স্টারলিংক ইন্টারনেটে খরচ কেমন?
২০ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:১৩
বাংলাদেশে স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার নীতিমালা চূড়ান্ত করার কাজ শুরু করেছে টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। এজন্য একটি খসড়া নির্দেশিকার কাজও শুরু হয়েছে। আর স্যাটেলাইট ইন্টারনেটকে নিয়ে আলোচনায় বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্টারলিংকের নাম আসবে না তা কি করে হয়! যেখানে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার বাংলাদেশের বাজারে ঢোকার চেষ্টা করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ ব্যবহার করে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্টারলিংক বাংলাদেশের বাজারে ঢোকার আগ্রহ দেখিয়ে যাচ্ছে বহুদিন ধরেই। সম্প্রতি জুলাই বিপ্লবের পর তাদের একটি দল ঢাকায় এসে বিনিয়োগ বোর্ডের সাথে বৈঠক করে গেছে।
মূলত সাধারণ ইন্টারনেট সেবা যেখানে পৌঁছানো যায় না সেখানে সেবা দিতে সক্ষম স্টারলিংক। বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সেবা দিতে ছয় বছর আগে মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠিয়েছে স্টারলিংক। ইন্টারনেটের গতি অনেক বেশি হওয়ায় গভীর সমুদ্র বা পাহাড়ি এলাকার মতো দুর্গম জায়গাতেও গেমিং, স্ট্রিমিং ও দ্রুত ডাউনলোড নিশ্চিত করতে পারে তারা।
তবে বাংলাদেশের সাধারণ হোম ব্রডব্যান্ড সেবার তুলনায় স্টারলিংকের সেবা ব্যয়বহুলই বটে। দেশে যেখানে হাজারখানেক টাকায় সংযোগ এবং মাসে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকায় বাসাবাড়িতে মোটামুটিমানের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যায় সেখানে ব্যক্তিগত ব্যবহারের স্টারলিংক যন্ত্রের (স্ট্যান্ডার্ড কিট) এককালীন দামই পড়বে প্রায় ৪২ হাজার টাকা (৩৪৯ মার্কিন ডলার)। আর প্রতি মাসে গ্রাহক ফি হিসেবে দিতে হবে সাড়ে ১৪ হাজার টাকার মতো (১২০ ডলার)। এছাড়া ইন্টারনেটের হাই এভেইলেভেলিটি জোনে এই দাম সর্বনিন্ম ৯০ ডলার বা ১০,৭০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই প্যাকেজ থেকে প্রতি সেকেন্ডে ২৫-১০০ মেগাবাইট গতির ইন্টারনেট মিলবে। বাংলাদেশের লোকাল আইএসপিগুলো বাসাবাড়িতে সাধারণত ৫ থেকে ৩০ মেগাবাইট গতির ইন্টারনেট সরবরাহ করে থাকে।
মোবাইল ডাটাসহ ক্ষেত্রে স্টারলিংকের সেবা ব্যয় দেশভিত্তিক মাসে ১৫০ ডলার বা আঠারো হাজার টাকা। এবং বৈশ্বিক সেবা ব্যয় ২০০ ডলার বা চব্বিশ হাজার টাকা। ব্যবসা বা হাই ডিমান্ড সেবাগ্রহীতাদের ক্ষেত্রে ‘প্রায়োরিটি’ নামে আলাদা একটা সেবা রয়েছে স্টারলিংকের। এই সেবায় ‘নেটওয়ার্ক প্রায়োরিটি’, ‘পাবলিক আইপি’ ও সেবার ক্ষেত্রে ‘বিশেষ গ্রাহক হিসেবে সেবা’ পাওয়া যায়। স্টারলিংকে ১ টেরাবাইট গতির প্রায়োরিটি সেবা ব্যয় ২৫০ ডলার বা প্রায় ৩০ হাজার টাকা। ২ টেরাবাইট গতির প্রায়োরিটি সেবা ব্যয় ৫০০ ডলার বা প্রায় ৬০ হাজার টাকা। আর ৬ টেরাবাইট গতির প্রায়োরিটি সেবা ব্যয় ১৫০০ ডলার বা এক লাখ ৭৯ হাজার টাকা।
স্টারলিংকের একটি কানেকটিং প্যাকেটে স্টারলিংক রিসিভার, কিকস্ট্যান্ড, রাউটার, তার ও পাওয়ার সাপ্লাই থাকে। স্টারলিংকের অ্যান্টেনা ইলেকট্রনিক ফেজড অ্যারে, যা ১১০ ডিগ্রি পর্যন্ত বাঁকানো যায়। এর ওজন প্রায় ২ কেজি ৯০০ গ্রাম, কিকস্ট্যান্ডসহ ৩ কেজি ২০০ গ্রাম। এতে আছে এনভায়রনমেন্টাল রেটিং আইপি ৬৭ টাইপ ৪ অ্যান্টেনা, যা হিমাঙ্কের নিচে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং হিমাঙ্কের ওপরে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেশ কাজ করে। স্টারলিংক চালাতে শক্তি খরচ হয় ৭৫ থেকে ১০০ ওয়াট। স্টারলিংক ওয়াই–ফাই রাউটারের সঙ্গে ২৩৫টি যন্ত্র যুক্ত করার সুযোগ আছে।
স্টারলিংকের স্যাটেলাইটের ভর অন্য সব স্যাটেলাইটের চেয়ে বেশ কম। স্টারলিংকের নেভিগেশন সেন্সর প্রতিটি উপগ্রহের অবস্থান ও উচ্চতা বিবেচনা করে ব্রডব্যান্ড সেবা দেয়। অপটিক্যাল স্পেস লেজার ব্যবহার করে স্টারলিংক। প্রতিটি স্টারলিংক স্যাটেলাইটে তিনটি স্পেস লেজার (অপটিক্যাল ইন্টারস্যাটেলাইট লিংক বা আইএসএলএস) রয়েছে। এই লেজারের মাধ্যমে ২০০ গিগাবাইট পর্যন্ত ডেটা পাঠানোর কাজ করে। স্টারলিংক গ্রাহকদের বেশি ব্যান্ডউইডথের সংযোগ দেওয়ার জন্য স্যাটেলাইটে পাঁচটি উন্নত কু-ব্যান্ড ফেজড অ্যারে অ্যান্টেনা ও তিনটি ডুয়াল-ব্যান্ড (কা-ব্যান্ড ও ই-ব্যান্ড) অ্যান্টেনা ব্যবহার করে।
স্টারলিংকের বেশির ভাগ স্যাটেলাইটের ইন্টারনেট–সেবা একক জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট থেকে আসে। যা ৩৫ হাজার ৭৮৬ কিলোমিটার ওপর থেকে গ্রহকে প্রদক্ষিণ করে। ব্যবহারকারী ও স্যাটেলাইটের মধ্যে ডেটা টাইম অনেক বেশি হয়, একে লেটেন্সি বলে। এতে ইন্টারনেট–সেবা পাওয়া কঠিন হয়। অন্যদিকে স্টারলিংক হাজার হাজার উপগ্রহের একটি নক্ষত্রমণ্ডল তৈরি করছে, যা পৃথিবীর অনেক কাছাকাছি প্রায় ৫৫০ কিলোমিটার দূর থেকে প্রদক্ষিণ করছে। নিম্নকক্ষপথে থাকার কারণে লেটেন্সি উল্লেখযোগ্য হারে কম। এতে দ্রুতগতির ইন্টারনেট–সেবা পাওয়া যায়।
ইতোমধ্যে আগারগাঁওয়ের বিসিএস কম্পিউটার সিটির রায়ানসের আউটলেটে স্টারলিংক রিসিভার প্রদর্শন করা হচ্ছে। এই রিসিভার নিয়ে বেশ আগ্রহ তরুণ প্রজন্মের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে। রায়ানসের একজন বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, দেশে এখনও স্টারলিংক ব্যবহার বা কেনার কোনও সুযোগ নেই। রিসিভারটি কেবল প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে।
সারাবাংলা/এসবিডিই