Saturday 22 Feb 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্মার্ট হোম প্রযুক্তি

মো. জাহিদুল ইসলাম
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:১৬

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দৈনন্দিন ব্যবহারের অনেক কিছুই স্মার্ট হয়ে উঠছে। বর্তমান যুগ প্রযুক্তির স্বর্ণযুগ। প্রতিদিনই নতুন নতুন প্রযুক্তির আবিষ্কার এবং এদের ব্যবহার আমাদের জীবনকে করেছে আরামদায়ক। এরই ধারাবাহিকতায় স্মার্ট হোম প্রযুক্তি মানুষের ঘরবাড়ি ব্যবস্থাপনায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। আমাদের ব্যবহৃত ঘর যদি প্রযুক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং আমাদের একটি স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপন করতে সহায়তা করে তাহলে সেটাই হলো আমাদের আধুনিক স্মার্ট হোম। বর্তমান বিশ্বে নিত্যনতুন প্রযুক্তিপণ্যের দিকে ঝুঁকে পড়া বা প্রযুক্তিবান্ধব পরিবেশে বসবাস এখন আর বিলাসিতা নয়। বরং এটি জীবনযাপনের মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করছেন।

বিজ্ঞাপন

বর্তমান প্রজন্মের কাছে স্মার্টহোম তেমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্মার্ট হোম প্রযুক্তি আধুনিক জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। এই স্মার্ট হোম প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত আমাদের জীবনকে যেমন সহজ করছে ঠিক তেমনি সুরক্ষিত এবং সাশ্রয়ী করে তুলছে। ভবিষ্যতে এই স্মার্ট হোম প্রযুক্তির আরও উন্নতি এবং প্রসার ঘটবে খুব দ্রুত গতিতে। শুধু বাইরের জগৎই নয় প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষের ঘর-গৃহস্থালিতেও পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে এই স্মার্ট হোম প্রযুক্তির মাধ্যমে। স্মার্ট বাড়ি বা প্রযুক্তিনির্ভর ঘরবাড়ির ধারণা মূলত শুরু হয় ১৯৮০ সালে। কিন্তু অনেকের কাছেই এই স্মার্ট হোমের ধারণাটি এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে। সেই সঙ্গে মানুষ পরিচিত হচ্ছে নানা ধরনের নতুন প্রযুক্তিনির্ভর গ্যাজেটের সঙ্গে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনমানকে আরও সহজ ও সুন্দর করে তুলছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারসমূহ ।

বিজ্ঞাপন

মূলত স্মার্ট হোম এমন কিছু গ্যাজেট, সেন্সর এবং ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির সমন্বয়ে গঠিত যেগুলো একটি সেন্ট্রাল কম্পিউটার কন্ট্রোল সিস্টেম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রযুক্তিটি হতে পারে কম্পিউটার কন্ট্রোলারটি কোনো বিশাল কম্পিউটিং সেটআপ বা শুধু একটি স্মার্টফোন অথবা হতে পারে এটি সামান্য একটি সুইচ। প্রত্যেকটি সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করার জন্য এই হোম সিস্টেম এর মধ্যে থাকে বিভিন্ন ধরনের অত্যাধুনিক সেন্সর। যেমন হিট সেন্সর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘরের তাপমাত্রা চেক করে এবং সে অনুসারে এসি নিয়ন্ত্রণ করবে। আবার ফটোইলেকট্রিক সেন্সর অন্ধকার মেপে ঘরের বাতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু করে দেবে। অন্যদিকে রান্নাঘরের ব্যবহৃত যন্ত্রগুলো হবে বাস্তব বুদ্ধিসম্পন্ন। এর ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাপমাত্রা পরিবর্তিত হবে রান্না করা খাবারের ধরন অনুযায়ী। এছাড়াও আরো থাকবে রোবট ভ্যাকুয়াম ক্লিনার যেটি সয়ংক্রিয় ভাবে ঘরের ময়লা খুঁজে খুঁজে বের করে পরিষ্কার করে দেবে। আবার জড়ো করা নোংরা ময়লা সঠিক জায়গায় ফেলে রেখে আসবে। অপরদিকে শরীরের সুস্থতা নির্ণয়ের জন্য স্মার্ট বডি অ্যানালাইজারের ব্যবস্থা থাকবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। এই স্মার্ট বডি অ্যানালাইজার যন্ত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে শরীরের সব কিছুরই খোঁজ দেবে নিখুঁত ভাবে অল্প সময়ের মধ্যে। এভাবে প্রত্যেকটি যন্ত্রপাতি একটি নির্দিষ্ট সেন্ট্রাল সিস্টেমটির সঙ্গে সংযুক্ত থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করবে।

স্মার্ট ডিভাইসগুলো সেন্সরের মাধ্যমে পরিবেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। স্মার্ট ডিভাইসের মাধ্যমে অনেক কাজ সহজে সম্পন্ন করা যায়। এভাবে স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিদ্যুতের অপচয় রোধ করা যায়। আবার স্মার্ট ক্যামেরা ও স্মার্ট লকের মাধ্যমে ঘরের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়। ব্যবহারকারী ঘরে না থাকলেও স্মার্টফোনের মাধ্যমে নিজের বাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন এই স্মার্ট হোম প্রযুক্তি ব্যবস্থা মাধ্যমে। স্মার্টফোন অ্যাপ বা ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট (যেমন Google Assistant, Alexa) ব্যবহার করে স্মার্ট হোম প্রযুক্তির ডিভাইসগুলো পরিচালনা করা হয়। স্মার্ট হোম কাজ করার জন্য স্মার্ট ডিভাইস অর্থাৎ ইলেকট্রনিক যন্ত্র যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ করে। যেমন স্মার্ট লাইট, স্মার্ট থার্মোস্ট্যাট, স্মার্ট ক্যামেরা ইত্যাদি। স্মার্ট ডিভাইসগুলো একটি নির্দিষ্ট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে। এটি হতে পারে Wi-Fi, Bluetooth বা Zigbee প্রযুক্তি। স্মার্ট হোম নিয়ে বিশেষজ্ঞদের ভাবনার শেষ নেই। বিজ্ঞানীদের চিন্তায় স্মার্ট বাড়িতে এমন একটি সংবেদনশীল দেয়াল থাকবে যার বদৌলতে ঘর থেকে বের হতে গেলে, লাইট-ফ্যান বন্ধ করতে সুইচ টিপতে হবে না। বরং নিজে থেকেই সব বন্ধ হয়ে যাবে। এসব দেয়ালে বিশেষ ধরনের হেয়ারিং এবং থিংকিং সেন্সর থাকবে। নিশ্বাসের শব্দও বুঝতে পারবে বিশেষভাবে তৈরি এই দেয়াল। মুখ দিয়ে কোনো কথা বলার প্রয়োজন হবে না। দেয়ালই বুঝে নেবে ঘরের কোন পরিস্থিতি ব্যবহারকারীর জন্য উত্তম। ঘুমাতে যাওয়ার সময় কষ্ট করে আর লাইট, ফ্যান অফ কিংবা অন করার প্রয়োজন পড়বে না। সংবেদনশীল দেয়ালই বুঝে নেবে ঘুম বা আরামের জন্য ঘরের পরিবেশ কেমন হওয়া দরকার। নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘরের দেয়াল জীবন্ত হয়ে উঠবে। যে কোনো কম্পন বা শব্দ শনাক্ত করতে পারবে।

এদিকে স্মার্ট বাড়িতে কোনোভাবেই মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নষ্ট হবে না যদি ক্যামেরার ব্যবহার বাইরের নেটওয়ার্কের মধ্যে সংযুক্ত না রেখে ঘরের নেটওয়ার্কের সীমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যায়। এছাড়া ছোট ছোট চিপের মাধ্যমে এটিকে শুধু ঘরের বাসিন্দাদের কণ্ঠস্বরই শনাক্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে পারলে এটি আরো বেশি গোপনীয়তা বজায় রাখতে সক্ষম হবে। স্মার্ট হোমে কিছু সিকিউরিটি দুশ্চিন্তাও রয়েছে। ভুল করেও যদি হ্যাকার সিস্টেম নেটওয়ার্ক অ্যাক্সেস পেয়ে যায় তাহলে সে বাড়ির সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। তখন সিকিউরিটি অ্যালার্ম অফ করে সহজেই বাড়িতে ঢুকে পড়তে পারবে। তাই অবশ্যই স্মার্ট হোম ব্যবহার শুরুর আগে সিকিউরিটি সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত হতে হবে।

লেখক: নেটওয়ার্ক টেকনিশিয়ান (আইসিটি সেল), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এএসজি

প্রযুক্তি ফিচার মো. জাহিদুল ইসলাম স্মার্ট হোম প্রযুক্তি

বিজ্ঞাপন

ঝড়ো বৃষ্টিতেও থামেনি পাঠক
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩:১৬

আরো

সম্পর্কিত খবর