সেহরি ও ইফতারের ফজিলত ও বরকত
১ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:৪৭
রমজানের অন্যতম উপাদান হলো সেহরি ও ইফতার। সেহরি ও ইফতারের মধ্যে অনেক ফজিলত বরকত রয়েছে। সেহরির শব্দের অর্থ হলো- যা কিছু রাতের শেষভাগে খাওয়া হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- ‘তোমরা সেহরি খাও, কারণ সেহরিতে বরকত রয়েছে।’ [বুখারি শরিফ: ১৯২৩] রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য একটি হাদিসে আরো বলেছেন- ‘আমাদের ও ইহুদি-খ্রিস্টানদের রোজার মাঝে পার্থক্য হলো সেহরি খাওয়া।’ [মুসলিম শরিফ: ২৬০৪]
সেহরির সময়ে একটু দেরি করে সেহরি খাওয়া সুন্নত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা শেষ সময়ে সেহরি খেতেন। সেহরির শেষ সময়ে সেহরি সুবিধাও হয়। ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বক্ষণে সেহরি খেলে রোজা রাখতে অধিকতর সহজ হয়, ফজরের নামাজ আদায় করার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় না। রোজাদারের কষ্ট হয় না। সতর্কতা অবলম্বন করে ফজরের অনেক আগে সেহরি শেষ করা সুন্নত নয়। সেহরির সময় শেষ হলো কি না, তা জানার উপায় হলো স্বচক্ষে পূর্বাকাশের শুভ্রতা দেখা অথবা নির্ভরযোগ্য ক্যালেন্ডার ও নির্ভুল ঘড়ির মাধ্যমে অবগত হওয়া। তবে ইফতারে বিলম্ব করা যায় না। ইফতারের সময় হওয়া মাত্রই ইফতার করে পেলতে হয়। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে রাতের আগমন ঘটে ও ইফতার করার সময় হয়ে যায়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘মানুষ যত দিন পর্যন্ত সময় হওয়া মাত্র ইফতার করবে, তত দিন কল্যাণের সাথে থাকবে।’ [বুখারি শরিফ : ২৮৫২]
প্রখ্যাত সাহাবী সাইয়্যেদুনা হযরত আমর ইবনে আস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- আমাদের রোজা ও আহলে কিতাব ইহুদি ও নাসারাদের রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সাহরী গ্রহণ করা। [সহীহ মুসলিম শরীফ] ইহুদি নাসারারা সাহরি করতনা। তাদের উপর এশার নামাযের পর থেকে পানাহার হারাম করা হয়েছে। আর ইসলামের মধ্যে এর ব্যতিক্রম। ইসলামের মধ্যে মুসলানদের জন্য সাহরী করতে বলেছেন এবং সারারাত পানাহার করা হালাল করা হয়েছে।
ইফতার আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো- রোজা ভঙ্গ করা, সমাপ্ত করা। সূর্যাস্তের পর কোন কিছু খেয়ে বা পানাহার করে রোজা সমাপ্ত করাকে ইফতার বলা হয়। ইফতার করার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি বান্দার আনুগত্যের দৃষ্টান্ত স্হাপিত হয়। ইফতারের সময় হওয়া মাত্রই ইফতার করে পেলতে হয়। ইফতারের আগে মুসলমানরা নানা রকমের মজাদার খাবার নিয়ে আল্লাহর হুকুমের অপেক্ষায় থাকে। কখন সময় হবে আর কখন ইফতার করবেন। সময় হওয়া মাত্রই ইফতার করার জন্য হাদিসের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। ইফতার করার সময় খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নাত। আর খেজুর না থাকলে পানি দিয়ে ইফতার করা ভালো। যে কোন ফল জাতীয় বা মিষ্টি জাতিয় কোন কিছু দিয়ে ইফতার করা সুন্নাত। হাদিস শরীফের মধ্যে উল্লেখ আছে- সাইয়্যেদুনা হযরত সালমান ইবনে আমের রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- যখন তোমাদের মধ্যে কেউ ইফতার করার ইচ্ছা করে সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে। কেননা, খেজুর বরকতময়। আর যদি খেজুর না পায় তবে যেন পানি দিয়ে ইফতার করে; পানি পবিত্র করে। [মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি শরীফ, আবূ দাউদ ও ইবনে মাজাহ শরীফ]
হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন, ‘আমার বান্দাদের মধ্যে তারা আমার বেশি প্রিয়, যারা দ্রুত ইফতার করে।’ [তিরমিজি, আলফিয়্যাতুল হাদিস: ৫৬০, পৃষ্ঠা: ১৩১]। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘যখন রাত্র সেদিক থেকে ঘনিয়ে আসে ও দিন এদিক থেকে চলে যায় এবং সূর্য ডুবে যায়, তখন রোজাদাররা ইফতার করবে।’ [বুখারি, সাওম অধ্যায়, হাদিস: ১৮৩০]। অন্য আরেকটি হাদিসে উল্লেখ আছে- হযরত সাহল ইবনে সাআদ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘যত দিন লোকেরা ওয়াক্ত হওয়ামাত্র ইফতার করবে, তত দিন তারা কল্যাণের ওপর থাকবে।’ [বুখারি হাদিস: ১৮৩৩]।
লেখক: শিক্ষার্থী, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদরাসা
সারাবাংলা/এসবিডিই