Saturday 11 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিশুদের দু-চারটা মিথ্যা বলা শেখাবেন! কেন শেখাবেন?


২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৩:২৯ | আপডেট: ২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৩:৪৩

।।বিচিত্রা ডেস্ক।। মডেল: অতন্দ্রিলা আকাশলীনা

সদা সত্য কথা বলিব… মিথ্যা বলা মহাপাপ… শিশুতোষ শিক্ষার এই দুটি অমোঘ বাণীর বিপরীতে দাঁড়িয়ে নতুন গবেষণা বলছে, অল্পবিস্তার মিথ্যা বলা শিখলে তা শিশুদের জন্য বৃহদার্থে কিছু সুবিধা বয়ে আনে।

কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের এ বক্তব্য এখন খবর হয়ে এসেছে বিশ্বের বড় বড় সংবাদমাধ্যমে। এতে বলা হয়েছে, মিথ্যা কিভাবে বলতে হয় তা প্রাক-স্কুলের শিশুদের শেখানো হলে খুব কাজে দেয়।

প্রাক-স্কুল পর্যায়ের গড়ে ৪০ মাস বয়সের ৪২টি শিশুর ওপর গবেষণা চালিয়েছে এই দলটি। প্রাথমিকভাবে তারা পরীক্ষা করে জেনে নেন, এই শিশুগুলোর একটিরও সামান্য মিথ্যা বলার সক্ষমতা নেই। এরপর তাদের দুই ভাগে ভাগ করে দেন। একটি গ্রুপের শিশুদের রাখা হয় স্বাভাবিকভাবে। আর অপর গ্রুপের শিশুদের শিখিয়ে দেওয়া হলো- ছোট ছোট মিথ্যা বলে- কিভাবে লুকোচুরির খেলায় জয়ী হওয়া যায়।

গবেষকরা জানান, ছেলে ও মেয়ে উভয় শিশুর সমন্বয়ে গঠন করা হলো দুটি দল। এরপর তাদের খেলায় নামিয়ে দেওয়া হলো। খেলা হচ্ছে- পপকর্ন জাতীয় কোনও একটা খাবার বড়দের অগোচরে লুকিয়ে রাখতে হবে টানা চারদিন। একটি দলকে শিখিয়ে দেওয়া হলো কিভাবে মিথ্যা বলে বড়দের ফাঁকি দিয়ে কাজটি করা যাবে।

এরপর প্রতিটি শিশুকে বিশেষ পরীক্ষার মধ্য দিয়ে নেওয়া হলো। কারো মনোবৃত্তি বুঝে ফেলা, কোনও কিছুতে বিশেষভাবে মনোযোগ দেওয়া, কাজের প্রতি একাগ্র হওয়া, কোনও কাজ গুছিয়ে, অগ্রাধিকার দিয়ে ও পরিকল্পনামাফিক করার দক্ষতা দেখা হলো এ পরীক্ষার মধ্য দিয়ে।

এতে গবেষকরা দেখলেন- যে শিশুদের ফাঁকি দেওয়া শেখানো হয়েছিলো ওরা অন্যদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ভালো করছে।

বিজ্ঞাপন

গবেষণাপত্রে লেখা হয়েছে, মাত্র কয়েকদিনের চেষ্টাতেই ছোট ছোট শিশুরা ফাঁকি দেওয়া শিখে গেলো আর এর ব্যবস্থার প্রভাব হিসাবে ওদের চিন্তার ধারা পাল্টে গেলো, যাতে কিছু বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তনও লক্ষ্য করা গেলো।

গবেষকরা বলছেন, আরও সাধারণীকরণ করে বলা যায়, আপাতদৃষ্টিতে নেতিবাচক সামাজিক আচরণগুলোই কিছু ইতিবাচক সুবিধা দিতে পারে। বিশেষ করে কোনও লক্ষ্য অর্জন, সমস্যা সমাধান, মানসিক ধ্যান-ধারনা বুঝে নেওয়ার ক্ষেত্রে এটা কাজে লাগে।

তবে গবেষকরা এও বলছেন, তাদের এই গবেষণা ‘প্রাথমিক প্রমাণ’ হিসাবে কাজ করবে… মিথ্যাচার শিখলে তা প্রাক-স্কুলের শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বাড়াবে কী না- সেটা নিয়ে আরও কাজ করতে হবে।

তবে বাবা-মা, শিক্ষক কিংবা গুরুজন হিসাবে শিশুদের সামান্য মিথ্যাচার যে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে বলে আমরা বিশ্বাস করে আসছি, আমাদের সে ধ্যান-ধারণায় কিছুটা হলেও পরিবর্তন আসবে এমনটাই মনে করছেন গবেষকরা।

আর শিশুরা ছোটবেলায় মিথ্যা বলা বা বলতে শেখা আর বড় বেলায় মিথ্যা বলার মধ্যেও যে পার্থক্য রয়েছে, সেটাও এই গবেষণায় দেখানো হয়েছে।

গবেষণা পত্রের লেখকদের একজন ক্যাং লি বলেন, যে শিশুরা অপেক্ষাকৃত ছোটবেলায় মিথ্যা বলতে শেখে তাদের বুদ্ধিমত্তা অন্যদের তুলনায় বেশি।

‘তবে আমি এর মানে এই নয় যে, এখন থেকে সব বাবা-মা তাদের শিশুদের মিথ্যা বলা শেখাতে বসে যাবেন,’ বলেন ক্যাং।

তিনি বলেন, একটি শিশুর দুই বছর বয়সেই মিথ্যা বলার সক্ষমতা তৈরি হয়। শিশুর বেড়ে ওঠার সাথে সাথে তাদের মিথ্যাচার করতেও দেখা যায়। তবে শিশুরা যদি কাউকে ফাঁকি দিয়ে কিছু একটা করা শেখে তা তাদের প্রয়োজনীয় বুদ্ধিমত্তা বাড়াবে। বিশেষ করে আত্ম-নিয়ন্ত্রণ ও মনোস্তত্ত্বর মতো দুটি মৌলিক শিক্ষা এর মধ্য দিয়ে আসতে পারে।

বিজ্ঞাপন

শিশুদের প্রশংসা ও প্রতারণার ওপর দীর্ষসময় ধরে গবেষণা করে আসছেন এই লি ক্যাং। তার সাম্প্রতিক আরেক গবেষণায় দেখা গেছে- শিশুদের ভালো কাজের প্রশংসা করলে সেটাই ওরা প্রতারণার জন্য ব্যবহার করে বসে।

সে গবেষণা আরও জানায়- যখন আপনি শিশুদের কোনও একটি ভালো কাজের জন্য প্রশংসা করবেন তখন ওরা এই প্রশংসা আরও বেশি বেশি পেতে চাইবে। আর ওদের প্রত্যাশা বেড়ে গেলে কখনো কখনো প্রশংসা পেতে প্রতারণার আশ্রয় নেয়।

লি ক্যাং বলেন, এক্ষেত্রে শিশুদের প্রশংসা করা শিখতে হবে… তাদের এমনভাবে প্রশংসা করতে হবে যাতে তাদের মধ্যে কোনও অসততার চিন্তা বাসা না বাঁধে।

সারাবাংলা/এমএম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর