‘একখানা ছবি…’
১৩ জুলাই ২০২২ ২০:১৬
ব্রিজবেন থেকে: ইব্রাহিম ভাই, আজাদ ভাই, বাবু ভাই, লিমন ভাই, নন্দিতা আপা, মিলি আপা… এটা কি হলো!
আপনারা পারলেন না আপনাদের এতো কাছের বন্ধুটাকে আটকাতে? তিনি এ পথে যাচ্ছেন, তিনি এ পথে যাবেন এটা আপনারা বুঝতে পারলেন না! আপনারাতো আমাদের বিভাগের সবচেয়ে ভালো বন্ধুর দল। আপনাদের নিয়ে আমরা কত গর্ব করি। আড্ডা দেন কতদিন একসঙ্গে আছেন! আজও একসঙ্গে চলেন। আর কেউ না বুঝুক আপনারাতো সবচেয়ে কাছের মানুষ। আপনাদের অন্তত বোঝার কথা। সেই আপনারাও ব্যর্থ হলেন!
আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হই ২০০৪ সালে। সোহানা পারভীন তুলি আপারা আমাদের এক ব্যাচ সিনিয়র। আমরা বিভাগে আসলে তারাই প্রথম আমাদের অনুষ্ঠান করে বরণ করে নেন। তখনই আমরা একদল বন্ধুকে দেখি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আসল ইয়ার, দোস্ত। সেই দলে ছিলেন তুলি আপা। আহা কি অমায়িক মানুষ। ১০৮৮ নম্বরের করিডোরে কত দেখা হয়েছে। একদল প্রাণবন্ত বন্ধুর দলের সদস্য তুলি আপা। পরে বিভাগের নানা আয়োজনে কত কথা, কত আয়োজন। কত স্মৃতি। এক ব্যাচ বড়, তুলি আপাদের সাথে বেশি সখ্যতা ছিল আমাদের বন্ধু এ.এস.এম. আতিকের (এনটিভি’তে কর্মরত)। সেইসঙ্গে আমাদেরও বড় বোন-ছোট ভাইয়ের সম্পর্ক। সেই সম্পর্ক আজও আছে। দেখা হলেই, কি অমায়িক হাসি দিয়ে কথা বলতেন। কথায় স্নেহের পরশ অনুভব করতাম।
১৩ জুলাই, ব্রিজবেনে তখন রাত সাড়ে দশটা। রাতের খাবার শেষে মাত্র ল্যাপটপে বসেছি। তখনই অনলাইন পোর্টাল সারাবাংলা ডট নেটে আপুর ছবিটি দেখতে পাই। সাথে ভয়ঙ্কর একটা শিরোনাম। বহুদিন পর কোন খবর দেখে স্তব্ধ হয়ে গেলাম। মনে হল সবকিছু থেমে গেছে। ব্রিজবেনে ১১ ডিগ্রি তাপমাত্রাকে আমার কাছে আরও শীতল মনে হলো। কিছুটা অবিশ্বাস নিয়ে কয়েকজনকে খবরের লিংকটা পাঠালাম। তারাও সত্যতা নিশ্চিত করলেন। আহারে…। আমার বিভাগের বড় বোন, সোনার মানুষটা এভাবে চলে গেল। আমরা কেউ কিছুই বুঝলাম না।
সোহানা পারভীন তুলি আপার জীবনে কষ্ট ছিল। সংসার করা হয়নি। তারপরও আমরা ভেবেছিলাম এই মানুষটি সবকিছু নতুন করে শুরু করবেন। তার বন্ধুদের মতোই ব্যক্তিগত জীবনে সফল হবেন। উল্লেখ করতে পারি, তুলি আপনার কাছের বন্ধুরা বাংলাদেশে অত্যন্ত সুনামের সাথে পেশাগত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তারা সবাই সুপ্রতিষ্ঠিত। কিন্তু তুলি আপা, এটা কি হলো? আপনি কেন দলছুট হয়ে গেলেন? আপনার ফেসবুক প্রোফাইলে কত আনন্দ, কত উচ্ছ্বাসের ছবি। এত আলো ঝলমলে ছবির পেছনে এত অন্ধকার জমেছিল। কেউ কেন তা বুঝতে পারলো না! কেউ কেন তা খেয়াল করলো না?
৫ জুলাই ২০১৭ সালে উপরের ছবিটি দিয়ে তুলি আপা লিখেছিলেন ‘একখানা ছবি…’। আপনার সেই একখানা ছবির দিকেই আমরা তাকিয়ে আছি। আমাদের জটিল এক সমীকরণের মধ্যে ফেলে আপনি কোন হিসাব চুকাতে গেলেন? এতে কি কোন সমস্যা মিটল? এতে কি কারও কোন উপকার হলো? আমি জানি না। শুধু এটুকু বলি, আপনি চলে যাওয়াতে হয়তো আপনাদের বন্ধুদের আড্ডাটা চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল। আপনাকে ছাড়া ইব্রাহিম ভাই, লিমন ভাই, বাবু ভাই, মিলি আপারা আর কোনো আড্ডাতে বসতে পারবে কি না আমার সংশয় হয়। তাদের মতো আমার মতো অনেক ছোট ভাইদেরকেও আপনি একটা অদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে গেলেন। এ ঘোর কাটতে সময় লাগবে। ভালো থাকবেন আপু…।
লেখক: শিক্ষক
সারাবাংলা/আরএফ/এএসজি