Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

লাইলাতুল কদরের সম্ভাবনাময় রাত কবে?

মিরাজ রহমান
১৩ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:২০

শবে কদর কবে? এ রাত চেনার কোনো আলামত আছে কি? নির্দিষ্ট করে ‘লাইলাতুল কদর’ চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। কারণ এ রজনীকে নির্দিষ্টকরণমূলক কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। অনেকেই মনে করেন, ২৬ রমজান দিবাগত রাতটিই লাইলাতুল কদর। এমনটা ধারণা করা কোনোভাবেই সঠিক নয়। পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশকের যে কোনো একটি বেজোড় রাতই ‘শবে কদর’ হতে পারে।

‘শব’ বা ‘লাইল’ অর্থ রাত। আর ‘কদর’ অর্থ মর্যাদা। শবে কদর বা লাইলাতুল কদর অর্থ ‘মর্যাদার রাত’। কোনো কোনো আরবি অভিধানের বর্ণনা মতে ‘কদর’ শব্দের অর্থ ‘ভাগ্য’ ধরে এ রাতকে ‘ভাগ্য নির্ধারণ রজনী’ও বলা হয়। লাইলাতুল কদরের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো- এ রজনীতে ঐশীগ্রন্থ পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

পবিত্র কোরআনের সূরা কদরের ১ থেকে ৫ নং আয়াতে আল্লাহ মহান ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি পবিত্র কোরআনুল কারীমকে লাইলাতুল কদরে অবতীর্ণ করেছি। আপনি কি জানেন লাইলাতুল কদর কি? লাইলাতুল কদর হলো- হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রাত। এ রাতে ফেরেশতাগণ ও জিবরাঈল (আ.) তাদের প্রতিপালকের নির্দেশে প্রত্যেক বিষয় নিয়ে অবতীর্ণ হন। এটা এক শান্তিময় রজনী- যা ফজর উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।’

পবিত্র রমজান মাসে আল্লাহ তাআলা উম্মতে মোহাম্মাদীর জন্য ‘শবে কদর’ নামে এমন এক পুরস্কার দান করেছেন, যা অন্য কোনো নবীর কোনো উম্মতকে দান করা হয়নি। বোখারী শরীফের ৭০৯ নং হাদীসে নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমাকে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়েছে, অতঃপর আমাকে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতএব তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতসমুহে তা খোঁজ করবে।’ মুসলিম শরীফের ১১৬৯ নং হাদীসে রাসুল (সা.) এ ব্যাপারে আরও বলেছেন, ‘রমজানের শেষ দশ দিনে তোমরা কদরের রাত তালাশ কর।’

বিজ্ঞাপন

উল্লেখিত হাদীসের আলোকে যে বিষয়টি প্রতিয়মান হয়, তা হলো- নির্দিষ্টভাবে রমজানের কোনো একটি রাতকে শবে কদর বা লাইলাতুল কদর বলা যাবে না। বরং পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশকের যে কোনো একটি বেজোড় রাত শবে কদর বা লাইলাতুল কদর হতে পারে। তবে রমজানের ২৭তম রজনী অর্থ্যাৎ ২৬ রমজান দিবাগত রাতটি লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী। কদরের রাত হওয়ার বিবেচনায় দ্বিতীয় সম্ভাবনাময় রাত হলো- ২৫ তারিখ। তৃতীয় হলো- ২৯ তারিখে। চতুর্থ হলো- ২১ তারিখ। পঞ্চম হলো- ২৩ তারিখের রজনী।

বিজ্ঞ উলামাগণ বলেছেন, মহিমান্বিত এ রজনীটি স্থানান্তরশীল। অর্থাৎ প্রতি বৎসর একই তারিখে বা একই রজনীতে তা স্থির থাকে না। আল্লাহ মহানের হিকমত এবং তার ইচ্ছায় কোনো বছর ২৫ তারিখে, কোনো বছর ২৩ তারিখে, কোনো বছর ২১ তারিখে, আবার কোনো বছর ২৯ তারিখেও শবে কদর হয়ে থাকে।

পরিশেষ রাসুল (সা.)-এর কিছু হাদীস স্মরণ করিয়ে দেই। ইবনে মাজাহ শরিফে উল্লেখ রয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ‘শবে কদর’ থেকে বঞ্চিত হলো; সে যেন সমগ্র কল্যাণ থেকে পরিপূর্ণ বঞ্চিত হলো।’

আবু দাউদ শরিফে উল্লেখ আছে, হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ‘লাইলাতুল কদর’ পেল কিন্তু ইবাদত-বন্দেগীতে সময় কাটাতে পারলো না, তার মতো হতভাগা দুনিয়াতে আর কেউ নেই।’

সুতরাং পবিত্র রমজানের মাসে লাইলাতুল কদর আপনার আমার দরজায় কড়া নাড়ছে। এ রাতটিকে খুঁজে আমল-ইবাদতে কাটিয়ে সৌভাগ্যবানদের তালিকাতে নাম লেখাবো নাকি হতভাগা থেকে যাবো; সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমাদেরকেই।

লেখক: সম্পাদক, ইসলাম প্রতিদিন

সারাবাংলা/এসবিডিই

লাইলাতুল কদরের সম্ভাবনাময় রাত কবে?