Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকায় আরবান গেরিলাদের শেষ অপারেশন

রহমান রা’আদ
১১ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৭:৩২

মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসের প্রায় বেশিরভাগ সময় জুড়েই অধিকৃত ঢাকায় পাকিস্তানী সেনারা আরবান গেরিলাদের মুহুর্মুহু আচমকা হামলায় রীতিমত বিপর্যস্ত ছিল। বিশেষ করে জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ৭ মাসে ঢাকায় পাকিস্তানীদের মনোবল রীতিমত ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ক্র্যাক প্লাটুনের দুর্ধষ মুক্তিসেনারা। ডিসেম্বরে বিজয়ের আগে ঢাকায় সর্বশেষ যে হামলাটি চালিয়েছিল আরবান গেরিলারা, সেটি ঢাকার সীমানা পেরিয়ে কাঁপিয়ে দিয়েছিল সুদূর মার্কিন মুল্লুক। ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর ঢাকায় আমেরিকান কালচারাল সেন্টার বা ইউসিস সেন্টারে হামলা চালিয়ে তৎকালীন বিশ্বমোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাকিস্তানী খুনী জেনোসাইডারদের নির্লজ্জ পক্ষাবলম্বনের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছিল চার অকুতোভয় গেরিলা।

বিজ্ঞাপন

এই হামলার মাত্রই দিন কয়েক আগে আমেরিকানরা পাকিস্তানের সমর্থনে সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল বঙ্গোপসাগরে। তার কদিনের মধ্যেই এরকম হামলায় স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল মার্কিন সরকার। বর্তমান জাতীয় প্রেসক্লাবের ঠিক অপজিটের কর্ণারে ছিল ইউসিস বিল্ডিং। বর্তমানে যেখানে সচিবালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (তখন সম্ভবত জেলা প্রশাসকের অফিস ছিল) সেখানে আর্মি ক্যাম্প ছিল। দুই বিল্ডিংয়ের ওপরে সার্বক্ষণিক মেশিনগান নিয়ে পাহারা দিত পাকিস্তান আর্মিরা। সুতরাং ওইস্থানে এমন টাইট সিকিউরিটির মধ্যে হামলা চালানো ছিল রীতিমত দুঃসাহসিক। এর আগেও এই বিল্ডিং-এর সামনে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের পাকিস্তান সরকারের প্রতি সমর্থনের প্রতিবাদে কুশপুত্তলিকা দাহ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে, কিন্তু সেই স্থাপনার সরাসরি হামলা চালিয়ে হানাদারদের দখলে থাকা ঢাকা তথা বাংলাদেশের জনগণ যেন আরেকবার প্রবল রুদ্ররোষে জানিয়ে দিল, সেদিনের গেরিলা আক্রমণটি পুরো পৃথিবীর কাছে সেই বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল, “বাংলা ও বাংলার মানুষকে আর দাবায়ে রাখা যাবেনা”।

বিজ্ঞাপন

অপারেশনের সুদূরপ্রসারী ধাক্কায় মাত্র তিন ঘন্টার মাথায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ঢাকাজুড়ে কারফিউ জারী করে। সাড়াজাগানো এই অপারেশন যে চারজন মুক্তিযোদ্ধা চালিয়েছিলেন তারা হচ্ছেন, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন (বাবুল),আবু ফজল মোহাম্মদ মানু, ফুলু ও স্থপতি জিয়াউদ্দিন। অপারেশনের আগে রেকির কাজ সম্পন্ন করেন বাবুল, পর পর দুইবার রেকি করেন তিনি। ৯ ডিসেম্বর তিনি বিস্ফোরক, ২টা স্টেনগান ও ৮টা স্টেনগানের ম্যাগাজিনসহ ঢাকায় প্রবেশ করেন। তার উপর নির্দেশ ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় ( বর্তমান বুয়েট)-এর আহসানউল্লাহ হলে একটা নির্দিষ্ট রুমে উপস্থিত হতে হবে। সেটি ছিল ক্র্যাক প্লাটুনের আরেক দুর্ধষ যোদ্ধা শহীদ গেরিলা বদিউল আলমের রুম। সেখানেই তার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন গেরিলা ফুলু ও মানু। ঢাকা থেকে পালিয়ে মেলাঘরে গিয়ে পুর্ণাঙ্গ গেরিলা ট্রেনিং নিয়েছিলেন তারা। আর বাকি দুজন মোবাশ্বের ও জিয়াউদ্দিন স্থপতি, দেশের অভ্যন্তরে অস্ত্র ও বিস্ফোরক প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।

স্থপতি জিয়াউদ্দিনের ভক্সওয়াগন বিটলের গাড়িটি এর আগেও অংশ নিয়েছেন শ্বাসরুদ্ধকর সব অপারেশনে, আমেরিকান কালচারাল সেন্টারে হামলার জন্যও মোবাশ্বের জিয়ার গাড়িকে বেছে নেন। মোবাশ্বের দুইবার রেকি করেন ইউসিস সেন্টার। প্রথমবার যখন রেকি করতে ক্যাম্প থেকে ঢাকায় আসেন তখন তার উদ্দেশ্য ছিল সেক্রেটারীয়েট, পাবলিক সার্ভিস কমিশন ভবন ও এর আশেপাশের মিলিটারী চেকপোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করা। ইউসিস ভবনে গিয়ে এক মহিলা কর্মকর্তার সাথে উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় যাবার উপায় নিয়েও আলাপ করেন। আলাপের অজুহাতে দেখে আসেন ভেতরটা। দ্বিতীয়বারের রেকিতে মোবাশ্বের গেরিলারা বিস্ফোরক নিয়ে কোনপথে প্রবেশ করবেন, অপারেশনের পর কোন পথে পালিয়ে যাবেন, কোথায় চার্জ ফিট করা হবে, গেরিলাদের গাড়িটা কোথায় অপেক্ষা করবে, কিভাবে লোকজন যথাসম্ভব কম হতাহত হবে, আমেরিকান এই সংস্থার কর্মচারী ও অন্যান্য বহিরাগতরা কিভাবে কোন পথে পালিয়ে যেতে পারবে ইত্যাদি সবকিছুই হিসেবনিকেশ করে আসেন।

প্ল্যান অনুযায়ী এগোলে পাঠাগারের বেশ কয়েকজন আহত নিহত হবেন দেখা গেল। যা কোনভাবেই চাচ্ছিলেন না মোবাশ্বের কিংবা অন্যান্য গেরিলারা। এ ব্যাপারে গেরিলা একাত্তরকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মোবাশ্বের জানিয়েছিলেন,

“গেরিলা অপারেশনের আগে আমরা এ জায়গাটা রেকি করলাম। আমাদের হিসেবে এই বিল্ডিং ব্লো-আপ করলে ন্যূনতম ১০ থেকে ১২ জন লোক মারা যাবে। কোনো বিকল্প নেই। আমি কিছুতেই এত মানুষের মৃত্যু মানতে পারছিলাম না। সিদ্ধান্ত হল, আমরা একটাও নিরীহ মানুষকে মরতে দেব না। কীভাবে? আগে ইউসিস বিল্ডিং থেকে সব লোককে বের করে দিয়েই করব আমাদের অপারেশন। আমাদের সঙ্গে ছিল মেলাঘর থেকে ট্রেনিং নেয়া হাইলি কোয়ালিফায়েড মানু। ওর বক্তব্য ছিল লোক বের করতে গেলে তো আমাদেরকেই মরতে হবে পাকিস্তানি মিলিটারীর গুলিতে। সিদ্ধান্ত হল -উই উইল টেক দ্য রিস্ক। সাধারন মানুষগুলোকে রক্ষায় অনেকটা আত্মাহুতি দেবার মতো চিন্তাভাবনা।”

কর্মচারী ও অন্যান্যদের পাঠাগারের পেছন দিয়ে ‘ফায়ার এক্সিট’ দিয়ে বের করে দেয়া হবে এবং গেরিলারা মূল দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে ও বেরিয়ে যাবে। ঢাকায় ফিরে যাবার দিন মোবাশ্বের একটা বড় ব্রিফকেস কিনে নিয়ে যান। সেদিন রাতেই ক্যাম্পে পৌঁছে ওই ব্রিফকেসের মধ্যে সাজানো হলো বিস্ফোরক দ্রব্যাদি। ২৫ পাউন্ড পি-কে, ১টা ডেটোনেটর-২৭ এবং দেড় মিনিটের ফিউজ ওয়্যার। ব্রিফকেসের দুই পাশ ফুটো করে হাতলের পাশ দিয়ে বের করে রাখা হলো ওয়্যারের মাথা।

অপারেশনের দিন শুরুতেই জিয়াউদ্দিনের গাড়ির নম্বরপ্লেট বদলানো হলো। সেই গল্প মোবাশ্বের তার সাক্ষাৎকারে তুলে ধরেছেন এভাবেঃ

“জিয়ার গাড়ির নাম্বার প্লেট বদলাতে হবে। বদলাব কোথায়? সেই সময় ঢাকা শহর ঘুরে ঘুরে দেখেছি নিরাপত্তা বিবেচনায় সবাইতে দুর্বল জায়গা হচ্ছে থানার আশপাশে। থানার পাশে পুলিশ সবচাইতে কেয়ারলেস ছিল। বর্তমানে রমনা থানার যে পাশ দিয়ে রাস্তাটা যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বাড়ির দিকে গেছে, সেটি তখন ছিল দু পাশে জন্গলে ভরা নিরিবিলি সরু একটি রাস্তা।থানার প্রবেশ পথটি ছিল বর্তমান প্রধান সড়ক থেকে। থানার ওপাশের সরু পথের পাশে ভক্সওয়াগন গাড়িটা দাঁড় করিয়ে আমরা নম্বর প্লেট বদলালাম। ওখানে থানার পাশেই আমরা প্লাস্টিক এক্সপ্লোসিভ ভরা ব্রিফকেস ও আর্মসগুলো ভাগ করে নিলাম। মানুষ দেখছে আমরা গাড়ি ঠিক করছি। সারা ঢাকা ঘুরে আমার কেন জানি মনে হয়েছিল এ জায়গাগুলোই হচ্ছে সবচাইতে নিরাপদ। এখানে কেউ সন্দেহ করবে না। অপারেশন শেষে একই পদ্ধতিতে ওই জায়গায় এসেই আমরা গাড়ীর সঠিক নাম্বার লাগিয়ে অস্ত্রগুলো একত্রিত করে নিরাপদ স্থানে রেখেছিলাম। আমাদের গায়ের কোট পরিবর্তন করেছি ওখানেই”

সকাল নয়টার দিকে ভক্সওয়াগনটি ইউসিস বিল্ডিং-এর সামনে এসে থামলো। মোবাশ্বের ব্রিফকেস নিয়ে গাড়ি থেকে পাঠাগারের মূল দরজা অর্থাৎ তোপখানা রোডের পাশের দরজা দিকে এগিয়ে গেলেন। মানু ও ফুলুর হাতে স্টেনগান, তারা দুজন দুইপাশের দুই জানালার ধারে পজিশন নিয়ে বসেছেন, স্টেন এমনভাবে ধরা যেন বাইরে থেকে কেউ দেখলে সহজে না বোঝে।

অন্যদিকে সামনের সিটে বসা মোবাশ্বেরের হাতে ব্রিফকেস। প্রত্যেকের পরনেই ফিটফাট পোশাক। তার পেছন পেছন স্টেনগান ভাঁজ করে কোটের ভেতর লুকিয়ে নিয়ে একেবারেই জেন্টেলম্যানের ভঙ্গিতে এগিয়ে গেলেন মানু। মোবাশ্বের পাঠাগারের ভেতর ঢুকে যাবার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মানুও ঢুকে পড়লেন এবং দরজা আটকে তার উপর পিঠ ঠেকিয়ে স্টেনগান উঁচিয়ে বললেন, কেউ নড়বেন না। হাত তুলুন। ডোন্ট মুভ। এভ্রিবডি হ্যান্ডস আপ!

সেদিন সকালে কিভাবে গেরিলারা ইউসিসে পৌঁছালেন এবং অপারেশন শুরু হলো, সেই বর্ণনা শুনি মোবাশ্বের হোসেনের কাছেঃ

“সকাল প্রায় ৯টায় আমরা পৌছে গেছি ইউসিস বিল্ডিং। যাতে ইউসিস খোলার সঙ্গে সঙ্গে কাজটা শেষ করা যায়।এত সকালে ওখানে লোকজন কম থাকবে, ক্ষয় ক্ষতির সম্ভাবনাও যাবে অনেক কমে। ঐ সকালেও যেয়ে দেখি ওখানে ১৫-২০ জন লোক, তারা পড়াশোনা করছে। আমরা দুজন কোট পরে ঢুকেছি। স্টেনগান কোটের ভেতরে। ঢুকেই সবাইকে হাত তুলতে বলেছি। স্টেনগান দেখার সঙ্গে সঙ্গে ভয়ে সবাই হাত তুলেছে। একজন আর হাত তোলে না। তাকে গালি দিয়ে বের করা হলো। পরে জানতে পারলাম সে বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের ছাত্র ‘শাদানী’ (পরবর্তীতে বিদেশে দুর্ঘটনায় মারা যায়), আমাকে চিনে ফেলেছে। আমাকে দেখে সে ভয় পেয়ে ভেবেছিল, যদি আমি তাকে চিনতে পারি, তবে হয়তো তাকে আমি অন দ্য স্পট গুলি করে মেরে ফেলব। এই ভয়েই সে হাত তুলছিল না।”

অপারেশন নিয়ে সাক্ষাৎকারে এরপরের ঘটনাপ্রবাহের বর্ণনা দিয়েছেন মোবাশ্বের হোসেন এভাবেঃ

“ঐ সকালেও যেয়ে দেখি ওখানে ১৫-২০ জন লোক, তারা পড়াশোনা করছে। আমরা দুজন কোট পরে ঢুকেছি। স্টেনগান কোটের ভেতরে। ঢুকেই সবাইকে হাত তুলতে বলেছি। স্টেনগান দেখার সঙ্গে সঙ্গে ভয়ে সবাই হাত তুলেছে। একজন আর হাত তোলে না। তাকে গালি দিয়ে বের করা হলো। পরে জানতে পারলাম সে বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের ছাত্র সামদানী (পরবর্তীতে বিদেশে দুর্ঘটনায় মারা যায়), আমাকে চিনে ফেলেছে। আমাকে দেখে সে ভয় পেয়ে ভেবেছিল, যদি আমি তাকে চিনতে পারি, তবে হয়তো তাকে আমি অন দ্য স্পট গুলি করে মেরে ফেলব। এই ভয়েই সে হাত তুলছিল না।
সবাইকে নির্দেশ দেয়া হল, ডানে বায়ে কেউ তাকাবেন না। ঝড়ের বেগে দৌড়াতে দৌড়াতে চলে যাবেন। চলে যাবার পর ডেটোনেট কর্ডে দিয়াশলাইয়ের আগুন দেয়া হলো। কিছুক্ষণ পর দেখি ডেটোনেটর কর্ডের আগুন দৃশ্যমান হচ্ছে না। আমাদের শেখানো হয়েছে একবার ডেটোনেট করার পরে দ্বিতীয়বার নেভার ট্রাই।সুপ্ত আগুনে বার্স্ট হয়ে যেতে পারে। আমার মাথায় তখন এসব ভয়ডর নেই। অপারেশন সাকসেসফুল হওয়াটাই ছিল তখন একমাত্র চিন্তা।দ্বিতীয়বার আগুন দেবার পর দুজনে বের হয়ে এসেছি। বাইরে স্টার্ট করা গাড়িতে অস্ত্র সহ বসা মুক্তিযাদ্ধা ফুলু।

ইউসিসের অডিটরিয়ামে ঢোকার পথে রিসিপশনিস্টের মহিলার সঙ্গে গল্প করছে বন্ধু জিয়া। অসম্ভব সাহসী ছিল জিয়া। যে কোনো উত্তেজনাকর মুহূর্তে স্বাভাবিক থাকতে পারার অসাধারণ গুণ ছিল তার।মানু ছিল সব সময় আমার পাশে পাশে। আমরা সবাই যেয়ে গাড়িতে উঠলাম। উঠার সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরণ হলো। আমি এত টেনশনে ছিলাম যে, ওই শব্দও শুনতেই পাইনি। শুধু দেখলাম দরজা-জানালার কাচ চারদিকে উড়ে যেতে, অসংখ্য মানুষ জ্ঞান শূন্য হয়ে দৌড়াচ্ছে চারদিকে।ওই বিল্ডিংয়ের পাশে সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিংয় ও পাশের ভবনে ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এই বিল্ডিংয়ে ছিল অডিটোরিয়াম,লাইব্রেরী সহ আমেরিকান অফিস।

অপারেশন করার পর আমরা ওখান থেকে চলে গেলাম সেই রমনা থানার পাশের রাস্তায়। অস্ত্র গোলাবারুদ একত্রিত করে নিরাপদ স্থানে রাখার ব্যবস্থা করা হলো। এরপর আমার গোপীবাগের ৫৩, রামকৃষ্ণ মিশন রোডের বাসায় চলে এলাম। বাসায় এসে আমার ছোট্ট সন্তানটিকে কোলে নিয়ে স্বাভাবিক ভাবে রাস্তায় ঘুরে বেড়ালাম। আমাদের বাসার একটা অংশে ছিল সরকারি অফিস।

সেক্রেটারিয়েট এলাকায় দিনের বেলায় এই ঘটনা ঘটার পরিপেক্ষিতে ভীতিজনক এলাকার বাসাবড়ী ছেড়ে সরকারি অফিসের বেশ কিছু বড় কর্তা পরিবার পরিজন সহ নিরাপদ মনে করে আশ্রয় নেয় এই সরকারি অফিসে।পাশের বাড়ির এক অবাঙালি পরিবারের কর্তা দৌড়ে এসে আমাকে জানাল -”শুনছেন, কি হয়েছে জানেন? ডেঞ্জারাস ঘটনা। ঢাকা শহরের ভেতর এত বড় বিস্ফোরণ ঘটল! তাও দিনের বেলা সকাল ৯টায়! খুব সাবধানে থাকবেন।”

একাত্তরে বাংলাদেশে প্রবলভাবে সক্রিয় মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এই ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ পাঠিয়েছিল আমেরিকায় তাদের হেডকোয়াটারে। তাদের পাঠানো নথি নং CIA-RDP85T00875R001100100155-4। এদিন সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহের ৫ নং বিবরণীতে, এই গেরিলা অপারেশন সম্পর্কে বলা হয়েছে,

“The USIS library in Dacca was destroyed by a bomb explosion this morning. A man in civilian clothes and armed with an automatic weapon entered the building, ordered the staff to leave and placed a bomb near the building’s entrance. Only one person, a passerby, was injured. A library employee indicated the bomber spoke in Urdu, the predominant language in West Pakistan. The US Consul General reports that no motive for the explosion has yet been determined.”

তথ্যসূত্র ও ইউসিস বিল্ডিং-এর দুর্লভ ছবি কৃতজ্ঞতাঃ গেরিলা একাত্তর
১। বিশেষ সাক্ষাৎকার- গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা ও স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন (বাবুল)/ গেরিলা একাত্তর
২। সিআইএ’র হেডকোয়াটারে পাঠানো নথি
৩। গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী (মশগুল), সাবেক পরিচালক, পেট্রোবাংলা

লেখক: একটিভিস্ট

সারাবাংলা/এসবিডিই

ঢাকায় আরবান গেরিলাদের শেষ অপারেশন ফিচার মুক্তিযুদ্ধ রহমান রা'আদ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর