Tuesday 24 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দুই শাখায় নোবেল জয়ী প্রথম নারী ম্যারি কুরি

ফারহানা নীলা
২২ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:২১

ম্যারি কুরি ছিলেন বিশ্বের প্রথম নারী যিনি পদার্থবিজ্ঞান এবং রসায়ন উভয় ক্ষেত্রেই নোবেল জিতেছিলেন। ১৯০৩ সালে নোবেল জিতেছেন পদার্থবিদ্যায়। এবং ১৯১১ সালে নোবেল জিতেছেন রসায়নে। আরেকটি কারনেও ম্যারি পরিচিত ছিলেন। ম্যারির পরিবার বিশ্বের একমাত্র পরিবার, যারা পাঁচটি নোবেল জিতেছেন।

ম্যারির জন্ম পোল্যান্ডের ওয়ারশে নামক একটি শহরে। ফ্রান্স-এর কোনো ইউনিভার্সিটি থেকে পিএচডি অর্জন করা প্রথম নারীও ছিলেন এই ম্যারি কুরি।

পদার্থবিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করার পর ‘দ্য সোসাইটি ফর দ্য এনকারেজমেন্ট অফ ন্যাশনাল ইন্ডাস্ট্রি’-এর সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে তার বৈজ্ঞানিক জীবনের সূচনা। এখানে তিনি মূলত নানাবিধ পদার্থের চৌম্বক ধর্ম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিলেন। এসময়েই তার সঙ্গে বিখ্যাত ফরাসি পদার্থবিদ পিয়েরে কুরির পরিচয় হয়। পরবর্তীতে এই পিয়েরে কুরির সঙ্গেই ম্যারি কুরি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

১৯০৩ সালের কথা। ম্যারি ও তার স্বামী পিয়েরে কুরি, একসাথে বিকিরণ আবিষ্কার করেছিলেন। আর এই আবিষ্কারের জন্য ম্যারির স্বামী পিয়েরে কুরিকে নোবেল কমিটি নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছিল। কিন্তু নারী হওয়ার কারণে ম্যারিকে নোবেলের জন্য মনোনীত করতে চায়নি। পিয়েরে এ বিষয়ে আপত্তি জানান। এবং তিনি নোবেল গ্রহণ করতেও আপত্তি জানান। পরবর্তীতে নোবেল কমিটি ম্যারিকেও একই কাজের জন্য নোবেল বিজয়ী হিসেবে মনোনীত করে।

ম্যারি ও পিয়েরে দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় দুই মেয়ে। ১৮৯৭ সালে বড় মেয়ে আইরিন ও ১৯০৪ সালে ছোটো মেয়ে ইভ।

১৯০৬ সালে মেরির স্বামী পিয়েরে এক দুর্ঘটনায় মারা যান। ল্যাবে সারাদিন ব্যস্ত থাকা মেরির পক্ষে দুটি মেয়েকে বড় অনেক কঠিন ছিল। সেই সময়ে প্যারিসে মেয়েদের জন্য যে ধরনের স্কুলের শিক্ষা পাওয়া যেত তা মেরি অপছন্দ করতেন। তাই তিনি তার মেয়েদের বাড়িতেই পড়াতেন।

১৯১১ সালে রেডিয়াম এবং পোলোনিয়াম আবিষ্কারের জন্য দ্বিতীয়বার রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন ম্যারি কুরি। এই রেডিয়াম, বর্তমানে ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এই রেডিয়ামেরই ক্রমাগত এক্সপোজার মেরির স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটায়। সে কারণেই ১৯৩৪ সালে ৬৬ বছর বয়সে মারা যান দুইবারের নোবেল বিজয়ী নারী ম্যারি কুরি।

আমেরিকা ম্যারিকে সম্মান জানায় এবং তার দেশে পাওয়া এক গ্রাম রেডিয়াম তাকে দান করার ঘোষণা দেয়। মেরি বলেছিলেন যে রেডিয়ামটি তার প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া উচিত, তাকে নয়, যাতে তার মৃত্যুর পরে এটি তার পরিবারের দখলে না থাকে।

পরবর্তীতের ম্যারির দুই কন্যা, যারা তাদের মায়ের ছায়ায় বেড়ে উঠেছে, তারাও অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। বড় মেয়ে আইরিন ১৯৩৫ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছিলেন। অন্যদিকে ম্যারির ছোট মেয়ে ইভ, যিনি শৈশব থেকেই শিল্প ও লেখালেখিতে আগ্রহী ছিলেন, তাকে মনোনীত করা হয়েছিল যুদ্ধ সাংবাদিকতার জন্য পুলিৎজার পুরস্কারে। ইভ ইউনিসেফের ‘ফার্স্ট লেডি’ হন। আর এই ইউনিসেফ (ইভের স্বামী) ১৯৬৫ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। আর এভাবেই পৃথিবীতে একটি মাত্র পরিবার- যার সকল সদস্যই নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। পিতা-মাতা এবং দুই কন্যা এমন অসামান্য প্রতিভা সমৃদ্ধ পরিবার পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয়টি নয়।

আর ম্যারি কুরি, যিনি নারী হয়ে দুই দুইটি নোবেল জিতেছেন, তার অবদান এখনও সারা বিশ্বে রয়েছে। ক্যানসারসহ আরো অনেক বড় বড় চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় ম্যারির আবিষ্কার।

সারাবাংলা/এফএন/এএসজি

নোবেল জয়ী পিয়েরে কুরি ম্যারি কুরি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর