Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিলুপ্তপ্রায় পাখি আর প্রাণী রক্ষার উদ্যোগ

প্রান্ত রনি
৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৭:১২

পার্বত্য চট্টগ্রাম তো বটে; সারাদেশেই এমন আয়োজন খুব কমই ঘটে। যেখানে বড় বড় ইমারত, অবকাঠামো আর বন ধ্বংসের এত আয়োজন সেখানে এসব আয়োজন খুবই কম। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন পাহাড়ি জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি আর বান্দরবানের পাখি, বন্যপ্রাণি আর জীববৈচিত্র্যের নান্দনিকতা ও জুম পাহাড়ের বৈচিত্র্য যেন ওঠে এসেছে ছবি প্রদর্শনীর এই আয়োজনে।

‘সেভ দ্য বায়োডাইভার্সিটি অব হিল ট্রাক্টস’ শীর্ষক এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীর ৫ দিনের আয়োজন চলছে পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়ি শহরেই। সেখানকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে শনিবার (৪ নভেম্বর) সকাল থেকে শুরু হওয়া এই আয়োজন চলবে আগামী ৮ নভেম্বর বুধবার বিকেল পর্যন্ত।

বিজ্ঞাপন

খাগড়াছড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের আয়োজনে পাহাড়ের দুই প্রতিভাবান আলোকচিত্রী সবুজ চাকমা ও সমির মল্লিকের ৫১টি ছবি স্থান পেয়েছে প্রদর্শনী স্টলে। তবে স্টলে স্থান পাওয়া ছবির বেশির ভাগই বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় পাখি। এছাড়াও স্থান পেয়েছে বন্যপ্রাণি, প্রাণ-প্রকৃতির ছবি। সব মিলিয়ে পাহাড়ের জীববৈচিত্র্য আর প্রকৃতির নিদর্শন তুলে ধরা হয়েছে এই আয়োজনে। বাংলাদেশের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের ঘন বনগুলো এখনো জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে সমৃদ্ধ। পরিবেশ রক্ষায় পাহাড় থেকে এমন উদ্যোগ সচেতনতার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে দেশজুড়েই।

সকাল থেকেই এই আয়োজন মুগ্ধ হয়ে দেখছেন শিশু-কিশোর থেকে সকল বয়সী মানুষেরা। স্কুল পড়ুয়া শিশু কিশোরের আগ্রহ দেখা গিয়েছে সবচেয়ে বেশি। তারা এসব ছবি দেখছেন, ছবির সম্পর্কে জানছেন অধীর আগ্রহে। তরুণ প্রজন্মকে প্রকৃতি পরিবেশ সম্পর্কে জানাতে এই আয়োজন যেন পূর্ণতায় রূপ পেয়েছে।

বিজ্ঞাপন

পাখির ছবির মধ্যে রয়েছে নীল শিষ দামা (blue whistling thurush), শামুক খোল (asian apenbill), কালি পেঁচা (short eared owl), লালঘাড় পেঙ্গা (Rufous Necked Leaghing thurush), কালো মাথা বুলবুল (black headed bulbul), পাতি মাছরাঙা (Common kingfisher), মদনা টিয়া (Red breasted), বন কোকিল (Green malkoha), খয়েরি ডানা পাপিয়া (chestnut winged cuckoo), এশীয় তেল শালিক (Asian Glossy starling), ধবল চোখ (white eye), নীল গলা বসন্তবাউরি (blue throated barbet), পাকড়া ঝাড়ফিদ্দা (Pied bush chat), বেগুনি মৌটুসি (Purple Sunbird), মালয়ান নিশি বক (Malayan night heron), ধলা গলা বুলবুল (white throated bulbul), মেটেপা ঝিল্লি (Slaty legged crake), সবুজ সুইচোরা (Green bee eater), মেটেবুক প্রিনা (Grey breasted prinia), ধনেশ (pied hornbill), আবাবিল, মেঘহও মাছরাঙা (Stork billed kingfisher), বেগুনি মৌটুসী (purple sunbird), নীলকন্ঠ (Indian Roller), কালোঝুটি বুলবুল (black crested bulbul), সিঁদুরে সাহেলি (Searlet minivet), লালবক (Cinnamon bittern),পাহাড়ি ময়না (hill mayna), খুঁড়ুলে পেঁচা (Spotted owl), সবুজ ঘুঘু (Common emerald dove), সিঁদুরে মৌটুসি (Crismon sunbird), পানকৌড়ি (Common Cor Orant), খয়রা মাথা শুমচা (Hooded pitta)।

প্রাণির মধ্যে রয়েছে কাঠবিড়ালি, লাল উড়ন্ত কাঠবিড়ালি বা ছলক (Red Giant Flying squirrel), বন মুরগী (Red Jungleflow) এবং এশিয়ান হাতি। প্রাণ-প্রকৃতিতে ঠাই পেয়েছে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ, পিঠাছড়া বন, খাগড়াছড়ি শহর, আলুটিলা, মাইনী নদী, রাঙামাটির ঠেগামুখ, কাট্টলি বিল, পাবলাখালী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, বান্দরবানের নীলগিরি, চিম্বুক পাহাড়। জুম ঘর, জুম পাহাড়ের সকালের দৃশ্য আর অনন্তলতার ছবি।

এইসব ছবি যে দুইজন আলোকচিত্রী তুলেছেন; তারা মনে করেন, প্রকৃতি বাঁচলে মানুষ বাঁচবে। পাখি, বন্যপ্রাণী প্রাণ ও প্রকৃতির অন্যতম উপাদান। বনভূমি পরিমান কমে আসার কারণে পাখির আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক পাখি অনেক আর দেখা যায় না। এক সময় পাহাড়ের ধনেশ পাখির বিচরণ থাকলেও তা এখন প্রায় বিপন্ন। হাতিসহ অনেক বন্যপ্রাণী বিলুপ্তির পথে। এই ধরণের প্রদর্শনী মানুষের মাঝে পাখি ও বন্যপ্রাণীর রক্ষায় সচেতনতা বাড়াবে বলে মনে করেন তারা।

আলোকচিত্রীদের এই ভাবনাই প্রকৃত সত্য। মানুষ অসচেতনতার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠছে প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে। পরিবেশ-প্রকৃতিকে দিনে দিনে করে তুলছে বিপন্ন। বন, পাহাড়, পাখি আর বন্যপ্রাণী রক্ষায় এই ধরণের উদ্যোগ অনুকরণীয় হয়ে থাকুক।

ছবি: লেখক

সারাবাংলা/এসবিডিই

প্রান্ত রনি বিলুপ্তপ্রায় পাখি আর প্রাণী রক্ষার উদ্যোগ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর