Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যার নিঃশ্বাসে-বিশ্বাসে ছিলো সমাজতন্ত্র

বিকাশ সাহা
২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৮:০২

একজন অকুতোভয় সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা, একজন দক্ষ সংগঠক, একজন মমতাময়ী মা, একজন মানবদরদী অগ্নিকন্যা, একজন স্নেহবৎসল দিদি, একজন মিছিলের সহযাত্রী, একজন কমিউনিস্ট যে রূপেই আপনি দেখতে চান না কেন আপনি কৃষ্ণা রহমানের মধ্যে তার প্রকৃত বিশ্লেষণ খুঁজে পাবেন।

গত ছাব্বিশে ডিসেম্বর ২০২৩ সকালে সকলের মায়া ত্যাগ করে অনন্তলোকে যাত্রা করেছেন কমরেড কৃষ্ণা রহমান। তার স্মৃতিচিহ্ন ধরে আমরা রয়েছি। প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর তার স্নেহ পেয়েছি। বেতাল হলে শাসনও করেছেন। ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী থাকাকালে গোপীবাগের বাসায় ডেকে নিয়ে খাইয়েছেন। তার পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে মর্যাদা দিয়েছেন। সিপিবি অফিস বা রজপথে যেখানেই দেখা হোক বুকে টেনে নিয়েছেন, পরিবার ও ব্যক্তিগত বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়েছেন, প্রেরণা দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

একসাথে দীর্ঘদিন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ঢাকা মহানগর কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেছি। বিভিন্ন থানা ও শাখার মিটিং-মিছিলে যোগদান করেছি। মানুষকে বুঝানোর এক অপূর্ব ক্ষমতা ছিল তার। তিনি সু্বক্তাও ছিলেন। যে কোন পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারতেন। আশি ও নব্বইয়ের দশকে সিপিবি পরিবার তথা বাম-গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নামে পরিচিত ছিলেন কমরেড কৃষ্ণা রহমান। ঊনশশ পঁচাশি থেকে দুইহাজার দশ পর্যন্ত সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তার সরব উপস্থিতি ছিল। বিশেষত, হরতালের পিকেটিং করার জন্য তিনি ভোর বেলায় আমাদেরও আগে রাজপথে উপস্থিত থাকতেন। পল্টন, মতিঝিল, গোপীবাগ, ওয়ারি, সূত্রাপুর এলাকায় তাকে চিনতেন না এমন কোন রাজনীতি সচেতন মানুষ পাওয়া যাবে না।

নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে কমিউনিস্ট পার্টিকে বিলোপবাদের হাত থেকে রক্ষা করে অগ্রসর করার জন্য যারা ঢাকার রাজপথে ছিলেন তাদের অন্যতম কমরেড কৃষ্ণা রহমান। বক্তব্য রাখার সময়ে তিনি প্রায়ই বলতেন “আমার নিঃশ্বাসে-বিশ্বাসে সমাজতন্ত্র”। এ কথাটি আমাদেরকে আন্দোলিত করতো। এটা শুধু তার মুখের কথা ছিল না, তিনি সত্যি সত্যি সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী একজন খাঁটি মানুষ ছিলেন। তার জীবনাচারণে এর সুষ্পষ্ট ছাপ ছিল। তার চরিত্রে দৃঢ়তা ও সরলতার এক অপূর্ব সম্মিলন ছিল। অন্যায় ও অন্যায্য আচরণ তিনি সহ্য করতেন না। তীব্রভাবে প্রতিবাদ করতেন। পার্টি অফিসের শৃঙ্খলা রক্ষায় তিনি দৃঢ় ভূমিকা নিতেও কার্পণ্য করেননি।

বিজ্ঞাপন

তার মায়াভরা মুখে সব সময় হাসি ফুঁটে থাকতো। কপালে বড় লাল, কলো বা সবুজ টিপ, পান খাওয়া লাল ঠোঁট আর শাড়ি পরিহিত কৃষ্ণ রহমানের প্রতিচ্ছবি আমৃত্যু আমার চোখের সামনে দ্বীপ্তিমান থাকবে।

গত পাঁচ-ছয় বছর কৃষ্ণদির সাথে আমার তেমন কোন যোগাযোগ ছিল না। অনেকবার ভেবেছি বাসায় যবো। দিদির বড় মেয়ে সোমার সাথে কথাও বলেছি, কিন্তু যাওয়া হয়নি। প্রায় দু’মাস হাসপাতালের বিছনায় ছিলেন দিদি, কিন্তু একটিবারও দেখতে যাইনি।

কমরেড কৃষ্ণা রহমানের লাল পতাকা আমরা সামনের দিকে উড্ডীন রাখবো, তার স্বপ্নের সমাজতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে আমরা রাজপথে থাকবো। এটাই আমাদের শপথ।

কমরেড কৃষ্ণা রহামনের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।

লেখক: সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, সূত্রাপুর থানা কমিটি এবং সাবেক সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, কেন্দ্রীয় সংসদ

সারাবাংলা/এজেডএস

কমরেড কৃষ্ণা রহমান বিকাশ সাহা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর