Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিশু আয়াতের ওপর নৃশংসতা কেন— জবানবন্দিতে জানাল আবির

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩ ডিসেম্বর ২০২২ ২১:২৫

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে শিশু আলীনা ইসলাম আয়াতকে খুনের পর কেটে ছয় টুকরো করে সাগরে ভাসিয়ে দেওয়ার বিষয় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন গ্রেফতার আবির আলী। তিনটি সিএনজি অটোরিকশা কিনে দ্রুত ধনী হওয়ার আশায় আয়াতকে জিম্মি রেখে তার দাদার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে এই তরুণ।

শনিবার (৩ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম জুয়েল দেবের আদালতে দেওয়া আয়াত হত্যার লৌমহর্ষক বর্ণনা দেন আবির। বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত দেওয়া জবানবন্দি ১৭ পৃষ্ঠায় রেকর্ড করেন আদালত।

বিজ্ঞাপন

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক ( মেট্রো) মনোজ কুমার দে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আবির আলীকে আমরা দুই দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। রিমান্ডের মধ্যেই আজ (শনিবার) বিকেলে আদালতে হাজির করলে সে স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দেয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা যে সব তথ্য পেয়েছি, আয়াতকে খুনের যেসব বর্ণনা আমাদের কাছে দিয়েছে প্রায় অভিন্নভাবে সে আদালতের কাছেও উপস্থাপন করেছে।’

‘স্বেচ্ছায় দেওয়া এই জবানবন্দির মধ্য দিয়ে মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে আরেকধাপ অগ্রগতি হলো। এ ছাড়া আলামত হিসেবে আয়াতের শরীরের বিভিন্ন অংশ উদ্ধারের মধ্য দিয়ে তদন্তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়’— বলেন পিবিআই পরিদর্শক মনোজ কুমার দে।

গত ১৫ নভেম্বর বিকেলে নগরীর ইপিজেড থানার দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের নয়ারহাট এলাকার বাসিন্দা সোহেল রানার মেয়ে চার বছর ১১ মাস বয়সী আলীনা ইসলাম আয়াত নিখোঁজ হন। ১০ দিন পর ২৪ নভেম্বর পিবিআই আবির আলীকে গ্রেফতারের পর জানায়, আয়াতকে শ্বাসরোধে খুন করে লাশ কেটে ছয় টুকরো করে আবির। এরপর সেগুলো সাগরে ভাসিয়ে দেয়।

বিজ্ঞাপন

আদালত সূত্রে জানা গেছে, আবির জবানবন্দিতে জানিয়েছে— গত ২০ বছর ধরেই আয়াতের দাদা মনজুর আলমের ভাড়া ঘরের নিচতলায় থাকেন আবিরের বাবা আজহারুল ইসলাম। ওই ঘরেই জন্ম হয় আবির ও তার বোন আঁখির। শিশু আয়াত আবিরকে চাচ্চু ডাকত। কিন্তু বাবা-মায়ের ছাড়াছাড়ির পর আবির ও তার বোন মা আলো বেগমের সঙ্গে অন্য বাসায় চলে যায়। তবে তার বাবা থাকত সেই ভাড়া বাসায়।

ঘটনার দিন ১৫ নভেম্বর দুপুরে আবির আলী বাবার বাসায় এসে দেখে- বাবা নেই। আবির আয়াতদের বাসার সামনে অন্যদের সাথে ক্রিকেট খেলতে থাকে। বিকেলে বাসা থেকে মসজিদে কোরআন পড়তে যাওয়ার জন্য দাদার সঙ্গে বের হয় আয়াত। আবির দাদার সামনেই আয়াতকে কোলে নিয়ে আদর করে ছেড়ে দেয়। দাদা সামনে চলে গেলেও আয়াত এদিক-ওদিক ঘুরতে থাকে।

তখন আবির তাকে বাবার বাসায় আসতে বলে। কিন্তু আয়াত আসতে চাচ্ছিল না। আবির অভিমান করেছে এমন ভাব দেখালে এগিয়ে আসে আয়াত। আর তখনই তাকে গলা টিপে ধরে বাবা আজহারের ভাড়া ঘরে নিয়ে আসেন। সেখানে গলা টিপে এবং হিজাবের কাপড় মুখে পুরে দিয়ে আয়াতকে খুন করে বাবার ঘরে থাকা একটি বস্তার মধ্যে লাশ ঢুকিয়ে ফেলে।

বিকেল ৪ টার দিকে একটি কাপড়ের বস্তা আর আয়াতের লাশের বস্তা নিয়ে বাবার ঘর থেকে বেরিয়ে যায় আবির। রিকশায় করে আকমল আলীর মায়ের ভাড়া বাসায়। তখন আবিরের মা আলো বেগম বাসায় ছিলেন। এসব কী জানতে চাইলে আবির বলেন, বাবার বাসা থেকে তোমার কথামতো জিনিসপত্র এনেছি।’ আয়াতের লাশভর্তি বস্তাটি কৌশলে সানশেডে রেখে বের হয় আবির, চলে আসে আয়াতদের বাসার সামনে। এর মধ্যে আয়াতকে খোঁজা শুরু হয়।

বাবা সোহেল রানার সঙ্গে আবিরও নিখোঁজ আয়াতের খোঁজ করে জানিয়ে জবানবন্দিতে সে আরও বলে- রাতে বাসায় গিয়ে মা আলো বেগম ও বোনকে আয়াত নিখোঁজ হবার কথা জানায় এবং অনুরোধ করে তারা যেন আয়াতের বাসায় যায়। আলো বেগম মেয়েকে নিয়ে আয়াতদের বাসায় যান। এর মধ্যে দোকান থেকে স্কচটেপ, ছুরি ও পলিথিন কিনে আনে আবির। সানশেড থেকে আয়াতের লাশ নামিয়ে কাটা শুরু করে।

আর তখনই বাসায় ফেরেন মা আলো বেগম ও বোন। কিন্তু আয়াতের শরীর কাটার কাজ তখন শেষদিকে। তাই দরজা না খুলে তাদের ঘরের বাইরে থাকতে অনুরোধ জানিয়ে আবির বলে— সে শরীরের লোম পরিস্কার করছে।

শিশু আয়াতের শরীর ৬ টুকরো করে পলিথিনে ঢুকিয়ে স্কচটেপ মুড়িয়ে আবারও সানশেডে রেখেই ঘরের দরজা খুলেন। এ সময় প্রায় ৩০ মিনিট মা-মেয়েকে ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কাটাকাটির শব্দ বাইরে যাতে শোনা না যায় সে জন্য জোরে ফ্যান চালিয়ে দিয়েছিল। বাথরুমে পানির টেপ ছেড়ে রেখেছিল। শরীরের কাটা অংশ সানশেডে রাখার স্থানে আয়াতের শরীর থেকে রক্ত বের হচ্ছিল। রক্তের গন্ধ যাতে না ছড়ার সেজন্য রক্তের ওপর টেলকম পাউডার আর বডি স্প্রে ছিটিয়ে দেয়।

পরদিন সুযোগ বুঝে ব্যাগে করে আয়াতের শরীরের ছয়টি খণ্ড দু’বারে নগরীর আকমল আলী রোডের শেষ প্রান্তে গিয়ে স্লুইচগেইটে ও আউটার রিং রোডের পর সাগরে ফেলে দিয়ে আসে আবির। ব্যাগে করে লাশের খণ্ড নিয়ে বের হবার সময়ও সামনে পড়ে যান মা আলো বেগম। জানতে চাইলে আবির বলে, সে জাহাজের ওয়াচম্যানের চাকরি পেয়েছে, কাজ করতে যাচ্ছে।

দেড়মাস আগে আয়াতকে অপহরণ ও খুনের পরিকল্পনা নিয়েছিল জানিয়ে আবির জবানবন্দিতে বলে— আয়াতকে ফেরত দেওয়ার কথা বলে তার দাদা মনজুর হোসেনের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা আদায় করে তিনটি সিএনজি অটোরিকশা কিনে দ্রুত ধনী হওয়ার জন্য সে এই পরিকল্পনা করেছিল।

সারাবাংলা/আরডি/একে

আবির আয়াত হত্যাকাণ্ড

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর