অমুসলিমরাও পারেন রমজানের মহত্বকে বড় করে তুলতে
৯ মে ২০১৯ ১৩:৪৭
রমজান বা রোজা, বাংলায় আমরা এমনটিই বলি। তবে শব্দটির প্রকৃত আরবি উচ্চারণ রামাদ্বান— বলা হয় রামাদ্বান করিম। রমজান সিয়াম সাধনার মাস। প্রতিটি মুসলমানের জন্য রোজা রাখা ফরজ। অর্থাৎ অবশ্য করণীয়। এছাড়াও রোজা নিয়ে ইসলামি বিধি-বিধান আরও অনেক রয়েছে। তবে রোজা বা রামাদ্বান-এর কিছু বিষয় রয়েছে যা সবার জানা প্রয়োজন। এমনকি যারা অমুসলিম, তারাও তাদের আচার-আচরণে রমজানের মহত্বকে বড় করে তুলতে পারেন। রমজান সম্পর্কে তাদের ধারণা সমৃদ্ধ করতে পারেন। দুবাইভিত্তিক সংবাদপত্র টাইমআউট দুবাই অবলম্বনে সারাবাংলা’র পাঠকদের জন্য বিষয়গুলো এখানে তুলে ধরা হলো—
রমজান কী?
এককথায় এটি ইসলামিক ক্যালেন্ডারের একটি মাস। এই মাসে মুসলমানরা রোজা রাখে, সিয়াম নামেই যা পরিচিত। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত গোটা মাসের ৩০ কিংবা ২৯ দিন (চাঁদ ওঠা সাপেক্ষে) না খেয়ে থাকাটাই রোজা। এটি ইসলাম ধর্মের পাঁচটি প্রধান স্তম্ভের একটি। প্রকৃতপক্ষে আগের দিন সন্ধ্যায় মাসের নতুন চাঁদ দেখা গেলেই পরের দিন থেকে রোজা শুরু হয়। আবার মাস শেষে যে সন্ধ্যায় নতুন চাঁদ দেখা যাবে, সেদিনই শেষ হয়ে যায় রোজার মাস বা রমজান।
অমুসলিমরাও কি অংশ নিতে পারেন?
অবশ্যই পারেন। গোটা উপসাগরীয় এলাকার দেশগুলোতে রমজানের ইফতার ও সেহেরিতে আয়োজনটি এমনই থাকে যেন গোটা সমাজের মানুষ তাতে অংশ নিতে পারে। এমনকি যারা রোজা রাখেন না, তাদেরও এই ইফতার বা সেহরিতে স্বাগত জানানো হয়। বিভিন্নভাবেই অমুসলিমরা তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারেন।
– শুভেচ্ছা বিনিময়। মাসের শুরু থেকেই রমজানের শুভেচ্ছা বিনিময় চলে। ‘রামাদ্বান কারিম’ শব্দটিই এতে বেশি ব্যবহৃত হয়। এই ‘রামাদ্বান কারিম’ কথাটির মানে হচ্ছে খুশির রমজান। সুতরাং যে কেউই একজন মুসলমানকে কিংবা একজন মুসলমান অন্য ধর্মাবলম্বীকে রমজানের খুশির কথা জানাতে পারেন।
– রমজান উপলক্ষে আয়োজিত ক্যাম্প কিংবা বিভিন্ন সেবামূলক উদ্যোগগুলোতে একজন অমুসলিম ব্যক্তি সহায়তা করতে পারেন।
– সহকর্মীদের সাথে সারাদিন না খেয়ে থেকে সন্ধ্যায় একসঙ্গে ইফতার করতে পারেন।
রোজা না করলে আপনি কীভাবে খাবেন?
রমজানে লোকসম্মুখে খাবার খাওয়া, পান করা গর্হিত কাজ বলেই ধরে নেওয়া হয়। আরব দেশগুলোতে এমনকি জরিমানার ব্যবস্থাও রয়েছে। কিন্তু আপনি যদি রোজা না রাখেন, তাহলে না খেয়ে থাকতে হবে এমনটা নয়। এক্ষেত্রে দিনের বেলা কিছু খেতে হলে ঘরের ভেতরে, আড়ালে, পর্দা টাঙিয়ে নেওয়া স্থানে বসে লোকচক্ষুর অন্তরালে খেতে বলা হয়েছে।
এর ব্যতিক্রম কি হতেই পারে না?
সাধারণত শারীরিকভাবে অসুস্থ ও গর্ভবতী নারীদের জন্য রোজা না রাখার সুপারিশ রয়েছে। তবে প্রকাশ্যে খাদ্য গ্রহণের বিষয়ে তাদের জন্যও একই বিধান। তারাও কোনো খাবার খেতে পর্দার অন্তরালে যাবেন।
রমজানে কী ধরনের পোশাক পরবে?
নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য শালীন ও রক্ষণশীল পোশাকেরই সুপারিশ করা হয়েছে। যারা রোজা করছেন তাদের জন্য তো বটেই, যারা করছেন না তাদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। যারা রোজা করছেন তারা যেন আপনার পোশাকে বিব্রত না হয়। শরীরের নানা অংশ বের হয়ে থাকে, কিংবা আঁটোসাটো হয়ে থাকে— এমন পোশাক রমজানের সময় না পরার জন্যই বলা হয়েছে।
রমজানে গান শোনা যাবে কি?
উচ্চশব্দে গান বাজিয়ে তা শোনা থেকে রমজানে বিরত থাকাই শ্রেয়। কারণ যারা রোজা করছেন তাদের বিষয়টি খারাপ লাগতে পারে। কিন্তু আপনি যদি আপনার স্মার্টফোনে, কিংবা আইপ্যাডে হেডফোন লাগিয়ে গান শোনেন, কিংবা যদি ঘরে মৃদু শব্দে গান বাজিয়ে শোনা হয়, তাতে আপত্তি নেই।
রমজানে দানের মহিমা কতটুকু?
দান-খয়রাত ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রমজানে এর মহিমা আরও অনেকগুনে বেড়ে যায়। আর এ জন্য যে আপনাকে কেবল মুসলমান হতে হবে, তা নয়। অমুসলিম হয়েও আপনি রমজানে দান-খয়রাত করতে পারেন। এতিমখানা, দরিদ্রদের জন্য ইফতার, সেহরির ব্যবস্থা এমন অনেক উদ্যোগ রয়েছে। এই পবিত্র মাসে এসব ক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া যায়।
রমজানে যা কিছু বলা যায়
রমজান মাসে একে অন্যের সঙ্গে যেসব কথায় শুভেচ্ছা বিনিময় করেন, সেগুলো একজন অমুসলিম ব্যক্তিও তার পরিচিত মুসলমানের সঙ্গে করতে পারেন। যেমন—
রামাদ্বান মোবারক- আশীর্বাদের রমজান
রামাদ্বান কারিম- খুশির রমজান
ইফতার শাহি- ভালো ইফতার হোক আজ
মুবারক আলেইক আল শাহর- মাসের আশীর্বাদ আপনার ওপর আসুক
কিল আম ওয়া ইন্তা ফি খায়ের- বছরে বছরে আপনার আরও ভালো হোক
ছবি: ইন্টারন্যাশলাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণা কনশাসনেসের (ইসকন) পক্ষ থেকে মুসলমানদের জন্য ইফতারের আয়োজন; ২০১৬ সালের ২২ জুন ছবিটি তোলা