রমজানের সামাজিক গুরুত্ব ও শিক্ষা
১৫ মার্চ ২০২৪ ১৭:১২
সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজান। রোজা আরবি বছরের রমজান মাসে আসে। এই সময় মুমিন মুসলমানগণ সূর্যাস্ত হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাদ্য, পানাহার এবং অন্যান্য নির্দিষ্ট কিছু কাজ থেকে বিরত থাকতে হয়। এটি মুসলিমদের ইমান ও আত্ম-নিয়ন্ত্রণের বৃদ্ধির জন্য একটি মুখ্য ইবাদত। রোজা অত্যন্ত পরিশ্রমশীল হয়ে থাকতে এবং মুসলিমদের সহিষ্ণুতা, সহজলভ্যতা, ধৈর্য এবং দান এগুলি উন্নত করতে সাহায্য করে। পবিত্র রমজান মাসে প্রতিটি ইবাদতের মর্যাদা বহুগুণে বেড়ে যায়। ফলে মুসলমানগণ সব পাপ ছেড়ে দিয়ে সৎ পথের দিকে যেতে পারে। সব ধরনের গুনাহের কাজ থেকে বিরত থেকে ভালো মানুষ হিসেবে নিজের জীবনকে নতুন করে সাজানোর সুযোগ পায়।
মুসলিম উম্মাহর কাছে রমজান মাসের আগমন ঘটে প্রধানত ফরজ রোজা, তারাবিহ ও ইবাদাত বন্দেগী নিয়ে। এই মাসে বিদ্যমান রয়েছে পবিত্র রজনী লাইলাতুল কদর। যা হাজার বছর অপেক্ষা উত্তম। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন- ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি; যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো’ (সূরা বাকারা-১৮৩)। এখানে নির্দেশ করে একজন সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষের উপর রোজা ফরজ।
হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালার কসম! মুসলমানদের জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমজান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনগণ এ মাসে (গোটা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গণিমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ’ (মুসনাদে আহমাদ-৮৩৬৮)।
আর রোজা এমন এক ইবাদাত যা মানুষের লোভ লালসা, পাপাচার, অন্যায় ও গর্হিত কাজ থেকে বিরত রাখে। এটি আত্নসংযোমী হতে শেখায়। আমরা রমজানে রোজা রাখার পরও অহরহ মিথ্যা বলি, মনের কু-প্রবৃত্তিকে দমন করতে পারি না; রোজা রেখেই অন্যদের গালিগালাজ কিংবা কাজকর্মে, আচার-আচরণে নানাভাবে কষ্ট দিয়ে থাকি; রোজা রেখে শারীরিকভাবে অপবিত্র থাকি- তাহলে সেই রোজা সঠিকভাবে আদায় হবে না। বরং তা লোক দেখানো রোজা পালন করা হবে। প্রকারান্তরে নফসকে দমনে রোজার যে সামাজিক শিক্ষা, তা অনুসরণ করা হবে না। রোজা সমাজে ধনী গরিবের ভেদাভেদ দূর করে। বছরের অন্যান্য মাসে অনেক ধনী মানুষ আরাম আয়েশী জীবনযাপন করে, পক্ষান্তরে ইয়াতিম, অসহায়, হতদরিদ্র মানুষ অভুক্ত থাকে। কিন্তু পবিত্র রমজান মানুষের সাম্যের কথা বলে। আর রোজা সহিহ হওয়ার জন্য ধনী মানুষের যাকাত দেওয়া ফরজ। ফলে এতে ধনীর সম্পদে গরিবের হক আদায় হয়। ফলে ধনী গরিবের মাঝে ভেদাভেদ দূর হয়। রোজার অপরিহার্য হলো ইফতার। আর ইফতার করার জন্য স্থানভেদে ইফতার মেনু আছে। তবে ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী প্রথমে খেজুর, তারপরে পানি পান করে ইফতার করা উচিত। তবে অনেক দেশে অনেক আইটেম দিয়ে ইফতার করে থাকে। ফলে মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস খুব দরকার হয়। কিন্তু বাংলাদেশে পবিত্র রমজান মাসে ওঁৎ পেতে থাকে অসাধু ব্যবসায়ী। তারা মানুষের সরলতার সুযোগ নেয়। কিছু ব্যবসায়ী মুনাফার লোভে মজুতদারী করে রমজান মাসের অনেক আগে থেকে। জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয় এবং অতিরিক্ত লাভ করে। কিন্তু ব্যবসায়ী নিজে রোজা রেখে অসৎ, পাপাচার, লোভ লালসা পরিহার করতে পারেন না। তদুপরি রোজাদারদের কষ্ট দিয়ে থাকে। তাদের এই ধরনের রোজা রাখাও ইবাদতের সমতুল্য নয়। যারা সামান্য লোভ সামলাতে না পারে, তাদের এই রোজা নামসর্বস্ব ও লোক দেখানো রোজায় পরিণত হবে। অতিরিক্ত মুনাফার যে লোভের অপকর্ম তাদের মনুষ্যত্বহীন করে তোলে। তারা সিয়াম পালনের শিক্ষা ভুলে যায়। হালাল পেশা ব্যবসা তো করে না। বরং ইমানদার মুমিন মুসলমানের কষ্ট দেয়। যা কখনো রমজানের শিক্ষা নয়। তাই আমাদের সকলের তাকওয়া অর্জন করতে হবে। একমাত্র আল্লাহর জন্য ইবাদাত করতে হবে। ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হবে। কারণ আল্লাহর প্রিয় নবি (সা.) ঘোষণা দিয়েছেন- এ ধরনের কাজ বর্জন করতে না পারলে, শুধু শুধু রোজা রাখার নামে দিনভর উপবাস থাকা অর্থহীন।
সারাবাংলা/এজেডএস