আরাফাতে খোদা প্রেমিকদের মহাসম্মিলন
২৬ জুন ২০২৩ ১৭:১১
পবিত্র হজ পালিত হচ্ছে সোমবার (২৬ জুন) থেকে। ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা পালিত হয় ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে। পবিত্র মক্কা নগরীর পাশে ঐতিহাসিক এই ময়দানে জমায়েত হচ্ছেন লাখো মুসল্লি।
সূর্যোদয়ের পর থেকেই ইহরাম অবস্থায় মুসল্লিরা মিনা থেকে আরাফাতের দিকে রওয়ানা দিতে শুরু করেছেন। ৩০ লাখের বেশি হজযাত্রী এবার সমবেতন হবেন আরাফাতের ময়দানে। এই ময়দানে অবস্থিত মসজিদে নামিরায় হজের ইমাম খুতবা দেবেন। সেই খুতবায় থাকবে মুসলিম উম্মাহর জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা।
আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাটাই মূলত হজের প্রধান কাজ। এটা হজের অন্যতম ফরজ বা অবশ্যই পালনীয় একটি বিধান। ৯ জিলহজ সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এক মুহূর্তের জন্য হলেও সেখানে অবস্থান করতে হবে। না হলে হজ হবে না। কেউ হজের নিয়ত করার পর কোনো কারণে নির্দিষ্ট সময়ে আরাফাতের ময়দানে হাজির হতে পারল না, তাকে এই হজের কাজা আদায় করতে হবে। এজন্য যেসব হজযাত্রী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তাদেরকে সৌদি সরকারের ব্যবস্থাপনায় অ্যাম্বুলেন্সে করে আরাফাতের ময়দান ঘুরিয়ে আনা হয়। এতেই বোঝা যায় হজের এই বিধানটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
আরাফাতের ময়দানে হাজিরা নিজ তাঁবুতে জোহর ও আসরের নামাজ একসঙ্গে আদায় করেন। মাগরিবের নামাজ না পড়ে মুজদালিফার দিকে রওনা করতে হয়। মুজদালিফায় গিয়ে এশার সময়ে মাগরিব ও এশা এক আজান ও এক ইকামতে একসঙ্গে আদায় করেন। এখানেই রাত যাপন করতে হয়। ১০ জিলহজ ফজর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত শুধু বড় জামারাকে (বড় শয়তান) সাতটি কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হয়। ১১ ও ১২ জিলহজও কঙ্কর মারতে হয়। ১০ জিলহজ কোরবানি এবং ১২ জিলহজের মধ্যেই তওয়াফে জিয়ারত সম্পন্ন করতে হয়। মিনায় অবস্থান করতে হয় ১২ জিলহজ পর্যন্ত। মিনা থেকে ফেরার পরই হজের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শেষ হয়ে যায়।
আরাফাতের ময়দানের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। আরাফাত শব্দের অর্থ পরিচয়। আদি পিতা হজরত আদম (আ.) ও আদি মাতা হজরত হাওয়া (আ.) জান্নাত থেকে দুনিয়াতে এসে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর এই আরাফাতের ময়দানেই তারা পুনরায় মিলিত হয়েছিলেন। এই ময়দানেই তাদের তওবা আল্লাহ কবুল করেছিলেন। এই ময়দানেই মহানবী সা. ঐতিহাসিক বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। এই ময়দানেই রয়েছে জাবালে রহমত, যেখানে দোয়া করলে তা কবুলের নিশ্চয়তা আছে।
আরাফাতের ময়দানের তওবা আল্লাহ কবুল করেন। কেউ এই ময়দানে স্বচ্ছ অন্তরে তওবা করলে আল্লাহ তাকে নিষ্পাপ করে দেন। হাদিসে আছে, আরাফাতের দিন আল্লাহ তায়ালা সবচেয়ে নিচের আসমানে অবতরণ করেন এবং ফেরেশতাদের কাছে নিজের বান্দাদের ব্যাপারে গর্ব করে বলেন, ‘দেখ! আমার বান্দারা ধূলি ধূসরিত হয়ে চতুর্দিক থেকে আমার কাছে আসছে। আমি তোমাদের সাক্ষী রেখে বলছি, তাদের আমি ক্ষমা করে দিলাম।’
এরপর ফেরেশতারা বলেন, ‘হে পরোয়ারদিগার! অমুক ব্যক্তি যে বিলম্বে এসেছে?’
তখন আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাকেও মাফ করে দিলাম।’ (শরহে সুন্নাহ)
আরেক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আরাফাতের দিনের রোজা সম্বন্ধে আমি মনে করি, আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের এর বরকতে তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বছরের গোনাহসমূহ মাফ করে দেবেন।’ (মুসলিম)
লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম
সারাবাংলা/এসবিডিই
আরাফাতে খোদা প্রেমিকদের মহাসম্মিলন জহির উদ্দিন বাবর ধর্ম ও জীবন ফিচার