কী ঘটেছিল সন্ত্রাসবিরোধী রাজু দিবসে?
১৩ মার্চ ২০২৪ ১১:৩০
সন্ত্রাসবিরোধী রাজু দিবস আজ ১৩ মার্চ। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এদিন নিহত হয়েছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা মঈন হোসেন রাজু। কী ঘটেছিল সন্ত্রাসবিরোধী রাজু দিবসে এই তথ্য অনেকেরই অজানা।
১৯৯২ সালের ১৩ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল বন্দুক যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এই সন্ত্রাসের প্রতিবাদে গর্জে উঠে। তিনি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন সংসদের তৎকালীন সমাজকল্যাণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তাৎক্ষনিক সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে সঙ্ঘবদ্ধ করে প্রতিবাদ জানায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের। ছাত্রলীগ ছাত্রদলের বন্দুকযুদ্ধে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা এই মিছিলকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ রাজুকে সহযোদ্ধারা নিয়ে যায় ঢাকা মেডিকেলে। কিন্তু রাজু আর ফেরেনি। রাত সাড়ে ১০টায় সকলকে কাঁদিয়ে প্রতিবাদের সাহসী ভাষা শিখিয়ে মঈন হোসেন রাজু আলিঙ্গন করে মৃত্যুর হিমশীতল স্পর্শ। রাজু থেমে গিয়েছিল সন্ত্রাসীদের গুলিতে, চুপসে গিয়েছিল এক মায়ের স্বপ্ন। ঢাকার আকাশ সেদিন কেঁপে উঠেছিল এক মায়ের আর্তনাদে। পরবর্তীতে রাজুসহ সন্ত্রাসবিরোধী আন্দোলনের সব শহীদদের স্মরণে ১৯৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নির্মিত হয় সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য।
মঈন হোসেন রাজুর জন্ম ১৯৬৮ সালের ২৯ জুলাই। বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে। তবে রাজুর পরিবার প্রথমে চট্টগ্রাম ও পরে ঢাকাতে বসবাস শুরু করে। বাবা মোয়াজ্জেম হোসেন। মা খাদিজা বেগম। পড়াশুনার হাতেখড়ি পরিবারে। তারপর প্রাইমারি ও হাইস্কুল। ১৯৮৭ সালে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্তিকা বিজ্ঞানে।
ঢাকাতে বসবাস করার সময়ে রাজু যুক্ত হন লড়াই-সংগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাথে। যুক্ত হয়ে প্রথমে শেরে বাংলা নগরে ছাত্র ইউনিয়ন গড়ে তোলার দায়িত্ব নেন। এরপর তেজগাঁও কলেজে গড়ে তোলেন ছাত্র ইউনিয়নের দূর্গ। ফলে তিনি তেজগাঁও থাকা কমিটির অন্যতম নেতা হয়ে ঊঠেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর যুক্ত হন ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাথে। এ সময় তিনি ৯০ এর স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ঢাবি ছাত্র ইউনিয়নে যুক্ত থাকার সময় ১৯৯১ সালে প্রথমে তিনি শহীদুল্লাহ হল কমিটির সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সমাজকল্যাণ সম্পাদক এবং ওই বছর ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জন্মলগ্ন থেকে নানা ধরনের শিক্ষাধিকার আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস বিরোধী আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। যখনই কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে তখনই ছাত্র ইউনিয়ন তা প্রতিহত করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছে। এমনই এক গৌরবের সময় ১৯৯২ সাল।
১৯৯২ সালের ১৩ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল বন্দুক যুদ্ধে লিপ্ত হয়। সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা ভীত-সন্ত্রস্ত্র হয়ে পড়ে। সন্ত্রাস রুখে দাড়াতে ছাত্র ইউনিয়ন তার তখনকার যুক্ত মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র ঐক্যের ব্যানারে প্রতিবাদ মিছিল বের করে। ছাত্রলীগ ছাত্রদলের বন্দুকযুদ্ধে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা মিছিলকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ছাত্র ইউনিয়ন নেতা মঈন হোসেন রাজু শহীদ হন। রাজুর স্মরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরটিএসসির সড়ক দ্বীপে সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্য গড়ে ওঠে। রাজুর চেতনাকে ধারণ করে এগিয়ে চলছে ছাত্র ইউনিয়ন। এছাড়াও রুবেল, নতুন, প্রোটন দাশগুপ্ত, সুজন মোল্লাসহ আরও অনেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতাকর্মীই সন্ত্রাসীদের হাতে শহীদ হয়েছে।
রাজুসহ সন্ত্রাস বিরোধী আন্দোলনের সকল শহীদের স্মরণে নির্মিত সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্য ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য একে আজাদ চৌধুরী উদ্বোধন করেন। এই ভাস্কর্য নিমার্ণে জড়িত শিল্পীরা হলেন ভাস্বর শ্যামল চৌধুরী ও তার সহযোগী গোপাল পাল। নির্মাণ ও স্থাপনের অর্থায়নে ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক আতাউদ্দিন খান (আতা খান) ও মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুর সমিতির সভাপতি লায়ন নজরুল ইসলাম খান বাদল। ভাস্কর্যটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলো বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। এই ভাস্বর্যের মাধ্যমে নিহত ছাত্রনেতা রাজুকে সন্ত্রাসবিরোধী সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে স্মরণ করা হয়েছে।
সারাবাংলা/এসবিডিই