Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনার বড়দিন


২৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:৪৮

ঢাকা: আজ ক্রিসমাস ডে বা বড়দিন। খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপিত হবে। আজ সরকারি ছুটির দিন।

যিশু খ্রিস্টের জন্মদিনে বিশ্বব্যাপী ক্রিসমাস ডে বা বড়দিন হিসেবে উদযাপিত হয়। এ আয়োজনের মূল উপজীব্য নিহিত রয়েছে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের একত্রিত হয়ে যিশু খিস্টের আবির্ভাব ও মানুষের জন্য তার জীবন ত্যাগের বিষয় স্মরণের মধ্যে।

বিজ্ঞাপন

শীতের বিষণ্নতা দূর করে জীবনে আনন্দ আর রঙ নিয়ে আসে ক্রিসমাস ডে। মোটামুটি বিশ্বের সব দেশেই ক্রিসমাস ডে পালন করা হয়। বাংলাদেশে এটি বড়দিন হিসেবে উদযাপিত হয়।

উৎসবের এই সময় বয়ে আনে আত্মীয়-পরিজনের মিলিত হওয়ার উপলক্ষ। ক্রিসমাস ট্রি, ক্রিসমাস ক্যারল, সুস্বাদু খাবার আর রঙিন গৃহসজ্জা মিলিয়ে চারদিকে আলোর উৎসবে সেজে ওঠে বছর শেষের এ সময়। সেই সঙ্গে বিভিন্ন চার্চে চলে খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনা ও যিশুকে স্মরণ। দিনটি উপলক্ষে খ্রিস্টান পরিবারগুলোতে মজার মজার খাবারের পাশাপাশি তৈরি হবে মজার কেক। দেশের অনেক অঞ্চলে ধর্মীয় গানের (ক্রিসমাস ক্যারল) আসর বসবে।

আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য অনেকে বড়দিনকে বেছে নেন। ক্রিসমাস শব্দের উৎপত্তি লক্ষ্য করলেই খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারীদের একত্রিত হওয়ার গুরুত্ব বোঝা যাবে। এটি এসেছে ‘মাস অব ক্রাইস্ট’ (Mass of Christ) থেকে। মাস অর্থাৎ গণসমাবেশ যেখানে খ্রিস্টানরা একত্রিত হয়ে যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হয়ে জীবনত্যাগ এবং পুনর্জন্মের বিষয়টি স্মরণ করা হয়। যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার শুরুর দিকে মাস সার্ভিস করার অনুমতি মিলত শুধুমাত্র সূর্যাস্ত ও পরদিন সূর্যোদয়ের মধ্যের সময়ে। তাই খ্রিস্টানরা সেসময় মধ্যরাতে মিলিত হয়ে যিশুকে স্মরণ করতেন। সেই থেকেই ক্রিসমাস উৎসব উদযাপনের শুরু।

বিজ্ঞাপন

এখন ২৫ শে ডিসেম্বর ক্রিসমাস ডে হিসেবে পালিত হলেও শুরু থেকেই কিন্তু এমন ছিল না। এই নিয়ে রয়েছে নানারকম মত এবং উপকথা।

২৫ ডিসেম্বর কেন ক্রিসমাস ডে হিসেবে উদযাপিত হয় অথবা যিশু খ্রিস্টের আসল জন্মতারিখ নিয়ে রয়েছে নানামত। কারণ বাইবেলে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো তারিখ উল্লেখ নেই। ২৫ ডিসেম্বর ক্রিসমাস ডে হিসেবে পালনের প্রথম উদাহরণ মেলে ৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে রোমান সম্রাট কনস্ট্যানটাইনের শাসনামলে। তিনিই প্রথম খ্রিস্টান শাসক। কিন্তু সে সময় এটি রাষ্ট্রীয়ভাবে রোমান উৎসব হিসেবে পালিত হত না। এ ছাড়াও ২৫ ডিসেম্বর ক্রিসমাস ডে হিসেবে পালনের পেছনে রয়েছে আরও অনেক প্রচলিত গল্প-কথা।

আবার ২১ থেকে ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে সূর্য নিরক্ষরেখা থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থান করে। এইদিন বছরের সবেচেয়ে ছোট রাত। প্যাগান ধর্মের অনুসারীরা একে শীত শেষ হয়ে বসন্তের আগমনী বার্তা হিসেবে ধরত এবং সূর্য পূজার মাধ্যমে উদযাপন করত। স্ক্যান্ডিনেভিয়াসহ উত্তর-ইউরোপের অনেক দেশেই উইন্টার সলস্টাইস (বড় দিন) কে ‘ইউল’ নামে পালন করত। আর পূর্ব ইউরোপে এটি মধ্য-শীতের উৎসব হিসেবে ‘কোলেডা’ নামে উদযাপিত হতো।

খ্রিস্টধর্মের একদম শুরুর দিকে ২৫ শে মার্চ যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন হিসেবে উদযাপিত হতো। প্রাচীন আমলের অনেক খ্রিস্টান একে পৃথিবী সৃষ্টির দিন বলেও মনে করত।

অন্যদিকে স্যাটার্ন বা শনি দেবতার পূজার মধ্য দিয়ে রোমানরা ‘সাতুরনালিয়া’ উদযপন করত ১৭ থেকে ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে। রোমানরা অবশ্য ভাবত ‘সোলিস্টাইস’ হয় ২৫ ডিসেম্বর। ২৭৪ সালে রোমান সম্রাট অরুলিয়ান ২৫ ডিসেম্বর ‘ডিয়েস নাটালিস সলিস ইনভিক্ট’ (সূর্যের জন্মদিন) উৎসব পালন করত।

আবার ইহুদিদের আলোর উৎসব ‘হানাক্কাহ’ ইহুদি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী উদযাপিত হতো ২৫ ডিসেম্বর। জন্ম সূত্রে যিশু খ্রিস্ট একজন ইহুদি ছিলেন যার ফলে শুরুর দিকের চার্চগুলো ২৫ ডিসেম্বর তার জন্মদিন হিসেবে পালন করতে শুরু করে। এভাবে একসময় ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন বা ক্রিসমাস হিসেবে পালন করা শুরু হয়।

সে ক্রিসমাস ডে বা বড়দিন যেভাবেই উদযাপন শুরু হোক না কেন, শীতের বিষণ্ণতা দূর করে আলোকসজ্জা, উপহার, সুস্বাদু খাবার আর ক্রিসমাস ক্যারলের মাধ্যমে ক্রিসমাস ডে নিয়ে আসে উৎসবের উপলক্ষ। বছর শেষের এ উৎসবে খ্রিস্টানদের পাশাপাশি উৎসবে শামিল হন বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরাও। বাড়িতে বাড়িতে তো বটেই ক্রিসমাস ডে’র আয়োজন থাকে বিভিন্ন হোটেল এবং রেস্টুরেন্টে।

আজ ক্রিসমাস ক্রিসমাস ডে বড়দিন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর