Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাঙালির স্বকীয় সংস্কৃতির ধারা গড়ার মূল কারিগর শেখ মুজিব

ফিচার ডেস্ক
৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৪:০৪

বাংলা, বাঙালি ও বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে যার জীবন, সংগ্রাম ও রাজনীতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত তিনি হলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। রাজনীতির ক্ষেত্রে বাঙালি সংস্কৃতি ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ তাকে এতটাই আচ্ছন্ন করেছিল যে, তিনি স্বাধীনতার অনেক আগে ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর স্মরণসভায় প্রকাশ্যে বলেন, ‘এই পূর্ব বাংলা ভূখণ্ডের নাম হবে বাংলাদেশ।’

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বিদেশি সাংবাদিক সিরিল ডানের একটি মন্তব্য হলো, ‘বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে শেখ মুজিবই একমাত্র নেতা যিনি রক্তে, বর্ণে, ভাষায়, কৃষ্টিতে এবং জন্মসূত্রেও ছিলেন খাঁটি বাঙালি। তার দীর্ঘ শালপ্রাংশু দেহ, বজ্রকণ্ঠ, মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ করার বাগ্মিতা এবং জনগণকে নেতৃত্বদানের আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব ও সাহস তাকে এই যুগের এক বিরল মহানায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।’

কিন্তু রাজনীতির বাইরেও শিল্প এবং সংস্কৃতি নিয়ে বিস্তর সময় কাটিয়েছেন তিনি। বলা যায়, জনমানুষের সংস্কৃতির মধ্যেই প্রতিনিয়ত নিজের রাজনৈতিক বিকাশ ঘটিয়েছেন শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু নজরুল গীতি, রবীন্দ্রসংগীত, পল্লী গীতি ও ভাটিয়ালি গান খুব ভালোবাসতেন। বাংলার প্রখ্যাত শিল্পীদের গানের অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেলে তিনি তাতে অংশগ্রহণ করতেন। গান শুনতেন ও শিল্পীদের উৎসাহ দিতেন।

তৎকালীন ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমার নবীনগর থানার কৃষ্ণনগর হাইস্কুলের একটি অনুষ্ঠানে বিখ্যাত গায়ক আব্বাসউদ্দিন আহমদ, সোহরাব হোসেন ও বেদারউদ্দিন আহম্মদের গান পরিবেশনের আয়োজন ছিল। ওই অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকেও নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল। তিন কণ্ঠশিল্পী আব্বাসউদ্দিন, সোহরাব হোসেন ও বেদারউদ্দিন আহমদ অনেক রাত পর্যন্ত গান গাইলেন। পরদিন নৌকায় শিল্পীদের সঙ্গে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলেন বঙ্গবন্ধু। পথেও গান শুনলেন। এ বিষয়ে পরে বঙ্গবন্ধুর লিখেছেন, ‘নদীতে বসে আব্বাসউদ্দিন সাহেবের ভাটিয়ালি গান তার নিজের গলায় না শুনলে জীবনের একটা দিক অপূর্ণ থেকে যেত। তিনি যখন ধীরে ধীরে গান গাইছিলেন, তখন মনে হচ্ছিল নদীর ঢেউগুলো যেন তার গান শুনছে।’

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধু শিল্পী আব্বাসউদ্দিনের ভক্ত হয়ে পড়েছিলেন। কণ্ঠশিল্পী আব্বাসউদ্দিন আহমদ বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, ‘মুজিব বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে বিরাট ষড়যন্ত্র চলছে। বাংলা রাষ্ট্রভাষা না হলে বাংলার কৃষ্টি, সভ্যতা সব শেষ হয়ে যাবে। আজ যে গান তুমি ভালোবাসো; এর মাধুর্য ও মর্যাদা নষ্ট হয়ে যাবে। যা কিছু হোক বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে হবে।’ বঙ্গবন্ধু কথা দিয়েছিলেন এবং সেই কথা রক্ষাও করেছিলেন। পাকিস্তানের কারাগারে তার ফাঁসির হুকুম হলে তিনি উচ্চারণ করেন, ‘ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলব-আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা। জয় বাংলা।’

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান স্বাধীনতাযুদ্ধে আমাদের অশেষ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। বঙ্গবন্ধু তাই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালাবাসি’ গানটিকে জাতীয় সংগীত এবং বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘চল চল চল ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল’ গানটিকে রণসংগীতের মর্যাদা প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধু বাংলা ভাষার বিখ্যাত কবি-শিল্পীদের প্রতি যে সম্মান প্রদর্শন করেছেন তা অতুলনীয়। শুধু তাই নয়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবিকে ভারত থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন এবং তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

একুশের বইমেলা উপলক্ষে ১৯৭৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমি যে জাতীয় সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করে, তা উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেসময় তিনি বলেন, ‘সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা ছাড়া রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন। তাই মাটি ও মানুষকে কেন্দ্র করে গণমানুষের সুখ, শান্তি ও স্বপ্ন এবং আশা-আকাঙ্ক্ষাকে অবলম্বন করে গড়ে উঠবে বাংলার নিজস্ব সাহিত্য-সংস্কৃতি।’ দেশের সাধারণ মানুষ, যারা আজও দুঃখী, যারা আজও নিরন্তর সংগ্রাম করে বেঁচে আছে, তাদের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখকে, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির উপজীব্য করার জন্য বঙ্গবন্ধু শিল্পী, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিসেবীদের প্রতি আহ্বান জানান।

এর আগে, বঙ্গবন্ধুর সাংস্কৃতিক মানস অত্যন্ত সুদৃঢ় ও উন্নত ছিল বলেই ১৯৫৬ সালে তার অল্প সময়ের মন্ত্রিত্বকালে তিনি ঢাকায় চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করেন। তার এই সিদ্ধান্ত এতোটাই দূরদর্শী ছিল যে, এই প্রতিষ্ঠানটি পরবর্তীতে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে, এটি এখন বিএফডিসি নামে পরিচিত। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের নাটক মঞ্চায়নে বাধা অপসারণের জন্য তিনি বিনোদন কর সম্পর্কিত জটিলতা দূর করেন। মুক্তিযুদ্ধের আগের উত্তাল দিনগুলোতে যখন সত্তরের দশকে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে স্বৈরাচার আইয়ুব খান রবীন্দ্রসংগীত চর্চাকে নিষিদ্ধ করেছিল, তখন বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে রবীন্দ্রসংগীত চর্চার পক্ষে জোরালো অবস্থান ব্যক্ত করেন।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে বাংলা কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক ও চলচ্চিত্রে গণমানুষের জীবন, সংগ্রাম ও দ্রোহ নিয়ে যে নতুনধারার সৃষ্টি হয়; তার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেন বঙ্গবন্ধু। বাঙালির আত্মপরিচয়ের, স্বাধীনতা সংগ্রাম, দৃঢ়প্রত্যয়, যুদ্ধজয় এবং স্বকীয় সংস্কৃতির ধারা গড়ার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমান। তাই তরুণ প্রজন্মের কবিদের কণ্ঠেও ধ্বনিত হচ্ছে,‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, এই নামটিতে একটি বাংলাদেশ বহমান’।

সারাবাংলা/এসবিডিই

ইতিহাস ফিচার বাঙালির স্বকীয় সংস্কৃতির ধারা গড়ার মূল কারিগর শেখ মুজিব

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর