Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘কালের যাত্রার ধ্বনি শুনছি, যাত্রাটা যেন ভালো হয়’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২১ আগস্ট ২০২২ ১৫:১২

অধ্যাপক ড. অনুপম সেন, ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: জীবনের আট দশক পার করে শিক্ষাবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. অনুপম সেন বলেছেন, এবার তিনি কালের যাত্রার ধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন। সবার শুভকামনায় যাত্রার ধ্বনিটা যেন ভালো হয়, আবেগঘন কণ্ঠে এই প্রত্যাশা করেছেন অগাধ পাণ্ডিত্যের অধিকারী এই কিংবদন্তী।

গত ৫ আগস্ট অনুপম সেনের ৮৩ তম জন্মদিন পালন হয়েছে। শনিবার (২০ আগস্ট) সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের ‘বোধন আবৃত্তি পরিষদ’ তার কবিতা, অনুবাদ কবিতা ও প্রবন্ধ থেকে আবৃত্তি এবং পাঠের আয়োজন করে। তার জীবনালেখ্যও তুলে ধরা হয়। ‘অনুপম সময়’ শীর্ষক এ আয়োজনে নিজের অনুভূতি তুলে ধরেন একুশে পদকপ্রাপ্ত এই সমাজবিজ্ঞানী।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষকতা করেই তারুণ্য থেকে বার্ধক্যে পৌঁছানো প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অনুপম সেন সমাজে ছড়িয়ে যাচ্ছেন আলো, জ্ঞান আর মেধার আলো, বিনয়ের আলো। অনুষ্ঠানেও সেই সৌজন্যতাবোধ নিয়েই অনুপম সেন বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানের যোগ্য আমি নই। আমি খুবই সাধারণ মানুষ। আমি সাধারণ মানুষের সঙ্গেই মিশে থাকতে চাই। আমি সুযোগ পেয়েছিলাম পড়াশোনার, তাই এখানে এসে দাঁড়াতে পেরেছি। আমার চেয়ে অনেক জ্ঞানী, বুদ্ধিমান মানুষ এ সমাজে আছে, কিন্তু তারা সুযোগ পেয়ে উঠতে পারেনি। আমি সুযোগ পেয়েছি।’

‘আমি এমন একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলাম, যে পরিবার থেকে আমি অনেক সুযোগ পেয়েছি। লেখাপড়া শেখার সুযোগ ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছি। অনেকের সংস্পর্শ পেয়েছি, অসাধারণ সব শিক্ষক পেয়েছিলাম। একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ড. নাজমুল করিম, আরেকজন কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুস সোবহান খান চৌধুরী। এই দুজন মানুষ আমাকে নানাভাবে আলোকিত করেছেন। আমাকে যে সম্মানটা দিলেন, এটি আমার জন্য বিরাট প্রাপ্তি। সম্মান পেলে প্রত্যেক মানুষই খুশি হয়। আমিও তার ব্যতিক্রম নই।’

বিজ্ঞাপন

‘মানুষের জন্য একটি রাষ্ট্র’— আজীবন দেখা এমন স্বপ্নের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমি সবসময় অনুভব করি, আমার আশেপাশে অনেক মানুষ ছড়িয়ে আছে, যারা সুযোগ পেলে অনেক বড় হতে পারতেন। প্রতিটি শিশুই অসীম সম্ভাবনা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। আমি চাই এমন একটি সমাজ, যে সমাজে প্রতিটি শিশু তার সম্ভাবনাকে পূর্ণতা দেওয়ার সুযোগ পায়, রাষ্ট্র যেন তাকে সেই সুযোগটা করে দেয়। বাংলাদেশে যেন এমন একটি সমাজ গড়ে ওঠে যে সমাজে প্রতিটি শিশু সুনাগরিক হয়ে গড়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধু সংবিধানে লিখে রেখে গেছেন- প্রতিটি মানুষ যেন মানুষের মর্যাদা পায়। এমন রাষ্ট্র যেন আমরা সৃষ্টি করতে পারি।’

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মরণ রে, তুঁহু মম শ্যাম সমান’ কবিতা আবৃত্তি করে আবেগঘন কণ্ঠে অনুপম সেন বলেন, ‘আমরা কে আমরা জানি না। আমি কে, আমি নিজেই জানি না। যেদিন চলে যাব, কেন এসেছিলাম, কেন চলে গেলাম আমরা কি এর কোনো উত্তর জানি ? এই উত্তর না নিয়েই আমাদের চলে যেতে হবে। আমি তো কালের যাত্রার ধ্বনি শুনছি। যাত্রার ধ্বনিটা যেন ভালো হয়, সবার কাছে এই শুভকামনা প্রত্যাশা করছি।’

জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে কবিগুরুর ‘এবার ফিরাও মোরে’ ও ‘জন্মদিন’ কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। কথামালায় অংশ নেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক ও সমাজতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. ওবায়দুল করিম দুলাল, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মহীবুল আজিজ, বন্দর মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ কবি সেলিনা শেলী, অনুপম সেনের মেয়ে ইন্দ্রাণী সেন।

অনুষ্ঠানে অনুপম সেনের রচনা থেকে আবৃত্তি পরিবেশন করেন শিমুল নন্দী, মাইনুল আজম চৌধুরী, মোহিনী সংগীতা সিংহ, লাভলী আক্তার নিশাত, রাজিউর রহমান বিতান, তূর্ণা দাম, উর্মি চৌধুরী, মৃত্তিকা চক্রবর্তী, ইতু সাহা, সুতপা মজুমদার, মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম, অনিমেষ পালিত, ঝলক কুমার সেতার রুদ্র, জয়শ্রী মজুমদার জয়া।

কবি আলী প্রয়াসের রচনা ও সম্পাদনায় জীবনালেখ্য পাঠ করেন প্রবীর পাল, তৈয়বা জহির আরশি, জাভেদ হোসেন, রমিজ বাবু এবং রীমা দাশ। প্রবন্ধ পাঠ করেন আবৃত্তিশিল্পী শিমুল নন্দী ও পিউ সরকার।

অনুষ্ঠান শেষে বোধনের পক্ষ থেকে ড. অনুপম সেনকে স্মারক ও উপহার প্রদান করেন বোধনের সভাপতি আবদুল হালিম দোভাষ। অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় ছিলেন বোধনের সাধারণ সম্পাদক প্রণব চৌধুরী।

১৯৪০ সালের ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরে অনুপম সেনের জন্ম। বাবা বীরেন্দ্রলাল সেন ও মা স্নেহলতা সেন। বাড়ি পটিয়া উপজেলার ধলঘাটে।

অনুপম সেন চট্টগ্রাম শহরের মিউনিসিপ্যাল স্কুল থেকে ১৯৫৬ সালে মেট্রিকুলেশন পাস করেন। চট্টগ্রাম কলেজে ইন্টারমিডিয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬২ সালে সমাজতত্ত্বে স্নাতক ডিগ্রি নেন। ১৯৬৩ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ১৯৬৫ সালে ২৫ বছর বয়সে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে। তিনি পূর্ব পাকিস্তান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বর্তমানে বুয়েট), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজতত্ত্ব ও রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনা করেন।

সারাবাংলা/আরডি/এনএস

অধ্যাপক ড. অনুপম সেন অনুপম সেন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

শরৎ বাংলাদেশের কোমল স্নিগ্ধ এক ঋতু
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৫৪

সম্পর্কিত খবর