Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রাম যেন আরেক বৈরুত

সন্দীপন বসু
৫ জুন ২০২২ ১৯:৫৯

১.

ডেটলাইন ২০২০ সালের ৪ আগস্ট। সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ভূমধ্যসাগরের পূর্ব উপকূলে লেবাননের বৈরুত বন্দরে বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। কিছুক্ষণ পরই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে এবং আকাশে বিশাল এক ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা যায়। সেইসঙ্গে শহরের সবখানে শোনা যায় বিস্ফোরণের ভয়ানক কান ফাটানো তীব্র শব্দ।

সাগরপাড়ের প্রচণ্ড ওই বিস্ফোরণে বন্দরের কাছের বেশ কয়েকটি বাড়ি মাটিতে মিশে যায়। ঘটনাস্থল থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে বৈরুত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের যাত্রী টার্মিনাল ভবনের জানলার কাঁচ ভেঙে পড়ে বিস্ফোরণের ধাক্কায়। দেশটির ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর ৩০ ঘণ্টার চেষ্টায় শতাধিক কনটেইনার জ্বালিয়ে সর্বনাশা সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ততক্ষণে মারা গেছেন দুই শতাধিক মানুষ। আহত ৬ হাজার।

ক’দিন বাদে লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন এই বিস্ফোরণের জন্য বন্দরের গুদামে অনিরাপদভাবে মজুত থাকা ২ হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটকে দায়ী করেন। তিনি জানান, গুদামে রাখা ওই রাসায়নিকে আগুন লেগে ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণ ঘটে।

২.

২০২২ সালের ৪ জুন। রাত সাড়ে ৯টা। ফেসবুকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের একটি লাইভ ট্রেন্ডিং হয়। ফেসবুক লাইভের এক ভিডিওতে দেখা যায়, বঙ্গোপসাগরের উত্তর উপকূলে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ী ইউনিয়নে স্মার্ট গ্রুপের প্রতিষ্ঠান বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুন নেভাতে কনটেইনার ডিপোতে কর্মীদের অনেকেই যান। অনেকে আবার ঘটনাটির লাইভ অথবা ভিডিওধারণ করতে থাকেন। তেমনই একটি লাইভে রাত ১০টার দিকে প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরণ ঘটতে দেখা যায়। সীতাকুণ্ডের বিস্তৃত এলাকার পাশাপাশি হাটহাজারী, রাউজান ও মীরসরাইয়ের অনেক এলাকা কেঁপে ওঠে।

প্রচণ্ড বিস্ফোরণে মাটি ছেড়ে উপরে উঠে যায় কনটেইনারসহ নানা পণ্য। আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। বিশাল কনটেইনার ডিপোর পাশাপাশি পাশের দু’টি বাড়িতেও আগুনের বিস্তার ঘটে। কয়েক কিলোমিটার দূরের ভবনে কাঁচ ভেঙে যায় শকওয়েভের ধাক্কায়। দুর্ঘটনার পর পেরিয়ে গেছে প্রায় ২৪ ঘণ্টা। এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি সর্বনাশা আগুন। মারা গেছেন ফায়ার সার্ভিসের আট কর্মীসহ প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক।

কনটেইনার ডিপোতে আগুনের মূল কারণ এখনো দাফতরিকভাবে জানা যায়নি। তবে ফায়ার সার্ভিস, ডিপোর কর্মী ও স্থানীয় সূত্রে গণমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, কনটেইনার ডিপোটিতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড নামে বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক (কেমিকেল) থাকাতেই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও আগুনের বাড়বাড়ন্ত।

৩.

সীতাকুণ্ডের কনটেইনার ডিপোতে প্রলয়ংকরী আগুন নাড়া দিয়েছে সারাদেশকে। ঘটনার ভয়াবহতা নিয়েও দেশজুড়ে চলছে তরজমা-সমালোচনা। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, আগুন লাগার পর কনটেইনারগুলো একের পর এক বিস্ফোরিত হতে থাকে। প্রায় ২০ হাজার কনটেইনার ছিল ডিপোতে। এর মধ্যে বেশকিছু কনটেইনারে দাহ্য পদার্থ ছিল। সেগুলোর বিস্ফোরণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

রাত ১০টায় বিস্ফোরণের পর আগুন নিয়ন্ত্রণে কর্মরত ফায়ার সার্ভিস কর্মীসহ উপস্থিত অনেকেই কেমিকেলের আগুন ঝলসে যান। এরপর যে যেভাবে পেরেছেন, শেড থেকে বের হতে চেষ্টা করেছেন। অনেকেই বের হতে পারেননি। আজ (রোববার) সকালেও দাউ দাউ করে জ্বলছিল আগুন। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ধ্বংসযজ্ঞের নমুনা। প্রায় পাঁচশ ফুট দীর্ঘ কনটেইনার ডিপোর শেডটি প্রায় পুরোটাই উড়ে গেছে বিস্ফোরণে। লেলিহান শিখায় পুড়ে গেছে হাজার কোটি টাকা মূল্যের কনটেইনারভর্তি মালামাল। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আর্থ জুমের স্যাটেলাইট ইমেজ বা ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছেডেটলাইন ২০২০ সালের ৪ আগস্ট। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়— আগুন, উত্তাপ ও ধোঁয়া ছড়িয়েছে আড়াই বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে। আর এর দূরবর্তী প্রভাব পড়েছে ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকায়।

প্রথমে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছিলেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। কিন্তু তাদের ২৫টি ইউনিট মিলেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে যুক্ত হয় সেনাবাহিনীর ২৫০ জনের একটি ইউনিট। আগুন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ডিপো থেকে কেমিকেল যেন সাগরে ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্যেও কাজ করছে সেনাবাহিনীর ইউনিটটি।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের আট কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়াও গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও অন্তত ১৫ জন। ফায়ার সার্ভিস কর্মীর মৃত্যু ও দগ্ধের ঘটনার বিষয়ে রোববার প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক (ডিজি) গণমাধ্যমকে বলেছেন, ডিপোতে আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে গিয়ে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড রাখা একটি কনটেইনারের বিস্ফোরিত হয়। ওই কনটেইনারের পাশে থাকা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা হতাহত হন। ডিজি আরও জানান, কনটেইনারে রাসায়নিক থাকার বিষয়টি আগুন নেভাতে আসা ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের কেউই অবহিত ছিলেন না। একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আট জন ফায়ার সার্ভিস কর্মীর মৃত্যুর এমন ঘটনা আগে কোনোদিন ঘটেনি বলেও উল্লেখ করেছেন ফায়ার সার্ভিসের ডিজি।

স্বভাবতই দুর্ঘটনার পর কনটেইনার ডিপোর মালিকপক্ষের অবহেলার বিষয়টিও উঠে এসেছে আলোচনায়। ফায়ার সার্ভিস সূত্রে গণমাধ্যম জানিয়েছে, এত বড় দুর্ঘটনার পরও মালিকপক্ষের কাউকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি। তাদের কাছ থেকে তথ্য ও সংশ্লিষ্ট সহযোগিতা পেলে অনেক প্রাণহানি এড়ানো যেত। জানা গেছে, স্মার্ট গ্রুপের এমডি মুজিবুর রহমান। তিনি ব্যবসার পাশাপাশি চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক পূর্বদেশের সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

৪.

ফায়ার সার্ভিস, প্রশাসন, প্রত্যক্ষদর্শী সবারই বক্তব্যেই এই প্রলয়ংকরী ঘটনায় দায়ী একটি রাসায়নিক ‘হাইড্রোজেন পার অক্সাইড’। এর নজির দেখা গেছে ধবংসযজ্ঞের আশপাশেও। আগুনে পোড়া শেড ও এর চারশ মিটারের ভেতরে ছড়িয়ে আছে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের নীল ড্রাম। বেসরকারি কনটেইনার ডিপো মালিকদের সংগঠন বিগডাও জানিয়েছে, ওই ডিপোতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের একটি চালান ছিল।

বিদেশ থেকে আমদানি করা এই রাসায়নিকটি একটি দাহ্য পদার্থ যা মূলত অ্যাভিয়েশন শিল্প খাতে ব্যবহৃত হয়। উচ্চ চাপে এই রাসায়নিক বোতলজাত করা হয়ে থাকে। এছাড়া এই রাসায়নিকটি প্রসাধনী শিল্পেরও গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল। বোতলজাত পানিসহ বিভিন্ন বস্তুর পরিশোধক এবং জীবাণুনাশক হিসেবেও এটি ব্যবহৃত হয়। কেমিকেলটি ঘরে বসেই বানানোর বিভিন্ন উপায় বাতলানো আছে অনলাইন দুনিয়ায়। ইউটিউব বা গুগলে সার্চ দিলেই এর নজির পাওয়া যাবে।

এদিকে আবার আলোচিত রাসায়নিক হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডকে বোমার উপাদান হিসেবে উল্লেখ করেছেন পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন সানি। এ বিষয়ে নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে সানি লিখেছেন, ‘নীল ড্রামগুলো অনেকদিন ধরেই আমাদের যন্ত্রণার কারণ। বিগত কয়েক বছরে বেশকিছু জঙ্গি আস্তানা থেকে এরকম অসংখ্য নীল ড্রাম উদ্ধার হয়েছে। এই নীল ড্রামের হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড দিয়ে জঙ্গিরা বিস্ফোরক বানাত। অথচ এগুলো নানা ধরনের শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিছু অসাধু সরবরাহকারী এবং শিল্পসংশ্লিষ্ট অসাধু ব্যক্তি এরকম বেশকিছু কেমিকেল ব্যাকডোরে সন্ত্রাসীদের কাছে বিক্রি করে দিত। এই অপরাধে এরই মধ্যে অনেক ব্যবসায়ী বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি গ্রেফতার হয়েছে।’

৫.

বাংলাদেশে রাসায়নিকে সৃষ্ট আগুনে দুর্ঘটনার সংখ্যা কম নয়। এই তো মাত্র ক’দিন আগেই গেল দুঃস্বপ্নের নিমতলী অগ্নিকাণ্ডের এক যুগপূর্তি। ২০১০ সালে নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারান ১২৪ জন। এছাড়া ২০১৯ সালে চুড়িহাট্টায় রাসায়নিকের গুদাম বিস্ফোরণ থেকে লাগা আগুনে পুড়ে মারা গেছেন আরও ৭১ জন। ঠিক একইভাবে গতবছর আরমানিটোলায় মারা গেছেন পাঁচ জন। চলতি বছরের মার্চেও রাজশাহীতে রাসায়নিকের গুদামে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটে। এই প্রতিটি অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের কারণ ছিল রাসায়নিক দ্রব্য। অথচ, নিমতলীর মর্মান্তিক ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রাসায়নিকের গুদাম ও দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করে তৈরি পণ্যের কারখানা পুরান ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু অজানা কারণে সে উদ্যোগ আর আলোর মুখ দেখেনি।

পুরান ঢাকার অনেক বাড়িই আজ বোমায় পরিণত হয়ে আছে। এইসব জরাজীর্ণ বাড়িগুলোতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন বিপুলসংখ্যক মানুষ। আরমানিটোলা, চুড়িহাট্টা, চকবাজারের মতো পুরান ঢাকার অনেক এলাকাতেই বাড়ির মালিক বেশি ভাড়ার লোভে বাসার নিচতলায় রাসায়নিক পদার্থ মজুতের জন্য ভাড়া দেন। এই কারখানা ও গুদামগুলোর বেশিরভাগেরই নেই পরিবেশ অধিদফতর, জেলা প্রশাসন, বিস্ফোরক অধিদফতর কিংবা ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র। অন্যদিকে, সরকারি বিভিন্ন সংস্থাও রাসায়নিক আমদানির অনুমোদন দিয়ে সেটি কোথায় রাখা হচ্ছে, কীভাবে রাখা হচ্ছে এর খোঁজ রাখে না। ব্যাপারটা এমন যে অনুমোদন দিয়েই দায়িত্ব শেষ। কোনো সংস্থা আবার লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ রাখলেও অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয় না। এই সবকিছুর অবশ্যম্ভাবী সমীকরণ হচ্ছে নিমতলী, চুড়িহাট্টা আর সোয়ারিঘাটের মতো ট্র্যাজেডিগুলো।

কিছুদিন আগেও বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পুরান ঢাকাসহ রাজধানীর আশপাশের এলাকায় অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটসহ যেসব বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থের মজুত রয়েছে, তা বৈরুত বন্দরে থাকা রাসায়নিকের মজুতের কয়েক গুণ বেশি। এসব গুদামে রয়েছে গ্লিসারিন, সোডিয়াম অ্যানহাইড্রোস, সোডিয়াম থায়োসালফেট, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড, মিথাইল ইথাইল কাইটন, থিনার, আইসোপ্রোইলসহ ভয়ংকর সব রাসায়নিক দাহ্য পদার্থ। এই রাসায়নিক পদার্থগুলো সামান্য আগুনের স্পর্শে এলেই ঘটতে পারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। অথচ ২০২০ সালে বৈরুতে লোমহর্ষক বিস্ফোরণের পর বিপজ্জনক পদার্থ বা রাসায়নিক কারখানাগুলো নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ। বিপরীতে আমাদের দৌড় কেবল নির্দেশনা ও পরিপত্র জারি পর্যন্ত।

বৈরুতে আলোচিত ঘটনার পর সতর্ক হয়েছিল বাংলাদেশও। নেওয়া হয়েছিল পদক্ষেপ। ২০২০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে বিপজ্জনক রাসায়নিক স্তূপ শনাক্ত করে সাড়ে ৯ হাজার কেজি রাসায়নিক পণ্য নামগঞ্জের ছাতকে লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেডের প্ল্যান্টে পাঠিয়ে ধ্বংস করে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ। এছাড়া ওই সময়ে বন্দরে ঝুঁকি কমাতে ও জায়গা খালি করতে ১৫২ কেজি সালফিউরিক এসিড, এক ব্যাগ টেক্সটাইল কেমিক্যাল, ৭৬২ ব্যাগ অ্যালুমিনিয়াম পাউডার ও ৮০ ড্রাম সাইক্লো হেক্সানন পণ্য নিলামে তুলে বিক্রি করে চট্টগ্রাম কাস্টমস। কিন্তু ও-ই শেষ। এরপর আর কোনো উদ্যোগ কাজে পরিণত হয়নি।

৫.

সীতাকুণ্ডে এত প্রাণহানির মধ্যেও মানবিকতার নজির স্থাপন করেছেন স্থানীয় জনতা, ছাত্র, চিকিৎসক ও রাজনৈতিক দলগুলো। আগুন লাগার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন বিএম ডিপো থেকে দলে দলে আহতদের এনে রাস্তায় বিভিন্ন গাড়িতে তুলে দেওয়া হচ্ছিল। অনেক অ্যাম্বুলেন্স চট্টগ্রাম থেকে গিয়ে রোগীদের বিনা পয়সায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। সীতাকুণ্ডের সরকারি-বেসরকারি সব অ্যাম্বুলেন্স ও চট্টগ্রাম শহর থেকে অ্যাম্বুলেন্স গিয়ে অগ্নিদগ্ধদের হাসপাতালে নিয়ে আসে। ভাটিয়ারীতে শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের হাসপাতাল এবং ভাটিয়ারী মুক্তিযোদ্ধা হাসপাতালেও বেশকিছু অগ্নিদগ্ধকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

ভয়াবহ বিস্ফোরণের খবর পেয়ে দগ্ধ ও আহতের পাশে দাঁড়াতে মধ্যরাত থেকে অনেকেই ছুটে আসেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দগ্ধ, আহতদের সাহায্য করতে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থেকে শুরু করে ব্যক্তি পর্যায়েও এগিয়ে আসছেন অনেকে। রেড ক্রিসেন্ট, যুব রেড ক্রিসেন্টের ভলান্টিয়াররা ব্লাডব্যাংক সদস্য, গাউসিয়া কমিটি থেকে শুরু করে অনেকেই রাত থেকেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে বাড়িয়ে দিয়েছেন সাহায্যের হাত। কেউ সামনে ভিড় জমিয়েছেন রক্ত দিতে, কেউ দিয়েছেন ওষুধ; আবার কেউ ছিলেন তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে। কেউ হাতপাখা, এমনকি কেউ খাবার পর্যন্ত নিয়ে এসেছিলেন।

মাঝরাতে চট্টগ্রাম মেডিকেলে শত শত স্বেচ্ছাসেবক যখন ‘নেগেটিভ রক্তের ডোনার লাগবে’ বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, ঠিক সেই মুহূর্তে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েকশ ‘ডোনার’ সেখানে হাজির হন যাদের অনেকের রক্তের গ্রুপ ‘নেগেটিভ’। যে রক্তের জন্য সপ্তাহখানেক আগে থেকে খোঁজ করতে হয়, সে রক্ত দিতে সিরিয়াল দিতে হচ্ছে! রক্ত দিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপস্থিতি এবং আগ্রহ দু’টোই ছিল চোখে পড়ার মতো। নজর কেড়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহৃদয় উপস্থিতিও।

চট্টগ্রামবাসীর সহযোগিতার এমন প্রচেষ্টাকে মানবিকতার অনন্য নজির বলে আখ্যা দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন মো. ইলিয়াস চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, চট্টগ্রামের মানুষ যে মানবতা দেখিয়েছে তা বিরল। গতকাল রাত থেকে নিজেদের কথা চিন্তা না করে যে যার জায়গা থেকে সাহায্যপ্রার্থীদের সহযোগিতা করছেন। বিষয়টি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

সারাবাংলা/এসবিডিই/টিআর

কনটেইনার ডিপোতে আগুন বিএম কনটেইনার ডিপো সীতাকুণ্ডে আগুন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর