মোবাইল অ্যাপসের গুরুত্ব
৩০ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:১৪
বর্তমান যুগে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। বিশ্বে প্রযুক্তির অগ্রযাত্রা মোবাইল অ্যাপ শিল্পকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে। মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট এবং এর ভবিষ্যত একটি অগ্রগণ্য ক্ষেত্র। এই মোবাইল অ্যাপ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটি শুধুমাত্র যোগাযোগ সহজতর করেছে তা নয় বরং এই মোবাইল অ্যাপ প্রযুক্তি ব্যবসা, শিক্ষা, বিনোদন, স্বাস্থ্যসেবা এবং আরও অনেক ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছে। এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে ই-কমার্স, অনলাইন ব্যাংকিং থেকে স্বাস্থ্যসেবা, প্রতিটি ক্ষেত্রেই মোবাইল অ্যাপের ব্যবহার বেড়েছে বহুগুণ। সম্প্রতি মোবাইল অ্যাপ বাজারের অভূতপূর্ব সম্প্রসারণ নতুন উদ্ভাবনের পথকে প্রতিনিয়তই সুগম করছে। গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশন অ্যাসোসিয়েশন ইনটেলিজেন্সের (জিএসএমএ) সাম্প্রতিক জরিপে অনুযায়ী বর্তমানে পৃথিবীর ৪৬০ কোটি মানুষ মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৭ শতাংশ।
বর্তমান বিশ্ব ফোর-জি, ফাইভ-জির পর সিক্স-জি নিয়ে কাজ করার প্রস্তুতিমূলক কর্মকাণ্ড শুরু করে দিয়েছে। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে এই সিক্স-জির গতি হবে ফাইভ-জির চেয়ে ৮ হাজার গুণ বেশি। প্রতি সেকেন্ডে গতি হবে ১ টেরাবাইট। সম্প্রতি ৬ জি প্রযুক্তির প্রসার, ক্লাউড-ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন এবং ব্লকচেইন নিরাপত্তার উন্নয়ন ইত্যাদি মোবাইল অ্যাপ বাজারের খাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সার্বিকভাবে মোবাইল অ্যাপ শিল্পের এ অগ্রযাত্রা বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হিসাবে কাজ করছে। প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এ খাত আগামী এক দশকে আরও ব্যাপক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হবে।
এদিকে বিশ্বব্যাপী মোবাইল অ্যাপ বাজারের অন্যতম বড় অংশজুড়ে রয়েছে মোবাইল গেমিং অ্যাপস। অপরদিকে ডিজিটাল বিনোদন শিল্পের বিকাশও মোবাইল অ্যাপ বৃদ্ধির অন্যতম চালিকা শক্তি হয়ে উঠেছে। ভিডিও স্ট্রিমিং, অন-ডিমান্ড কন্টেন্ট এবং সংগীত স্ট্রিমিং অ্যাপগুলোর চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে বিশ্বজুড়ে। বর্তমান আধুনিক যুগে মানুষ ইন্টারনেট এবং স্মার্টফোন প্রতিদিনই কোন না কোন ভাবে ব্যবহার করছেন। এর মূল কারণ হলো এগুলোর ব্যবহার মানুষের জীবনকে করেছে অনেক সহজ। ইন্টারনেট হচ্ছে প্রযুক্তিভিত্তিক তথ্যের এক বিশাল ভাণ্ডার। পৃথিবীর সকল কম্পিউটার বিশেষ প্রক্রিয়ায় নেটওয়ার্কের মাধ্যমে একটি অন্যটির সাথে যুক্ত হয়ে এই ইন্টারনেট তৈরি করেছে। অন্যদিকে স্মার্টফোন হচ্ছে এক বিশেষ ধরণের মোবাইল ফোন। এই স্মার্ট মোবাইল ফোন যা দিয়ে যোগাযোগ করার পাশাপাশি আরও বিভিন্ন ধরণের জটিল কাজ সম্পাদন করা যায়। যেগুলো সাধারণ মোবাইল ফোন দিয়ে করা যায় না। যেমনঃ ইন্টারনেট ব্যবহার করা, ইমেইল পাঠানো, ইউটিউবে ভিডিও দেখা, দিক নির্ণয় ইত্যাদি। আবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও মেশিন লার্নিং (ML) মোবাইল অ্যাপকে যেন দিন দিন নতুনভাবে আধুনিকায়ন করছে। চ্যাটবট ও ভয়েস-অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রাহকসেবা দিন দিন আরও উন্নত হচ্ছে। এ ছাড়া অও-ভিত্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে সাইবার হুমকি হ্রাস পাচ্ছে যা ব্যবহারকারীদের জন্য নিরাপদ ডিজিটাল অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করছে। ভবিষ্যতে, Augmented Reality (AR) এবং Virtual Reality (VR) প্রযুক্তির সংযোজন অ্যাপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরও নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। আর তাই ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের প্রতি মানুষের ঝোঁক দিন দিন বেড়েই চলেছে।
প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। নতুন টুলস এবং ফ্রেমওয়ার্কের সঙ্গে তাল মেলানো একটি চ্যালেঞ্জ। মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল। এদিকে বর্তমানে এই মোবাইল অ্যাপ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের উন্নত অভিজ্ঞতা প্রদান করছে। এছাড়াও ভবিষ্যতে ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT) ডিভাইসের সঙ্গে মোবাইল অ্যাপের ইন্টিগ্রেশন বাড়বে। ফলশ্রুতিতে এই মোবাইল অ্যাপ স্মার্ট হোম এবং স্মার্ট ডিভাইস ব্যবস্থাপনায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এদিকে এই মোবাইল অ্যাপ প্রযুক্তি মোবাইল গেমিং এবং শিক্ষা খাতেও বিপ্লব ঘটাচ্ছে। ৫ এবং ৬জি নেটওয়ার্কের উন্নয়নের ফলে দ্রুততর এবং নির্ভরযোগ্য অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট সম্ভব হবে। অপরদিকে ভবিষ্যতে ক্রস-প্ল্যাটফর্ম ডেভেলপমেন্ট আরও জনপ্রিয় হবে যা সময় এবং খরচ সাশ্রয়ে সহায়ক। স্মার্টফোন মানেই অ্যাপ নির্ভরশীলতা। সব ধরনের কাজের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা অ্যাপ। কিন্তু এর মধ্যে থেকে কোন অ্যাপ রয়েছে যেগুলো ক্ষতিকর। এই ক্ষতিকর অ্যাপগুলো আমরা অনেকেই ধরতে পারিনা। যার ফলে ব্যবহারকারীদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। এদিকে সাইবার সিকিউরিটি হুমকি দিন দিন বাড়ছে। তাই বর্তমানে মোবাইল অ্যাপ ব্যবহারকারীদের ডেটা সুরক্ষিত রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অপরদিকে ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ার ভয় থাকে। তাই অ্যাপগুলো সবসময় যাচাই করে ডাউনলোড করা উচিত। অনেক সময় বেশ কিছু অ্যাপ গোপনে ইনস্টল হয়ে থাকে ফোনে। তাই গুগল প্লে স্টোরে অবশ্যই সেটি স্ক্যান করে নেওয়া উচিত। অনেক সময় মোবাইলে ফ্রি অ্যাপ পেলেই আমরা ডাউনলোড করে ফেলি। কিন্তু এই সব অনেক অ্যাপস রয়েছে যেগুলো মোবাইলের জন্য উপকারী নয়। কিছু কিছু অ্যাপ মোবাইলের জন্যও বেশ ক্ষতিকর। সে সব ক্ষতিকর অ্যাপগুলোর বিষয়ে সব সময় ব্যবহারকারীদের সতর্ক থাকতে হবে। মোবাইল অ্যাপের ডেভেলপমেন্ট আমাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছে এবং ভবিষ্যতে এর প্রভাব আরও বাড়বে। আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার সুযোগ তৈরি করছে। প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্টও ক্রমাগত উন্নত হচ্ছে। এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে আরও সহজ এবং উন্নত করার পাশাপাশি ভবিষ্যকেও করছে উজ্জ্বল।
লেখক: নেটওয়ার্ক টেকনিশিয়ান (আইসিটি সেল), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এএসজি