গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করতে প্রয়োজন পরিকল্পিত পড়ালেখা
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৪:৫০
যাদের রেজাল্ট ভালো হয়েছে তাদেরকে অভিনন্দন। রেজাল্ট যাদের ভালো হয়নি তাদের মন খারাপ করার কিছু নেই। জীবনের পরবর্তী ধাপের জন্য তোমার এই রেজাল্ট তেমন কোন প্রভাব ফেলবে না। তোমার চেষ্টা আর পরিশ্রমই তোমার পরবর্তী গন্তব্য ঠিক করবে। তাই এখন রেজাল্ট নিয়ে চিন্তা না-করে ভর্তি পরিক্ষায় ভালো করার চেষ্টা করো। গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরিক্ষায় মানবিকে ভালো করতে হলে পরিকল্পিত পড়াশোনা করা প্রয়োজন। টপিক ধরে ধরে পড়তে হবে। প্রথমে ভালো করে পরিক্ষার মানবন্টনটা বুঝতে হবে। তারপর সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা সাজাঁতে হবে। তাহলে চলো প্রথমে মানবন্টনটা ভালোভাবে দেখে নেওয়া যাক…
এক শিফটে একযুগে সারা বাংলাদেশে পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে ১০০টি প্রশ্নের জন্য থাকবে ১ নম্বর করে সর্বমোট ১০০ নম্বর।
* বাংলা-৩৫টি প্রশ্ন, মোট ৩৫ নম্বর
* ইংরেজী-৩৫ টি প্রশ্ন, মোট ৩৫ নম্বর
* জিকে-৩০ টি প্রশ্ন, মোট ৩০ নম্বর
* পাশ মার্ক থাকবে ৪০ নম্বর
* নেগেটিভ মার্ক থাকবে প্রতিটি প্রশ্নের জন্য ০.২৫
* পরীক্ষার সময়সীমা ১ ঘন্টা
পূর্বের ভর্তি পরিক্ষা পদ্ধতির সিলেবাস আর গুচ্ছের সিলেবাসের মধ্যে অনেকটাই পার্থক্য রয়েছে। বর্তমান সিলেবাস অনুযায়ী বেশিরভাগ প্রশ্ন হয়ে থাকে বোর্ডবই ভিত্তিক। তাই প্রথমে তোমাদের গুচ্ছ ভর্তি পরিক্ষার বিগত সালের প্রশ্নগুলো দেখতে হবে। প্রথমেই প্রশ্নব্যাংক পড়তে হবে এমন না। কী রকম প্রশ্ন হয়, কোথায় থেকে থেকে প্রশ্ন হয়, কীভাবে প্রশ্ন হয়, ধারণা নেওয়ার জন্য চোখ বুলিয়ে নিবে। তাহলে তুমি বুঝতে পারবে আসলে কোন বিষয়গুলো তোমার পড়তে হবে বা কোন টপিকগুলো গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলা _
বিগত বছরগুলোতে দেখা গেছে গুচ্ছ ভর্তি পরিক্ষায় বাংলা অংশে উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়ের গদ্য, পদ্য, নাটক ও উপন্যাস থেকেই প্রশ্ন বেশি হয়ে থাকে। ব্যাকরণ অংশ থেকে তুলনামূলক কম প্রশ্ন হয়। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রশ্ন দেখলে তোমরা দেখতে পাবে বাংলা ৩৫ টি প্রশ্নের মধ্যে ২৪টি প্রশ্ন এসেছে উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয় থেকে। যেখানে গদ্যের মূলভাব, চরিত্র, লেখক পরিচিত, সাহিত্য কর্ম, জীবনী, নাটক ও উপন্যাসের বিভিন্ন চরিত্র, সংলাপ , ইত্যাদি বিষয় ছিলো। তাহলে বুঝতেই পাচ্ছো পাঠ্য বই কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রথমে পাঠ্যবই ভালোভাবে পড়ে নিতে হবে। এমনভাবে পড়তে হবে যেন পাঠ্য বইয়ের কোন গল্পে বা কবিতার একটি লাইন বললে পরবর্তী লাইনটি তুমি বলতে পারো ।
একটি বিষয় মনে রাখতে হবে ব্যাকরণ থেকে কম প্রশ্ন আসে তাই বলে কম গুরুত্ব দেওয়া যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরিক্ষায় ১টি নাম্বার অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ১ নাম্বারের জন্য তুমি একশ জনের পিছনে চলে যাবে। তবে যে টপিকগুলোর গুলোর উপর বেশি প্রশ্ন হয় সেগুলো একটু বেশি গুরুত্ব দিয়ে পড়বে। গুচ্ছের বিগতসালের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ব্যকরণ অংশে বাংলা ভাষা, ব্যকরণ, শব্দ, কারক, পারিভাষিক শব্দ , সমাস, সন্ধি, উচ্চারণ, বিভক্তি, বানান, উপসর্গ, বাক্য সংকোচন, বাগধারা এগুলো থেকেই বেশি প্রশ্ন হয়। সুতরাং এই টপিক গুলো ভালোভাবে পড়তে হবে।
ইংরেজি _
ইংরেজির ক্ষেত্রে উচ্চ মাধমিকের পাঠ্যবইয়ের গুরুত্বপূর্ণ গল্প এবং কবিতাগুলো ভালোভাবে পড়ে নিতে হবে। কবিতার থিমগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে। কবিতার থিম থেকে প্রশ্ন থাকেই। পাশাপাশি মডেল টেস্ট থেকে passage ভিত্তিক প্রশ্ন সমাধান করতে হবে বেশি বেশি।
টেক্সট বইয়ের passage গুলো অর্থসহ বুঝে বুঝে পড়তে হবে। একটি প্যাসেজের যে Word meaning গুলো তুমি পারো না সেগুলো মুখস্থ করে নিবে এবং word গুলোর Synonym, Antonym জেনে নিবে, তাহলে প্রশ্ন সমাধান করতে সহজ হবে।
ইংরেজির ক্ষেত্রে ব্যাকরণ অংশে অধিক জোর দেওয়া জরুরি। সে ক্ষেত্রে কিছু টপিক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, Preposition + appropriate preposition, spelling, Idiom and phrase, Correction, Parts of speech বিগত সালের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখাগেছে এই পাঁচটি টপিক থেকে ১০০% প্রশ্ন আসেই। পাশাপাশি Tense, Voice, Narration, Right form of verb, subject verb agreement, Translation, Group verb, Synonym and Antonym অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
আইসিটি _
গুচ্ছ ভর্তি পরিক্ষায় আইসিটি থেকে বেশ কিছু প্রশ্ন হয়ে থাকে । ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে আইসিটি থেকে ৫টি প্রশ্ন হয়েছিলো। পাঁচটির চারটিই হয়েছিলো তোমাদের উচ্চ মাধমিকের পাঠ্য আইসিটি বই থেকেই। তাই আইসিটি অংশে ভালো করতে হলে উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যবইতে দখল থাকা খুবই জরুরী। বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ কিছু টপিক যেমন, গ্লোবাল ভিলেজ, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, বায়োমেট্রিক, ন্যানোটেকনোলজি, মোড, ওয়াইফাই, ওয়াইম্যাক্স, হাব, টপোলজি, বাইনারি, অক্টাল, ডেসিমল, বিভিন্ন গেট, এ্যালগরিদম, কোড, এইচটিএমএল ইত্যাদি ভালোভাবে পড়ে নিবে।
সাধারণ জ্ঞান _
পূর্বের ভর্তি পরিক্ষা পদ্ধতিতে সাধারণ জ্ঞান অংশে যেরকম প্রশ্ন হতো গুচ্ছে কিছুটা ভিন্ন। বিগত সালের প্রশ্ন দেখলে দেখবে, এখন সাধারণ জ্ঞান প্রশ্ন হয়ে থাকে তোমাদের উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্য বই ভিত্তিক। পৌরনীতি ও সুশাসন, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, ইতিহাস, যুক্তিবিদ্যা, ভূগোল, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সংক্রান্ত প্রশ্ন থাকবে। তাই পূর্বে যারা পাঠ্যবইগুলো ভালোভাবে পড়েছ তারা অনেকটা এগিয়ে থাকবে। যারা কম পড়েছ তারা এখন ভালোভাবে পড়ে নেও। পাশাপাশি বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী যেকোন একটি বই পড়ে নিবে।
রিভিশন দাও _
কোন টপিক পড়ার পর ভুলেগেলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। একবার পড়লে মনে থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। একটা টপিক শেষ করার পর কিছুদিন পর আবার রিভিশন দিবে। এভাবে দুই-তিনবার পড়ার পর দেখবে অটোমেটিক তোমার মাথায় ওই টপিকটা সেট হয়েগেছে। তখন আর চাইলেও ভুলতে পারবে না। জোর করে মুখস্থ করার চেষ্টা করো না। পড়তে পড়তেই মুখস্থ হয়ে যাবে। নিজের উপর প্রেসার সৃষ্টি করো না। সবসময় সব বিষয় পড়তে ভালো লাগবে না। যখন যে বিষয়টা পড়তে ভালো লাগবে তখন সেই বিষয়টাই পড়বে।
বিগত সালের প্রশ্ন সমাধান _
যেকোনো ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রেই তুমি যত বেশি প্রশ্ন সমাধান করবে, তোমার জন্য তা তত ভালো হবে। এর জন্যে প্রথমে টপিক ভিত্তিক বই শেষ করে প্রশ্ন সমাধান করবে। মনে করো বাংলা গ্রামার অংশ পড়ে শেষ করলে, এবার বিগত সালের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা গ্রামার অংশের প্রশ্নগুলো সমাধান করো। যে টপিকের প্রশ্ন পারবে না ওই টপিকটা আবার পড়বে। ওই টপিকে আর কোন এঙ্গেল থেকে প্রশ্ন হতে পারে দেখবে। এর মাধ্যমে তোমার পড়ার রিভিশন হয়ে যাবে। সর্বশেষ বেশি বেশি মডেল টেস্ট সলভ করবে, এর মাধ্যমে নিজেকে যাচাই করতে পারবে।
আবারও বলছি তোমার ইচ্ছে, চেষ্টা আর পরিশ্রমই তোমাকে তোমার গন্তব্যে নিয়ে যাবে। তাই নিজের উপর বিশ্বাস রেখে পরিশ্রম করে যাও, সফল তুমি হবেই।
শুভ কামনা সবার জন্য।
লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এসবিডিই
ইমরান হোসাইন গুচ্ছ ভর্তি পরিক্ষায় ভালো করতে প্রয়োজন পরিকল্পিত পড়ালেখা পাঁচমিশেল ফিচার