মাহে রজব রমজানের আগমনের বার্তা
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৫:২২
আরবী চন্দ্রবর্ষের সপ্তম মাস রজব। আরবি সপ্তম মাস রজব। রজব শব্দের অর্থ সম্মানিত আর রজব হলো আল্লাহতায়ালার বিশেষ অনুগ্রহের মাস। এই তাৎপর্য পূর্ণ মাসটির পুরো নাম আল রজব আল মুরাজুব বা রজবুল মুরাজাব। ইসলামে যে চারটি মাসকে আশহুরুল হুরুম, তথা সম্মানীত মাস বলে ঘোষণা করা হয়েছে তার মধ্যে রজব মাস অন্যতম। রজবুল মুরাজুব হাদীসের ভাষায় এটা মহান আল্লাহর মাস।
ইসলাম পূর্বযুগে জাহেলিয়াতে আচ্ছন্ন আরবরাও এ মাসের সম্মানার্থে যুদ্ধ বন্ধ রাখতো। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন, নিশ্চয় আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর কাছে গননায় মাস ১২টি। তন্মদ্ধে ৪টি (সম্মানীত হওয়ার কারণে) যুদ্ধবিগ্রহের নিষিদ্ধ মাস। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। কাজেই এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করোনা (সূরা তওবা-৩৩)। বিদায় হজ্জের সময় রাসূলে আকরাম (স.) মীনা প্রান্তরে খোতবা প্রদানের সময় মাসগুলোকে চিহ্নিত করে বলেন ৩টি মাস হলো ধারাবাহিক জ্বিলকদ, জ্বিলহজ্ব ও মহররম আর অপরটি হলো রজব (বুখারী-৩১৯৭)। অন্য একটি বর্ণনায় রাসূল (স.) ইরশাদ করেছেন, ১২ মাসে ১ বছর তার মধ্যে সম্মানিত মাস চারটি। ৩টি ধারাবাহিক যথা জিলকদ,জিলহজ্ব ও মহররম আর ৪র্থ টি হলো রজব যা জমাদিউস সানি ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী মাস। ইবাদতের শ্রেষ্ঠ মাস রমজানের আগমনী বার্তা নিয়ে হাজির হয় রজব। রাসূল (স.) রমজানের রহমত, বরকত ও ফজিলত প্রাপ্তির জন্য এবং রমজানের পূর্ণ হক আদায়ের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহন করতেন এই মাসে। যিনি আট বয়স থেকে আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত টানা দশ বছর রাসূল (স.) এর খেদমত করেছেন, তার থেকে অর্থাৎ খাদিমুর রাসুল হযরত আনাস (রা) হতে বর্ণিত, যখন পশ্চিমাকাশে রজবের বাকা চাঁদ দেখা যেত তখন থেকেই রাসূল (স.) তার দরদ মাখা কন্ঠে মহান রবের দরবারে এই দোয়া করতেন ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শা’বান, ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’ অর্থ হে আল্লাহ্! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করে দিন আর আমাদের হায়াত রমজান মাস পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দিন। (সুনানে নাসায়ী ৬৫৯), (শুয়াবুল ঈমান ৩৫৩৪), (মুসনাদে আহমদ ২৩৪৬)।
রজব মাস থেকেই রাসূল (স.) সকল ব্যস্ততাকে ফুরসত দিয়ে পবিত্র রমজানের পুরো সময়টাকে ইবাদত বন্দেগীতে নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দিতেন। রাসুল (স.) রমজানের প্রস্তুতির জন্য রজব মাস থেকেই নফল রোজা রাখা শুরু করতেন। রজব মাসের মর্যাদা সম্পর্কে প্রিয় নবী বলেছেন, যে ব্যক্তি রজব মাসে ইবাদত দ্বারা অন্তরের জমি চাষাবাদ করল না আর শাবান মাসে ইবাদতের মাধ্যমে জমির আগাছা মুক্ত করলো না সে রমজান মাসে (ইবাদতের) ফসল তুলতে পারবে না। হযরত আয়েশা (রা) বলেন রাসুল (স.) এর আমলের আধিক্যতা দেখেই আমরা রজব মাসের আগমন উপলব্দি করতাম। উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশা (রা) আরো বলেন আমি রাসূল (স.) কে রজব/শাবান মাস ব্যতীত অন্য কোন মাসেই এত বেশি নফল রোজা রাখতে দেখিনি। (বুখারি ও মুসলিম)। সম্মানীত রজব মাস আমাদের কে রমজানের প্রস্তুতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। রজবের ২৭ তারিখ নবী করীম (স.) মেরাজে গমনকরে আল্লাহ্ তায়ালার দিদার লাভ করেন এবং উপহার স্বরূপ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের হুকুম নিয়ে পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তন করেন। পবিত্র রমজান মাসে বিপুল উৎসাহে ইবাদতে মগ্ন হওয়ার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি গ্রহন করতে হবে। রজব মাসের জন্য নির্দিষ্ট কোন আমল নেই। যা রজব মাসেই করতে হবে। তবে বেশি বেশি ইস্তেগফার, নফল নামাজ, দোয়া, দরুদ ও নফল রোজা আদায়ের মাধ্যমে পবিত্র রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করা যায়। আমাদের উচিৎ পবিত্র রজব মাসের তাৎপর্য উপলব্দি করা এবং কুরআন সুন্নাহভিত্তিক কুসংস্কার মুক্ত আমলের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা।
আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহতায়ালার বিধান মতে আল্লাহর নিকট মাসের সংখ্যা বার মাস সেই দিন হতে যেই দিন তিনি আকাশ মণ্ডল এবং পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না।’ (সুরা আত তাওবাহ: ৩৬)
আমরাও যদি মহানবী (সা.)-এর সুন্নত অনুযায়ি প্রতি মাসে কয়েকটি করে নফল রোজা রাখি তাহলে রমজানের রোজা আমাদের জন্য আরো সহজ হবে। এছাড়া আমরা যদি মনের সব দূর্বলতা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে রজব মাস থেকেই রমজানের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুতি গ্রহণ করি তাহলে আমাদের সব ইবাদত বন্দেগী হবে প্রশান্তিময়।
তাই আসুন, পবিত্র মাহে রমজানকে স্বাগত জানাতে এই রজব মাস থেকেই নিজেকে পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত করে নেই। আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে সম্মানিত রজব মাসের তাৎপর্য বুঝার এবং এর ওপর আমল করার তৌফিক দান করুন। সেই সাথে দয়াময় আল্লাহর দরবারে আমরা সকাতর প্রার্থনা করি, হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করে আপনার দয়ার চাদরে আমাদেরকে আবৃত করে নিন আর রমজানের আগেই বিশ্বকে করুন করোনা মুক্ত, আমিন।
লেখক: ইসলামবিষয়ক লেখক
সারাবাংলা/এসবিডিই
টপ নিউজ মাহে রজব রমজানের আগমনের বার্তা হাফেজ মাহমুদুল হক হাসান