পরীক্ষার দিনগুলোতে নিজের সাথে নিজেই যুদ্ধ করেছি
৬ মে ২০১৮ ১৮:০৬
।।নাশওয়াহ আফিফ নুহা।।
শুধু ভালোভাবে পড়ালেখার জন্যে নিজের বাসা থেকে অনেক দূরে হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করেছি। অনেক কষ্ট হয়েছে। কষ্টের ফল মিষ্টি হয়। সেই মিষ্টি ফল হিসাবে আমি এবারের এসএসসি পরিক্ষায় ঢাকা বোর্ড থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছি। যদিও আমি রিলিজিয়াস স্টাডিজ আর বাংলাদেশ এন্ড গ্লোবাল স্টাডিজ এই দুই বিষয়ের একটাতে এক নাম্বার আর অন্যটাতে ৫ নাম্বারের জন্যে এ প্লাস পাইনি; বাকি সব বিষয়গুলোতেই, বিশেষত সায়েন্সের বিষয়গুলোতে আমার ৯০ এর উপরে নাম্বার এসেছে।
প্রশ্ন ফাঁসের একটা নোংরা সময়ের মধ্যে আমাদের পরীক্ষাটা হয়েছে। তাই মনের আনন্দটা ফিকে হয়ে আসছে যখন দেখছি অনেক মোটামোটি মানের ছাত্র ছাত্রীরাও বেশ ভালো নাম্বার পেয়েছে।
আমি এই এক পণ করেছিলাম যে যতকিছুই হোক, আমি ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দিব না। তারপর যখন পরীক্ষার হলে গিয়ে দেখলাম প্রায় সবাই প্রশ্ন পেয়ে গিয়েছে, মনটা খুব খারাপ হতো। বারবার মনে হতো, সবাই তো রেজাল্ট দেখবে, আমার প্রশ্ন না পাওয়াটাতো কেউ দেখবেনা! মাঝে মাঝে মন বলতো প্রশ্ন খুঁজে নেবো, কিন্তু আবার নিজেকেই নিজে আটকাতাম। আমার বাসারও কেউ সেটা চায়নি। আব্বু বলতেন, তুমি নিজে পারলে আর প্রশ্নের দরকার কি?
আর শুধু আব্বুই না, বাসার সবারই একই কথা। তাই নিজের মনকে শক্ত রাখতাম। অন্তত আমি এবং আমার পরিবার জানবো, আমি সৎ ভাবে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। তবে এটা ছিল মনের সাথে বিরাট একটা যুদ্ধের মত ব্যাপার। সব পরীক্ষাতেই যখন দেখতাম, যারা হলে ঢুকার আগে বলতো ‘জানিস,কিচ্ছু পড়ি নাই…রাতে গ্রুপে আড্ডা দিসি’ তারাই আবার হল থেকে বের হয়ে বলত ‘দোস্ত! ১০০% কমন! পুরা ফুল মার্কস সিওর!’ তখন মনটা ভেঙে যেতো। আমি সহ হাতে গোনা কয়েকজন বাদে আশেপাশে প্রায় অনেককেই দেখেছি প্রশ্ন নিয়ে নাচানাচি করতে। বারবার মনে হতো প্রশ্ন পেলে আমি হয়তো আরও ভালোভাবে পরীক্ষা দিতে পারতাম। একদিন হল থেকে এসে আমি কান্না জুড়ে দিলাম। আব্বুকে ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করে এটাও বলেছিলাম যে, আমি আর এভাবে পরিক্ষা দিবো না, অনেকে প্রশ্ন পেয়ে দেয়, আমি যদি খারাপ নাম্বার পাই তাতে কী লাভ! তারপর ও বাসার সবার একই কথা। এমনিই পারবে তুমি। প্রশ্ন পেয়ে ভালো করেও লাভ নাই।
তারপর বাসার সবার কথায় আশ্বস্ত হয়েছিলাম। মনে হয়েছিল সবার কথাতো ঠিক। ওই পরীক্ষার দাম আছে নাকি কোনো? আসলেই তো! তাহলে বাকিরা এটা বুঝেনা কেন?! কেন এখানে পরীক্ষা পরীক্ষার মতো হয় না? পরীক্ষার অপর নাম কেন মানসিক অশান্তি হয়ে দাড়ায়?
যাক, এভাবেই মানসিক চাপে আমার এসএসসি পরীক্ষা শেষ হলো। আর এভাবে পরীক্ষা দিয়েও শান্তি কই। যেই মানুষ শুনে এসএসসি দিয়েছি,সবার প্রথম কথা ‘ভালো তো।প্রশ্নতো ভালোই আউট হইসে।’ কোথায় বাস করি আমরা!
উচ্চমাধ্যমিকের পরে আমি আর এই দেশে থাকতে চাইনা। বাকি পড়াশুনা আমি দেশের বাইরে করতে চাই, যেখানে প্রশ্ন ফাঁস হয়না, সেখানে।
নাশওয়াহ আফিফ নুহা উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজ থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে। কিন্তু পরীক্ষার দিনগুলোতে সে লড়াই করেছে নিজের সাথেই নিজে। পশ্নফাঁসই ছিলো সে লড়াই ও কষ্টের কারণ। এটা নুহা’র কথা। তোমার কোনও কথা আছে… থাকলে জানাও। সারাবাংলা তোমার কথা প্রকাশ করবে সকল গুরুত্বের সাথে। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected] । সাথে একটি ছবি পাঠাতে ভুলো না যেনো!
সারাবাংলা/এমএম