উৎসবে উচ্ছ্বসিত হই আবার ।। সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
১৬ জুন ২০১৮ ০৯:২৬
“This is a day of celebration!
Today, we are divorcing the past
and marrying the present.
Dance,
and you will find God
in every room.
Today, we are divorcing resentment
and marrying forgiveness.
Sing,
and God will find you
in every tune.
Today, we are divorcing indifference
and marrying love.
Drink, and play that tambourine
against your thighs.
We have so much celebrating to do!”
― Kamand Kojouri
উৎসব দু:খকে ছেড়ে সুখকে আলিঙ্গন করে, উদাসীনতাকে ছেড়ে উচ্ছলতাকে জড়িয়ে ধরে। আজ ঈদ। বেশ কিছুদিন আগে থেকেই অবশ্য ঈদের ‘আসছেটা’ শুরু হয়ে গেছে, যদিও এবার বিশ্বকাপ ফুটবল ঈদকে অনেকটাই পাশে ফেলে রখেছে। তবু্ও চতুর্দিকে ‘ঈদ আসছে’ বলে একটা আনন্দ ছিল এবং আজ সেই দিনটা এসেই গেছে।
আমাদের ছোট বেলার সেই ঈদ আর আসেনা। খেলা করে, খেয়ে শুয়ে এবং রাত জেগে পরীক্ষার পড়া করে, কবে যে স্কুলের জীবনটা চলে গেল! তখন থেকে আর ঈদ বুঝিনি। আমাদের জন্য কোন ব্র্যান্ডেড জামা ছিলনা, কিন্তু ঈদ আসছে, ঈদ আসছে বলে একটা রোমাঞ্চ ছিল। কলোনির কোন জায়গায় আমাদের আড্ডা হবে সেটা ঠিক করা, সকলে মিলে এলাকাকে রাঙিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা- সবই ছিল। ঈদের সময় বৃষ্টি নয়, বারবার চেয়েছি মেঘহীন চকচকে আকাশ যেন ঈদের দিনটায় থাকে।
কিন্তু বড় হতেই সব যেন কোথায় হারাল। সেই মিষ্টি মতো প্রতীক্ষাটা আর নেই। এখন ঈদ যেন আসেনা, টেনে আনা হয়। চার পাশে তড়িঘড়ি একটা কৃত্রিম ব্যস্ততা। স্বজনের কাছে যাওয়া মানুষের দুর্ভোগ বার্তাকক্ষে আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। আমাদের আচ্ছন্ন করে রাখে কোন খাতের কোন শ্রমিকের বেতন বা উৎসব ভাতা জোটেনি তার খবর পরিবেশনে। তাই ঈদ আসার দিনগুলো এখন এক ভয়ঙ্কর শাস্তি সেজে অতিষ্ঠ করে মারে আমাদের। আমরা দেখতে থাকি কত মানুষ আবার স্বজন নয়, নিজের মত পৃথক থাকতে উড়াল দেয় আকাশে। কোথায় দুর্ঘটনায় কত প্রাণ হারালো কিনা, সেই আতংকও ঈদ আনন্দের ছন্দ কাটে।
বড়, ছোট শপিং মল, ফ্যাশন আউটলেট – সেই কবে কবে থেকে ঈদের জন্য আস্তিন গুটিয়ে অপেক্ষা করে। গ্রা্ম বা শহর, ঈদ মানেই বিদেশি ব্র্যান্ড-এর জামা, কাপড় আর ফেসবুকে মাতামাতি।
ঈদ মানে টিভি চ্যানেলগুলোর কাছে তিনদিন নয় – এখন সাতদিন বা দশদিন। হাজারো নাটক, সিনেমা, গানসহ নানা অনুষ্ঠান। বিজ্ঞাপনের আক্রমণে কেউ দেখলো কি দেখলোনা, কি আসে যায়?
ঈদ সংখ্যারও কম নেই। আগে শুধু সাপ্তাহিক বা ম্যাগাজিনগুলো ঈদ সংখ্যা করতো। এখন কেউ বাদ যায়না। দৈনিক করে, অনলাইন পোর্টালও করে। এরা আরও আগে থেকে নেমে যায়। ঈদে মানুষ নাটক সিরিয়াল দেখে কতটুকু, আর সাহিত্য পড়ে কতটুকু একটা গবেষণা নিশ্চয়ই হতে পারে। গল্প-উপন্যাসগুলোর প্লট কতটা ঈদের ছুটি কেন্দ্রিক বা জীবন কেন্দ্রিক তার একটা আলোচনাও হতে পারে।
ঈদে এখন সবই হয়্, আমরা সবই দেখি, কিন্তু কেবলই মনে হয় কি যেন নেই। কোথায় যেন কি লুকিয়ে গেছে, আর আসেনা। ঈদ স্পর্শ করে, কিন্তু তাতে সুখ মেলে না। উত্তেজনাটাও বড় বেতালে বাজে। খুব কাছের কী যেন একটা কোথায় হারিয়ে গেছে, আর কোনও দিন ফিরবে না বলে খুব মন কেমন করে।
রমজানের শেষবেলাতে প্রতিবার সেই চেনা ছবি। আকাশটা যেন ডাকে আমাদের। রোজার শেষ হয় এবং এক দিন সন্ধ্যায় আপনা হতেই সম্বিত ফিরে আমাদের। বাড়ি বাড়ি থেকে সেই গান ভেসে আসে। বিদ্রোহী কবির লেখা “ও মন্ রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশীর ঈদ্।/ তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন্ আসমানী তাগিদ্”।
ঈদ ধনী-গরিব সব মানুষের মহামিলনের বার্তা বহন করে। রমজান মাসে সংযম ও আত্মশুদ্ধি অনুশীলনের পর ঈদুল ফিতর ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষকে আরও ঘনিষ্ঠ বন্ধনে আবদ্ধ করে, গড়ে ওঠে সবার মধ্যে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও ঐক্যের বন্ধন। এসব আমরা বলি। বলার চেষ্টা করি যে, এটাই ঈদের তাৎপর্য। কিন্তু আজকের বাংলাদেশ কোথায় যেন এসব থেকে অনেক দূরে।
ঈদ যে আনন্দের বার্তা বয়ে আনে, তার মর্মমূলে থাকে শান্তি ও ভালোবাসা। ঈদ আমাদের সামষ্টিক জীবনে মিলন ও শুভবোধের চর্চার দৃষ্টান্ত। কিন্তু এই ঈদের আগে আগেই প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চুর খুন বা কক্সবাজারে যুবলীগ নেতা একরামের স্ত্রী, কন্যার আর্তনাদ আমাদের ভারাক্রান্ত করে রেখেছে।
উৎসব খুব ভাল জিনিস, উৎসব মানুষকে খুশি করে, উৎসবে উচ্ছ্বসিত করে। রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক হানাহানি, প্রাণভয়ে পলায়নের বীভৎসতা যেন আমাদের বাধ্য না করে নিচু সুরে বাঁধতে উৎসবের গান। বিরুদ্ধ মত, পথ নিয়ে যুক্তির লড়াই হোক, জীবন সংহার আর না হোক।
সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, এডিটর ইন চিফ, সারাবাংলা.নেট ও জিটিভি
সারাবাংলা/এমএম