তাৎপর্যময় ইবাদত হজ
১৭ আগস্ট ২০১৮ ১২:২৪
।। জহির উদ্দিন বাবর।।
জিলহজ মাসের নির্দিষ্ট তারিখে পবিত্র বায়তুল্লাহ বা কাবাঘর প্রদক্ষিণ, আরাফাত ময়দানের মহাসম্মিলনে যোগদানসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনের নাম হজ। এটি ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ। হজ পালনকারীকে এ সময় অশ্লীল-পাপাচার, যুদ্ধ-বিগ্রহ, যৌনমিলন ইত্যাদি পার্থিব কাজ থেকে বিরত থাকতে হয়। হজ পালনের সময় একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন থাকতে হয়। একদিকে একনিষ্ঠ ইবাদাত-বন্দেগি অন্যদিকে নিরহঙ্কার, অনাড়ম্বর ও নির্মোহ জীবনযাপনের মাধ্যমে হজ পালনকারীর আত্মা ষড়রিপুর কুপ্রভাব থেকে কলুষমুক্ত ও বিশুদ্ধ হয়।
হজের মাধ্যমে যেমন আত্মার উন্নতি সাধিত হয় তেমনি গোনাহ থেকে মুক্তিও ঘটে। হাদিসে আছে, পানি যেমন ময়লা-আবর্জনা দূর করে তেমনি হজও গোনাহ দূর করে।’ এমনকি হজ করার পর মানুষ সম্পূর্ণরূপ পাপমুক্ত হয়ে যায়, যেমন মাতৃগর্ভ থেকে জন্মের পর হয়ে থাকে।
হজ শুধুই ইবাদাত নয়, বিশ্বভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাপক। হজের সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ পবিত্র মক্কা নগরীতে একত্র হয়। ভাষা-বর্ণের ভিন্নতা, সাংস্কৃতিক-জাতীয় পরিচয়ের পার্থক্য ও ভৌগোলিক দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও বিশ্বমুসলিমের ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত ও সুসংহত হয় পবিত্র হজ উদযাপনে। বিশ্বমুসলিমের পারস্পরিক দুঃখ-অভাব, অভিযোগ-সমস্যা সম্পর্কে অবগত হওয়া ও তার সমাধানের সুযোগ হয় পবিত্র হজের বিশ্বসম্মিলনে।
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও রাজনৈতিক সংহতিতেও হজের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আরাফাত ময়দানে অবস্থান হজের অন্যতম জরুরি কাজ। এর প্রধান উদ্দেশ্য সমবেত বিশ্বমুসলিমের করণীয়-বর্জনীয় সম্পর্কে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের দিক-নির্দেশনা প্রদান। মহানবী সা.-এর হজ থেকে এ শিক্ষাই পাওয়া যায়। তিনি বিদায় হজের সময় আরাফাত ময়দানে উপস্থিত মুসলিমদের উদ্দেশে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিকসহ বিভিন্ন বিষয়ের দিকনির্দেশনা দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছেন।
হজের প্রতিটি বিধানেই রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও নিজস্ব ঐতিহ্য। কাবাঘর প্রদক্ষিণ ও পশু কোরবানির মাধ্যমে হজরত ইবরাহিম ও ইসমাইলের আদর্শ-ত্যাগের প্রতি প্রকাশ করা হয় গভীর শ্রদ্ধা। জামারায় পাথর নিক্ষেপের সঙ্গে জড়িয়ে আছে শয়তানের প্রতি বালক ইসমাইলের অবজ্ঞার নিদর্শন। আবার সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে দৌড়ানোর মধ্যে নিহিত আছে শিশুপুত্র হজরত ইসমাঈলের প্রতি বিবি সারার ব্যাকুলতার ঘটনা। প্রকৃতপক্ষে হজ একটি ঐতিহ্যবাহী অনন্য ফরজ ইবাদাত ও বিশ্বমুসলিম সম্মিলন।
প্রতিবছর হজ উপলক্ষে বিশ্ব মুসলিমরা একত্রিত হন পবিত্র ভূমিতে। এর মাধ্যমে ইসলামের সংঘবদ্ধতার গুরুত্ব ফুটে উঠে। পবিত্র কোরআনে ইসলামের রশিকে সম্মিলিতভাবে আঁকড়ে ধরার কথা বলা হয়েছে। হজের মাধ্যমে আমরা এই শিক্ষাটুকু পাই। এখান থেকে মুসলিম উম্মাহ পরবর্তী জীবনের পাথেয় সংগ্রহ করতে পারেন। এই সম্মিলন মুসলমানদের ব্যক্তিগত জীবনে যেমন প্রভাব ফেলে তেমনি সামষ্টিক জীবনকেও দারুণভাবে প্রভাবিত করে। হজের বহুমুখি শিক্ষা ধারণ করলে মুসলিম উম্মাহর সুখ-সমৃদ্ধির পথ খুলে যাবে সেটা জোর দিয়েই বলা যায়।
লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম