ভুতের উৎসব হ্যালোউইন
৩০ অক্টোবর ২০২৪ ১৮:২৪
বারো ভুতের মেলা বা ভুতেদের মচ্ছব- বাংলার এক অতি পরিচিত প্রবাদ। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কালী পুজার দিনে বা চৈত্র সংক্রান্তিতে বাংলাদেশ ও ভারতের অনেক জায়গাতেই বারো ভুতের মেলা বসে। প্রায় একই রকম একটি অনুষ্ঠান রয়েছে পাশ্চাত্যেও- ভুতের উৎসব। ইউরোপ ও আমেরিকায় এই উৎসবকে হ্যালোউইন নামে ডাকা হয়। হ্যালোউইন অর্থ পবিত্র রাত। আবার পাশ্চাত্যের হ্যালোউইনের ধারণায় ‘ভূত’ অর্থ অশুভ আত্মা। অশুভ অতৃপ্ত আত্মা তাড়ানোর উৎসব হল হ্যালোউইন। এই উৎসবে হ্যালোউইন পোশাক পরে পার্টিতে অংশ নেওয়া থেকে শুরু করে কুমড়ো খোদাই করা, মুখোশ পরা, ভয় দেখানো, ভুতুড়ে গল্প বলা, ভৌতিক সিনেমা দেখা ও ভুতুড়ে সাজসজ্জায় সবাই ব্যস্ত থাকে।
প্রায় কয়েক হাজার বছরের ঐতিহ্য এই অনুষ্ঠানের। প্রাচীন ইন্দো-ইউরোপীয় সভ্যতার ক্যাল্টিক উৎসব থেকেই এসেছে হ্যালোউইন উদযাপনের চল। প্রায় ২০০০ বছর আগে বর্তমান আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও উত্তর ফ্রান্সে বসবাস করতো ক্যাল্টিক জাতি। ৩১ অক্টোবর ক্যাল্টিক ক্যালেন্ডারের শেষ দিন। ক্যাল্টরা বিশ্বাস করতেন এইদিন রাতে জীবিত এবং মৃতদের মধ্যে আর কোনও বাধা বা বেড়া থাকে না। আর তাই অক্টোবরের শেষ দিনের রাত সবচেয়ে খারাপ। যে রাতে সব প্রেতাত্মা ও অতৃপ্ত আত্মারা মানুষের ক্ষতি করতে পারে। আর তাই ক্যাল্টিক জাতির সদস্যরা এই রাতে বিভিন্ন ধরনের ভূতের মুখোশ ও কাপড় পরতো। তারা নির্ঘুম রাত কাটাতে আগুন জ্বালিয়ে মুখোশ পরে বৃত্তাকারে একসঙ্গে ঘুরতেন ও মন্ত্র জপতেন। তারপর নভেম্বরের প্রথম দিনটি তারা নববর্ষ বা ‘সাহ-উইন’ হিসেবে পালন করতেন।
হ্যালোউইনের রাত নিয়ে অনেক ধরনের গল্পকথা প্রচলিত রয়েছে। তেমনই এক প্রচলিত মিথ হলো, এই রাতে মৃতের দেবতা সব মৃত আত্মাদের পৃথিবীতে আহ্বান জানান। উড়ন্ত ঝাড়ুতে করে হ্যালোউইন ডাইনি উড়ে বেড়ায় আকাশ জুড়ে। কখনও বা তিনি কড়া নাড়েন বিভিন্ন বাড়ির দরজায়।
প্রচলিত আরেকটি বিশ্বাস অনুযায়ী, খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে হ্যালোউইন শব্দের উৎপত্তি ১৭৪৫ সালের দিকে। হ্যালোউইন শব্দটি এসেছে স্কটিশ ভাষার শব্দ ‘হ্যালোজ ইভ’ থেকে। হ্যালোউইন শব্দের অর্থ ‘পবিত্র সন্ধ্যা’। সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়ে ‘হ্যালোজ ইভ’ শব্দটি এক সময় ‘হ্যালোউইন’এ রূপান্তরিত হয়।
১৮০০ দশকের শেষের দিকে আমেরিকায় হ্যালোউইন ছুটির দিনে পরিণত হয়। বর্তমানে সারা বিশ্বেই একটু লঘু মেজাজে, মজাদারভাবে পালিত হয় হ্যালোউইন। আট থেকে আশি, সকলেই হ্যালোউইন থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভূতের সাজ সাজেন হ্যালোউইন পার্টিতে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, খেলাধুলা, মৌসুমী খাবার ও উৎসবমুখর পোশাক পরা হয়। রাতটি উদযাপন করতে সেখানে প্রস্তুতি চলে মাসজুড়েই। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও কানাডা, আয়ারল্যান্ড, পুয়ের্তো রিকোসহ এশিয়ার জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডেও হ্যালোউইন পালিত হয়। এমনকি বাংলাদেশেও পালিত হয় হ্যালোউইন উৎসব।
তবে সময়ের সাথে সাথে, হ্যালোউইন উদযাপনের ধরণ বদলেছে। শত বছরের পুরোনো ভুতুড়ে গল্পের থিমে পার্টি, সেখানে অতিথিদের অদ্ভুত সাজপোশাক আর খাবার। সবকিছুতেই ভুতুড়ে ছাপ থাকে পাশ্চাত্যের এই ভুতুুড়ে অনুষ্ঠানে। তবে আধ্যাত্মিক ঘটনাপ্রবাহ ও হাজার বছরের পুরোনো গল্পের মিশেলে হ্যালোউইন বিশ্বের এখন অন্যতম বড় সাংস্কৃতিক উৎসব।
এবারও সবচেয়ে ভয়ংকর ভৌতিক পোশাকে সাজতে পোশাক কেনায় ব্যস্ত আমেরিকা ইউরোপের শিশু থেকে তরুণ-বৃদ্ধ সবাই। জনপ্রিয় সিনেমার থিমে পোশাক নিয়ে সেজেছে বিশ্বের তাবৎ বড় বড় ফ্যাশন ব্রান্ড। ভ্যাম্পায়ার মুভি ছাড়াও বিটল জস, ডেডপুল আর উলভারিনের মতো পোশাকে মেতেছে যেন সবাই।
নিউইয়র্ক, প্যারিস, বুয়েনস আয়ার্স, সিঙ্গাপুর সিটি, বোগোতা, সাও পাওলো, ফ্রাঙ্কর্ফুটসব বিশ্বের প্রায় সব বড় শহরে আয়োজন করা হয়েছে শোভাযাত্রার। এই শোভাযাত্রায় হাড়হিম করা সাজে সেজে জম্বি ওয়াকে অংশ নেবে বিপুল মানুষ।
সারাবাংলা/এসবিডিই