সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব
১১ জুন ২০১৮ ১৮:১৬
।। জহির উদ্দিন বাবর ।।
রমজানের শেষ দিকের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল সদকাতুল ফিতর বা ফিতরা। রোজার ত্রুটি-বিচ্যুতির ঘাটতি হিসেবে এই সদকা করা হয়। আমাদের দেশে ‘ফিতরা’ কথাটির ব্যাপক প্রচলন হলেও কোরআন-হাদিসে এটাকে সদকাতুল ফিতর, জাকাতুল ফিতর বা জাকাতে রমজান নামে অভিহিত করা হয়েছে। ফিতরা আদায়ের প্রধান সময় ঈদুল ফিতরের দিন সকালে, ঈদের জামাতে যাওয়ার আগে। তবে যাদের ফিতরা দেওয়া হয় তাদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে রমজানের শেষ দশক শুরু হওয়ার পর থেকেই সাধারণত ফিতরা আদায় করা হয়।
জাকাতের মতোই ফিতরা ইসলামের একটি আর্থিক ইবাদত। জাকাতের সঙ্গে ফিতরার পার্থক্য হলো— নিসাব বা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ ও সাড়ে ৫২ তোলা রূপার মালিক থাকা অবস্থায় একবছর অতিবাহিত হলে জাকাত ফরজ হয়; কিন্তু ফিতরার ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো শর্ত নেই। ঈদের দিন সকালে কেউ ওই পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তার ওপরও ফিতরা দেওয়া ওয়াজিব। খেজুর, পনির, যব, কিশমিশ, গম— এই পাঁচ ধরনের খাদ্যের যেকোনোটির নির্দিষ্ট পরিমাণের মূল্য নির্ধারণ করে ফিতরা আদায় করা যায়। ফিতরাদাতা তার সামর্থ্য অনুযায়ী এ বিষয়টি নির্ধারণ করবেন। আমাদের দেশে সাধারণত সর্বনিম্ন হারে ফিতরা নির্ধারণ করা হয়। যেমন— এবার সর্বনিম্ন ফিতরা নির্ধারিত হয়েছে ৭০ টাকা। মূলত নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির দিকে লক্ষ্য করে সর্বনিম্ন ফিতরা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। অধিক স্বচ্ছল ও বিত্তবান শ্রেণির জন্য সর্বোচ্চ হারে ফিতরা আদায় করা উচিত। যেমন— এবার ফিতার সর্বোচ্চ হার নির্ধারণ করা হয়েছে দুই হাজার ৩১০ টাকা।
ফিতরার অন্যতম তাৎপর্য হলো— ঈদের আনন্দে গরিব-দুঃখী মানুষদের শরিক করা। দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর মহাপুরস্কার বা আনন্দের দিন হিসেবে যে দিনটি নির্ধারণ করা হয়েছে, সেই দিনের আনন্দ যেন সার্বজনীন হয়। হাদিসে ফিতরা দিয়ে একদিনের জন্য হলেও গরিব মানুষদের অসহায়ত্ব ও মুখাপেক্ষী হওয়ার মতো দুরাবস্থা দূর করতে মুসলমানদের উৎসাহিত করা হয়েছে।
হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী ফিতরার আরেকটি গূঢ় তাৎপর্য হচ্ছে, রোজাদারের একমাসের রোজায় মান ও পূর্ণতায় যেসব বিচ্যুতি ও ত্রুটি হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ দেওয়া। এতে প্রথমত, আমাদের রোজাটি ত্রুটিমুক্ত হয়ে যাবে, দ্বিতীয়ত, দরিদ্রদের কিছুটা হলেও আর্থিক উপকার হবে। ধনীদের সম্পদে আল্লাহ তায়ালা গরিবের যেসব অধিকার রেখেছেন, এর মধ্যে ফিতরা একটি। প্রত্যেক সমর্থ মুসলমানের ওপর ফিতরা ওয়াজিব। জাকাত-ফিতরা এসব বিধান মূলত উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্যই দেওয়া হয়েছে।
ঈদে সমাজের সমর্থ শ্রেণি আনন্দ-উল্লাস করবে, আর সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণিটি তা থেকে বঞ্চিত থাকবে— সেটা ইসলাম পছন্দ করেনি। এজন্য ইসলাম রমজানে বেশি বেশি দান-সদকার তাগিদ দিয়েছে। রমজানে জাকাত আদায় করলে অধিক সওয়াবের ঘোষণা এসেছে। সদকাতুল ফিতরকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যেন ঈদের আনন্দ থেকে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোও বঞ্চিত না হয়। এজন্য ঈদে সামর্থ্যবান লোকদের উচিত নিজেদের আনন্দ সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোর সঙ্গেও ভাগাভাগি করে নেওয়া। আনন্দের ঈদে কেউ আনন্দবঞ্চিত হবে, এটা রাসুল (সা.) পছন্দ করতেন না। আমাদেরও উচিত রাসুলের এই সুন্নতটি যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করা।
লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম