লেগোর গাড়ি দেখতে ভারি, চলছে বেশ
৩১ আগস্ট ২০১৮ ১৬:৫৫
।। বিচিত্রা ডেস্ক ।।
দশ লাখ প্ল্যাস্টিক ব্লক। এগুলো নিয়ে কাজ হলো ১৩ হাজার ঘণ্টা। পুরো এক বছর পাঁচ মাস ৮ দিন। তবেই তৈরি হলো গাড়ি। রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নামানো স্পোর্টস কারের সমান মাপে, প্রমাণ সাইজের এক গাড়ি। বিশ্বখ্যাত স্পোর্টস কার বুগাতি শিরন’র আদলে বানানো হয়েছে গাড়িটি।
জার্মানির খেলনা তৈরির প্রতিষ্ঠান লেগো গ্রুপ এই গাড়ি বানিয়েছে। যা আসলে বুগাতি শিরন’র রেপ্লিকা। বিলাশবহুল স্পোর্টস কার হিসাবে এই বুগাতির খ্যাতি আছে। লেগোয় তৈরি এই গাড়ি আর সত্যিকারের মেটালিক একটি বুগাতি শিরন পাশাপাশি রাখলে আলাদা করে চেনার উপায় নেই।
এ নিয়ে গর্বের সীমা নেই লেগো গ্রুপ’র। প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লেনা ডিক্সেনের মুখে সেই গর্বই ঝরে পড়লো। বললেন, নানা পথেই এই গাড়ির বিশেষত্ব রয়েছে। এই গাড়িটি বানিয়ে আমরা আসলে নিজেদের কল্পনার সীমারেখাটি আরো দূরে প্রশস্ত করতে পেরেছি।
গাড়িটি প্রথম টেস্ট ড্রাইভে যায় গত জুনে। আর গত বৃহস্পতিবার এটি সোজা হাজির করানো হয় ইতালির মোনজায় গ্র্যান্ড প্রিক্স ফর্মুলা-১ এর জমকালো আয়োজনে।
লেগোল্যান্ডের নানা আকর্ষণীয় বস্তু-সামগ্রী বানিয়ে চেক রিপাবলিকভিত্তিক লেগো টেকনিক টিমটি আগে থেকেই তাদের দক্ষতার প্রমাণ রেখে আসছে। এবারও তারা সামান্য গ্লু’র সাহায্যটুকুও না নিয়ে স্রেফ একটির সঙ্গে অন্যটি লটকে দিয়ে এই গাড়ি বানিয়েছে। এজন্য ৩৩৯ ধরনের উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে, আর যে যন্ত্রপাতিগুলো ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলোও কতগুলো লেগোর সমন্বয়ে বানানো।
চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে লেগো টেকনিক তাদের সকল বয়সের ভক্তকূলের জন্য নিজেদের সৃষ্টিশীলতার এমন সব উদাহরণ সামনে এনেছে যা স্রেফ নতুন নকশাই নয় নতুন প্রকৌশলকেও তুলে ধরেছে বার বার, এক বিবৃতিতে বলেন ডিক্সেন।
এবার তারা যে গাড়িটি বানালেন এটির ওজন তিন হাজার তিন শ’ পাউন্ড। তবে এতে কিছু নন-লেগো উপাদানও রয়েছে। যেমন- প্রথমে তারা একটি ইস্পাতের কাঠামার ওপর গাড়িটির কাজ শুরু করেন। এতে করে গাড়িটি একটি নিরাপদ টেকসই কাঠামো পায়। আর গাড়িটির ওজন ধরে রাখতেও ইস্পাতের কাঠামোটি কাজে দেবে। এছাড়া গাড়ির চাকাগুলো সত্যিকারের বুগাতি শিরন ব্র্যান্ডের। ব্রেক সিস্টেমটি নেওয়া হয়েছে গো-কার্ট’র আর স্টিয়ারিংটি এটিভি’র কাছ থেকে।
এর বাইরে গাড়ির কাঠামোর সঙ্গে একটি রোল কেজ ও চেসিসের নিচে চারটি ইস্পাতের প্লেট বসানো হয়েছে। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও এখান থেকে ওখানে পরিবহনে সুবিধা দেবে। এসব বাদ দিলে গাড়িটিতে ব্যবহৃত উপাদানগুলোর ৯০ শতাংশই প্ল্যাস্টিকের লেগো।
রিয়ার স্পয়লার, স্পিডোমিটার, সামনের ও পেছনের লাইট, স্টিয়ারিং হুইল, ব্রেক পেডাল এগুলোর সবই লেগোর তৈরি এবং কর্মক্ষম।
দুটি ব্যটারি, ২৩০০টি লেগো পাওয়ার ফাংশন মোটর, চার হাজারের বেশি লেগো গিয়ার হুইল গাড়িটিকে বিদুৎশক্তি দিচ্ছে। মোটরের ভোল্টেজের ওপর ভিত্তি করে গতি ওঠানামা করে। এ কারণে কোনও গ্যাস পেডাল লাগছে না।
সত্যিকারের বুগাতি শিরনের পরীক্ষমূলক ড্রাইভগুলো করা হয় যে ট্র্যাকে, জার্মানির উলফসবার্গের ঠিক সেই ট্র্যাকের ওপরই সম্পন্ন হয় এই গাড়ির পরীক্ষামূলক ড্রাইভ। ভিন্নতা শুধু এটুকুই, বুগাতির গতি ঘণ্টায় ২০০ মাইলের বেশি আর এই লেগো গাড়ির গতি ঘণ্টায় ১২ মাইল।
গত জুনে গাড়িটির টেস্ট ড্রাইভটি করেন কার রেস প্রতিযোগিতায় সাবেক লে ম্যানস বিজয়ী অ্যান্ডি ওয়ালেস। ‘লেগো শিরনটি দেখেই আমি মুগ্ধ হয়ে যাই। দারুণ নিখুঁত একটি গাড়ি ওরা বানিয়েছে,’ এক বিবৃতিতে বলেন ওয়ালেস।
সারাবাংলা/এমএম