সহমর্মী হতে শেখায় রোজা
১ জুন ২০১৮ ১৮:১৮
।। জহির উদ্দিন বাবর ।।
পবিত্র রমজানের কল্যাণ বহুমুখী। একজন পরিশুদ্ধ মানুষ হওয়ার সব উপাদানই রয়েছে এই রমজানে। অন্যের জন্য সহমর্মী ও সমব্যথী হওয়া, মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা রমজানের অন্যতম শিক্ষা। রোজায় বিত্তবান ও সচ্ছল মানুষেরা দুঃখী ও অভাবী মানুষের কষ্ট হৃদয়াঙ্গম করতে সক্ষম হন। রোজাদাররা নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়ে অন্যের কষ্ট উপলব্ধি করেন।
হাদিসের ভাষায় রমজানকে বলা হয়েছে ‘শাহরুল মুওয়াসাত’ বা সহমর্মিতা ও সহানুভূতির মাস। ক্ষুধা-পিপাসা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের যন্ত্রণা সহ্য করার প্রশিক্ষণ একজন সচ্ছল রোজাদারকে অভাবী ও দুঃখীজনের প্রতি সহমর্মী করে তুলতে বাধ্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) এই মাসে খুব বেশি দান করতেন। হাদিসে তার দানের বিবরণ রয়েছে।
সাধারণভাবে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে অভাবী নিকটজন, প্রতিবেশী ও অধীনদের প্রতি সবসময় সহযোগিতার হাত বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। রমজানে এর গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। হাদিসের বর্ণনায় জানা যায়, কোনো রোজাদারকে ইফতার করালে ওই রোজাদারের রোজার সমান সওয়াব পাওয়া যায়। এছাড়া রমজানে প্রতিটি দানে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সওয়াব। গরিব-দুঃখীর পাশে দাঁড়ানোর মতো বেশকিছু উপলক্ষ্যও রমজানে রয়েছে। যেমন— জাকাত, সদকাতুল ফিতর, সাধারণ দান— সবই রমজানে বিশেষ সওয়াব লাভের উপায়।
রমজানের অন্যতম শিক্ষা অভাবী, দুঃখী ও দুস্থদের পাশে দাঁড়ানো। আমরা তো মাসব্যাপী রোজা রাখছি, রাখার চেষ্টা করছি; কিন্তু জীবনে যাদের প্রতিদিনই রোজা, তাদের দিকে কি চোখ ফিরে তাকানোর অনুভূতি অর্জন করেছি? এই এক মাস এবং এই মাসটির পর বাকি ১১ মাস আমাদের প্রত্যেক রোজাদার ভাই-ই যদি রমজানের সহমর্মিতার সবক ও দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পাঠ কাজে লাগাই, তাহলে পুণ্য, সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধির দ্যুতিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে আমাদের সমাজ। রমজানের এই শিক্ষাটুকু ধারণ করলে আমাদের সমাজ আর পিছিয়ে থাকবে না।
আমাদের দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে পালন করলে সমাজের দারিদ্র্যও অনেকাংশে কমে যাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমরা আমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন না। আমরা নিজেদের নিয়ে এতটাই ব্যস্ত যে, গরিব-দুঃখীদের পাশে দাঁড়ানোর মতো সুযোগই হয়ে ওঠে না। সারাবছর সেটা না হলেও অন্তত রমজানে সবার উচিত পিছিয়ে পড়া মানুষদের প্রতি একটু সহানুভূতির দৃষ্টিতে তাকানো।
মানবিক মূল্যবোধ বিকাশেরও একটি সুবর্ণ সুযোগ মাহে রমজান। এই মাসে আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের কঠোর ত্যাগ, উদারতা, সততা, ধৈর্য ও সহনশীলতা প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন। এই মাসে সংযম ও ত্যাগের পরাকাষ্ঠার মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের অবারিত সুযোগ রয়েছে। রমজানে কঠোরভাবে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে ধৈর্য ও সহনশীলতার অনন্য গুণটি অর্জিত হয়। আর এটা শুধু ব্যক্তিগত কল্যাণই বয়ে আনে না বরং সমাজের জন্যও কল্যাণ বয়ে আনে।
রমজানে মানুষের রিপু থাকে নিয়ন্ত্রিত। কুপ্রবৃত্তি মানুষকে বিপথগামী করার সুযোগ পায় না। রিপুর তাড়নায় সারাবছর মানুষ পাপের সাগরে হাবুডুবু খেলেও রমজানে তার মূল্যবোধ বিকাশের সুযোগ পায়। পরিবেশের আনুকূল্যের কারণে মানবিক মূল্যবোধগুলো সহজেই বিকশিত হয়। রমজানকে কাজে লাগিয়ে যারা সৎ গুণগুলোর যথার্থ চর্চা করতে পারেন তারাই সফল। এজন্য প্রত্যেক রোজাদারের উচিত এই মাসে মানবিক গুণগুলো অর্জনে সচেষ্ট হওয়া। এতে দুনিয়া-আখেরাত উভয় জগতে কল্যাণ মিলবে।
লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম