Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এসির দুর্ঘটনা ঠেকাতে যা করবেন

তামান্না সুলতানা
১২ জুলাই ২০২৩ ১৫:০৪

গ্রীষ্মের খরতাপে যেন প্রাণ অতিষ্ঠ। এই সময়ে বাইরে রোদে বের হলেই ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি তাপমাত্রা যেন ছ্যাঁকা দেয় গায়ে। সারাদিনের ক্লান্তিকর নগরযাপন শেষে রাতে আপন নীড়ে ফিরে যে একটু শান্তিতে ঘুমাবেন সেই অবস্থাও নেই। আবহাওয়াগত পরিবর্তন এবং নগরে জলাধার ও সবুজ প্রকৃতি হ্রাসের কারণে রাতেও দ্রুত বাতাস ঠাণ্ডা হয় না এখন। তাই হয়তো অনেকেই বলেন এসি এখন আর বিলাসসামগ্রী নয় বরং প্রয়োজনীয় গৃহস্থালী সামগ্রী।

বিজ্ঞাপন

প্রচণ্ড গরমে স্বস্তির এসির ব্যবহারও যে সবসময় নিরাপদ তা-ও কিন্তু নয়। হরহামেশাই শোনা যায় এসির দুর্ঘটনার কথা। এর প্রধান কারণ আমাদের দেশে এসির রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলা করা হয়। অনেকে জানেনই না, এসির রক্ষণাবেক্ষণ কীভাবে করতে হয়!

অন্য যে কোনো বৈদ্যুতিক যন্ত্রের মতো এসিরও বিশেষ যত্ন নেয়ার দরকার আছে। এসি ভালো রাখতে নিয়মিত ফিল্টার, কয়েল ও সংযোগ লাইন পরিষ্কার করা, কম্প্রেসরের কার্যক্ষমতা ও বিদ্যুতের সংযোগ যাচাই করা উচিত। তাহলে একদিকে যন্ত্রটি যেমন ভালো থাকবে, তেমনি দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে। এই বিষয়ে আমরা কথা বলেছি এয়ারকন্ডিশন প্রস্তুতকারক ও বিপণন প্রতিষ্ঠান এলজির এসি সার্ভিসিং এক্সপার্ট দুলাল দাসের সঙ্গে। জীবনযাপনের হালের প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গটির নানাবিধ দুর্ঘটনা ঠেকাতে কী করবেন সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। আরও বলেছেন সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এসি আর বিপজ্জনক মনে হবে না-

১. এসি স্থাপন ও সংযোগ দেওয়ার সময়ে অনেক ভুল হয়। এছাড়া অতিরিক্ত তাপ, ময়লা ও দূষণ, পরিচ্ছন্নতা ও রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলা, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট এবং আশপাশে দাহ্য পদার্থের উপস্থিতি— এগুলোর কারণে এসি দুর্ঘটনা ঘটে। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে এসির যত্ন নেওয়া ও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি কক্ষে যাতে কোনো দাহ্য পদার্থ না থাকে, তা নিশ্চিতে জোর দিতে হবে।

২. নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান থেকে এসি কিনতে হবে। অনেকসময় পুরানো বা নিম্নমানের এসি বিভিন্ন ব্রান্ডের নামে বিক্রি করা হয়। ভালো ব্র্যান্ডের এসি না হলে কম্প্রেসরসহ অন্যান্য যন্ত্র ঠিকভাবে কাজ করে না। এ ধরণের এসির ব্যবহার দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। তাই নিম্নমানের বা নকল ব্র্যান্ডের এসি ও কম্প্রেসার কেনা এবং ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।

বিজ্ঞাপন

৩. এসি কেনার আগেই রুমের আকার অনুযায়ী সঠিক ক্ষমতার এসি নির্ধারণ করতে হবে। বাংলাদেশে অনেকক্ষেত্রেই ঘরের আকৃতি অনুযায়ী এসির ক্ষমতা নির্ধারিত হয় না। এটি এসির উপর চাপ বাড়ায়, যা দূর্ঘটনার কারণ হয়।

৪. এসি স্থাপনের সময় ঠিকভাবে সংযোগ দেওয়া না গেলে কিংবা পাইপের কোথাও ছিদ্র হলে তাতে কম্প্রেসরে চাপ বাড়ে। এতে কক্ষ যেমন প্রয়োজন অনুসারে ঠান্ডা হয় না, তেমনি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও থাকে।

৫. আমাদের দেশের অনেক এয়ারকন্ডিশনেরই পাওয়ার ক্যাবল সঠিক মানের হয় না। কিন্তু এই পাওয়ার কেবল এসিকে ভালো রাখা ও সঠিকভাবে চালানোর পূর্বশর্ত। তাই এসি ভালো রাখতে ভালো মানের এবং সঠিক স্পেকের পাওয়ার ক্যাবল ব্যবহার করতে হবে।

৬. বৈদ্যুতিক তারের শর্টসার্কিটের কারণেও এসি দুর্ঘটনা ঘটে। এই হারও কিন্তু কম নয়। বৈদ্যুতিক তারের সংযোগ ঠিকভাবে না লাগানো হলে এসি অতিরিক্ত গরম হয়ে আগুন ধরে যেতে পারে। তাই স্থাপনের আগে বৈদ্যুতিক সংযোগ এসির জন্য উপযোগী কি না, সেটি পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।

৭. অনেকসময় এসির আউটডোর মেশিন বদ্ধ স্থানে বসানো হয় যেখানে সঠিকভাবে বাতাস চলাচল করতে পারে না। এতে এসির সঠিক বাতাসপ্রবাহ ব্যহত হয়। এসির আউটডোর এমন স্থানে বসাতে হবে যেন পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করতে পারে।

৮. আমাদের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার একটি প্রধানতম সমস্যা হঠাৎ হাই ভোল্টেজ। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এই সমস্যা প্রকট। হাই ভোল্টেজ এড়াতে বাড়িতে সঠিক রেটিংয়ের সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করতে হবে।

৯. প্রচণ্ড গরমে অনেকেই এসি চালিয়ে বন্ধ করতে ভুলে যান। বাড়তি তাপমাত্রায় এসির কার্যক্ষমতা না বুঝে দীর্ঘ সময় ব্যবহার করা ঠিক নয়। একনাগাড়ে আট ঘণ্টার বেশি এসি না চালিয়ে মাঝে মাঝে বিরতি দিতে হবে। নয়তো দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়বে।

১০. বৃষ্টি ও বজ্রপাতের সময় এসির ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে। এছাড়া বৈদ্যুতিন যন্ত্রের সুরক্ষায় বাড়ির ছাদে বজ্র নিরোধক ব্যবস্থা রাখতে হবে।

১১. এসির বৈদ্যুতিক সংযোগ, সকেট, ফিল্টার নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করা উচিত। তাহলে বিভিন্ন সমস্যা আগেই বুঝে সমাধান করা যায়। বিশেষ করে এসি ফিল্টার নিয়মিত পরিবর্তন কিংবা পরিষ্কার করতে হবে। বদ্ধ ও ময়লা হয়ে যাওয়া ফিল্টার স্বাভাবিক বায়ুপ্রবাহ ব্যাহত করে এবং এসির কার্যকারিতা ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিয়ে দুর্ঘটনার কারণ হয়ে ওঠতে পারে।

১২. বছরে অন্তত একবার পেশাদার সার্ভিস টেকনিশিয়ানের সাহায্যে এসির সার্ভিসিং করানো উচিত। বিশেষ করে শীতের সময় দীর্ঘ কয়েকমাস বন্ধ থাকার পরে গরমের আগে আবার চালু করার আগে অবশ্যই সার্ভিসিং করে নেয়া উচিত। এছাড়া যখন এয়ারকন্ডিশন মেশিন দীর্ঘ কয়েকমাস বন্ধ থাকে সেই সময়ে এটি ঢেকে রাখতে হবে। শীতে ধুলাবালি পড়ে এসি নষ্ট হয়।

১৩. সার্ভিসিং এর সময়ে অবশ্যই কম্প্রেসারে প্রয়োজনীয় রেফ্রিজারেন্ট আছে কি না, তা অভিজ্ঞ ও বিশ্বস্ত কোম্পানির টেকনিশিয়ান দিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। কম্প্রেসারে সঠিক পদ্ধতিতে রেফ্রিজারেন্ট চার্জ করাও খুবই প্রয়োজনীয়।

১৪. এসির ইভাপোরেটর ও কনডেনসার কয়েল প্রতি বছর পরীক্ষা ও পরিষ্কার করা উচিত। এসির কনডেনসারে ময়লা থাকলে কম্প্রেসারে হাই টেম্পারেচার ও হাই প্রেশার তৈরি হয়। এছাড়া কম্প্রেসারে নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি রেফ্রিজারেন্ট চার্জ করলে হাই প্রেশার তৈরি হয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

১৫. ইভাপোরেটর ও কনডেনসার কয়েলে থাকা অ্যালুমিনাম ফিন বা পাখাগুলো খুব সহজেই বেঁকে গিয়ে বায়ুপ্রবাহ আটকে দিতে পারে। এসির পাইকারি বিক্রেতারা ‘ফিন কম্ব’ নামের একটি যন্ত্র বিক্রয় করেন, যেটি পাখনাগুলোকে পরিষ্কার করে প্রায় অরিজিনাল অবস্থা এনে দিতে সক্ষম।

১৬. মাঝে মধ্যে কোনো শক্ত তার দিয়ে এসির ড্রেন চ্যানেল পরিষ্কার করতে হবে। এসির ভেতরের পাইপের কোথাও ব্লকেজ হলে এসির ভেতরে হাই প্রেশার তৈরি হয়ে কম্প্রেসার ব্রাস্ট হতে পারে।

১৭. এসি ও উইন্ডো ফ্রেমের মধ্যকার সিলটি খেয়ালে রাখতে হবে, যেন প্রতিটি কুলিং সেশনের শুরুতে এটি ইউনিটের মেটাল কেসের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। এই কাজগুলো কোনো দক্ষ টেকনিশিয়ান দিয়ে করানোই ভালো।

সারাবাংলা/এসবিডিই

এসির দুর্ঘটনা ঠেকাতে যা করবেন তামান্না সুলতানা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর