‘কবুতর পালি মাদকমুক্ত সমাজ গড়ি’
১৩ জুন ২০১৮ ১৪:৫৬ | আপডেট: ১৩ জুন ২০১৮ ১৭:২৫
।। এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: কবুতর বা পায়রার সঙ্গে প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের বন্ধুত্ব। বিশ্বযুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তিতে, প্রেমের দূতীয়ালিতে, রাজায় রাজায় চিঠির আদান-প্রদানসহ দৈনন্দিন সাধারণ যোগাযোগ কাজেও প্রাচীনকাল থেকেই কবুতর মানুষের সঙ্গী হিসেবে পাশে রয়েছে। কবুতরের প্রতি ভালোবাসা এবং সম্পর্কের ভিত্তি থেকে প্রতি বছরের ১৩ জুন বৈশ্বিকভাবে কবুতর দিবস পালন করা হয়। বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও বেসরকারিভাবে কবুতর প্রেমীরা দিবসটি উদযাপন করে।
ঢাকার কবুতর প্রেমীরা ১৩ জুন কবুতর দিবসের মূল্য প্রতিপাদ্য ঠিক করেছেন, ‘কবুতর পালি মাদকমুক্ত সমাজ গড়ি’।
মো. আলী মনসুর, পেশায় একজন হিসাবরক্ষক, তবে কবুতর পোষা তার নেশা। তার ধাপড়িতে কয়েক হাজার কবুতর রয়েছে। গত বছর তার সভাপতিত্বেই ঢাকাতে কবুতর দিবস পালন করা হয়।
মো. আলী মনসুর বলেন, ‘কবুতর পাললে মানুষ খারাপ নেশায় ঢুকতে পারে না। সময়টা ভালোসঙ্গে কাটানো যায়। এ ছাড়া কবুতর থেকে অর্থনৈতিক আয় করাও সম্ভব। কবুতর দিবস আন্তর্জাতিকভাবে উদযাপন করা হয়। কিন্তু আমাদের এখানে সরকারিভাবে এখনো দিবসটি পালন করা হয় না। সরকার যদি দিবসটি আমলে নেয় তবে যুব সমাজ অনেক উপকৃত হবে,’বলেন মনসুর।
কবুতর দিবস পালনের ইতিহাস বলতে গিয়ে তিনি জানান, ২০১৩ সালে বাংলাদেশে প্রথম চট্টগ্রাম জেলায় ফেন্সি পিজন অ্যাসোসিয়নের কবুতর দিবস পালন করে। এরপর বিভিন্ন জেলায় অনেক কবুতর সংগঠন দিবসটি পালন করে।
তিনি আরো জানান, গত বছরের ১৩ জুন ১৭টি জেলায় একযোগে কবুতর দিবস পালন হয়। এবার রমজান মাস হওয়াতে ঢাকায় শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করা হবে। তবে ঢাকার বাইরে র্যালিসহ একাধিক কর্মসূচি থাকবে।
উইকিপিডিয়া থেকে জানা গেছে, কবুতর বা পায়রা বা কপোত বা পারাবত এক প্রকারের জনপ্রিয় গৃহপালিত পাখি। প্রাচীনকালে কবুতরের মাধ্যমে চিঠি আদান-প্রদান হত। কবুতর ওড়ানোর প্রতিযোগিতা প্রাচীন কাল থেকে এখনো চালু আছে।
পৃথিবীতে প্রায় ২০০ জাতের কবুতর পাওয়া যায়। বাংলাদেশে রয়েছে প্রায় ৩০ জাতের কবুতর। এই দেশের জলবায়ু এবং বিস্তীর্ণ শষ্যক্ষেত কবুতর পোষার জন্য ভালো উপযোগী। আগে কবুতরকে সংবাদ বাহক, খেলার পাখি হিসাবে ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে পরিবারের পুষ্টি সরবরাহ, সমৃদ্ধি, শোভাবর্ধনকারী এবং বিকল্প আয়ের উৎস হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কবুতর পোষা এখন শুধু শখ ও বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই বরং তা এখন একটি লাভজনক ব্যবসা হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রেডিও বা বেতার যন্ত্র আবিস্কারের আগে যুদ্ধক্ষেত্রে কবুতরকে দূত বা সংবাদ বাহক হিসেবে ব্যবহার করা হত। খৃস্টপূর্ব ৫৩০ থেকে ওই সময়কার রাজারা বার্তাবাহক হিসেবে কবুতর ব্যবহার করতেন। রোমান শাসক জুলিয়াস সিজারও যুদ্ধক্ষেত্রে কবুতরের সহায়তা নিয়েছেন বলে জানা যায়।
গত শতকের ফ্রান্স-জার্মান যুদ্ধে কবুতরের ব্যবহার ঘটেছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যপকভাবে কবুতর ব্যবহার করা হয়েছিল। একাধিক যুদ্ধে প্রচণ্ড সাহসিকতার সঙ্গে সফলভাবে অনেক মিশন শেষ করেছে পোষা কবুতর। বিশ্বযুদ্ধে মানুষের পাশে কাধ মিলিয়ে যুদ্ধ করার জন্য দ্য মকার, শের এ্যমি, জিআই জো, কায়সার, উইলিয়াম অব অরেঞ্জসহ একাধিক কবুতর চিরস্মরণীয় হয়ে আছে।
জানা গেছে, দ্য মকার নামের একটি হোমার জাতের কবুতর প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ৫২ টি মিশন সফলভাবে শেষ করেছিল। ৫২ তম মিশন সফল করতে গিয়ে দ্য মকার আহত হয় এবং তার বাম চোঁখ হারায়। ১৯১৭ সালে জন্ম নেয়া দ্য মকার ১৯৩৭ সালের ১৫ জুন মারা যায়। দ্য মকারের বীরত্বের জন্য ‘ডিসটিংগুইসড সার্ভিস ক্রস’ সম্মাননা দেয় ওই সময়ের ফ্রান্স সরকার।
গত ১৯১০ সালের মে মাসে আমেরিকায় জন্ম নেয়া শের এ্যমি নামের একটি কবুতর ৪ বছর (১৯১৪-১৮ সাল) যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিল। যুদ্ধের সময় শের এ্যমি ২০০ জন সেনার জীবন রক্ষা করে। পরে যুক্তরাষ্ট্র সরকার শের এ্যামিকে বিশেষ উপাধিতে ভূষিত করে।
সারাবাংলা/জেআইএল/এমএম