দিবসে) নিজ প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।” [ এই হাদিস টি বুখারি ও মুসলিম শরীফে বর্ণনা করা হয়েছে] এ পবিত্র মাসে আমাদের কোরআন তিলাওয়াত, তারাবিহ-তাহাজ্জুদ, দোয়া-ইস্তেগফার, তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আসকার, যাকাত-ফিতরা, দান-সাদকাসহ ইবাদত-বন্দেগি করে অশেষ পুণ্য লাভের জন্য মাহে রমজানে নিজেদের আত্মনিয়োগ করতে পারি সে তওফিক দান করুক। আমিন।
লেখক: শিক্ষার্থী, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদরাসা, চট্টগ্রাম
সারাবাংলা/এজেডএস