ফের ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ছে বিএডিসির প্রকল্পে
১৮ জানুয়ারি ২০২৩ ১১:৩৩
ঢাকা: ফের ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) প্রকল্পে। এ ক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ছে ৪৯ কোটি ৮৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ মূল ব্যয়ের তুলনায় ২২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। সেইসঙ্গে মেয়াদও বাড়ছে এক বছর বাড়ছে। এ জন্য বিএডিসি অফিস ভবন এবং অবকাঠামোগুলোর সংস্কার, আধুনিকীকরণ ও নির্মাণ প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
এদিকে প্রকল্পটিতে বিরাজ করছে ধীরগতি। গত বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৮১ দশমিক ২০ শতাংশ। অর্থাৎ খরচ হয়েছে ১৭৮ কোটি টাকা ৫৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৮৪ দশিক ৮০ শতাংশ। অথচ ইতোধ্যেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এ অবস্থায় সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে আগামী ২৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে প্রকল্পটির প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় সভাপতিত্ব করবেন কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) একেএম এম ফজলুল হক।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পের সংশোধনী আসছে। আমরা চেষ্টা করি ভালোভাবে যাচাই বাছাই করার। কখনও বাস্তব পরিপ্রেক্ষিতে এবং একান্ত প্রয়োজন হওয়ায় পরিকল্পনা কমিশন সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদনের সুপারিশ করে থাকে। তবে প্রকল্পের বারবার সংশোধনী কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন তথা ধান ও অন্যান্য ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আসছে। বিএডিসির সেচ বিভাগ মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ করে থাকে।
বিএডিসির অধিকাংশ অবকাঠামো ও স্থাপনাগুলো ৬০ থেকে ৭০ দশকে নির্মিত। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় দীর্ঘদিন এসব অবকাঠামো মেরামত সম্ভব হয়নি। ফলে অধিকাংশ অবকাঠামোর প্রত্যাশিত মেয়াদ শেষ পর্যায়ে। অবকাঠামোগুলোর বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত নাজুক ও জরার্জীর্ণ। অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় কিছু অফিস ভবন কাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গুদাম ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ফলে মাঠ পর্যায়ে কর্মচারী কর্মকর্তাদের কর্ম পরিবেশ নষ্ট হওয়াসহ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, এসব বিষয় বিবেচনায় মাঠ পর্যায়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে বিএডিসির সেচ বিভাগের আওতাভুক্ত বিদ্যমান কিছু অবকাঠামোর সংস্কার বা আধুনিকায়ন এবং কিছু নতুন অবকাঠামো নির্মাণের জন্য প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে প্রকল্প এলাকায় কর্মপরিবেশ উন্নত হবে ও সেচ কার্যক্রমে গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে, যা খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।
প্রকল্পটি দ্বিতীয় সংশোধনের কারণ
প্রকল্প সংশিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রকল্পের মধুপুরে বিএডিসির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কাম ডরমিটরি ভবন নির্মাণ কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় সাত কোটি টাকার পরিবর্তে আট কোটি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করে দরপত্র কার্যক্রম নেওয়ার বিষয়ে পরবর্তীতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সংশোধনের সময় প্রতিফলনের শর্তে কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের আগের অনুমতি নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পরবর্তীতে ডিপিপি সংশোধনের সময় প্রতিফলনের শর্তে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কাম ডরমিটরি ভবন রাজশাহীর পরিবর্তে বগুড়া এবং তিনটি ইউনিট অফিস কাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের স্থান দৌলতপুরের পরিবর্তে ঘিওর, ফরগাঁওয়ের পরিবর্তে মুক্তাগাছা ধরা হয়েছে। হাটহাজারীর পরিবর্তে কুড়িগ্রাম সদরে পরিবর্তনের বিষয়ে এ বিভাগের আগে অনুমতি নেওয়া হয়েছে। এই বিষয়গুলো প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপিতে অন্তভুক্ত করা হয়েছে।
আরও বলা হয়েছে, সার্কেল অফিস, রিজিয়ন অফিস, ট্রেনিং ডরমিটরি ভবনে লিফট, জেনারেটর ও সোলার ষ্টিট লাইট এবং রেস্ট হাউজ, ট্রেনিং রুম ও কনফারেন্স রুমের জন্য এসি ও রেফ্রিজারেটর অন্তর্ভুক্তসহ পর্যাপ্ত সংখ্যক আসবাবপত্রের সংস্থান রেখে দ্বিতীয় সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া নতুন দু’টি সার্কেল অফিস ভবন কাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, একটি রিজিয়ন অফিস ভবন কাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র , তিনটি ইউনিট অফিস কাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, তিনটি গেট নির্মাণ এবং অতিরিক্ত ৫৮০ রানিং মিটার সীমানা প্রাচীর, তিনটির স্থান পরিবর্তনসহ চারটি গুদাম মেরামত, ছয়টির স্থান পরিবর্তনসহ ১০টি অফিস ভবন সংস্কার, অতিরিক্ত ৪৫ হাজার ৩১ বর্গফুট রাস্তা সংস্কার এবং ১৭ হাজার ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন কাজ নতুনভাবে দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের মতামত
পিইসি সভার কাগজপত্র থেকে জানা যায়, উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ চট্টগ্রাম সার্কেল অফিস ভবন, দুই সার্কেল অফিস ভবন কাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং পাঁচটি রিজিয়ন অফিস কাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ কাজে আনুষঙ্গিক কিছু কাজ সম্পন্ন করার জন্য প্রতিটিতে গড়ে ১০ লাখ টাকা এবং পাঁচটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কাম ডরমিটরির প্রতিটিতে গড়ে ২০ লাখ টাকা বৃদ্ধি করে মোট এক কোটি ৮০ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। এ সকল আইটেমের বিস্তারিত ব্যয় বিভাজন ডিপিপিতে সংযোজন করা হয়নি, যা সংযোজন করা আবশ্যক। এরমধ্যে একটি সার্কেল অফিস, দু’টি রিজিয়ন অফিস নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে এবং একটি সার্কেল অফিস, তিনটি রিজিয়ন অফিস, চারটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কাম ডরমিটরি নির্মাণ কাজ চলমান আছে।
আরও বলা হয়েছে, পাবনা ও ফরিদপুরে ৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে নতুন দু’টি সার্কেল অফিস ভবন কাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, খুলনাতে তিন কোটি ৯০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে একটি রিজিয়ন অফিস ভবন কাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং সুজানগর, কিশোরগঞ্জ ও মিঠাপুকুর উপজেলায় তিন কোটি ৭৮ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে তিনটি ইউনিট অফিস কাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া অতিরিক্ত ৫৮০ রানিং মিটার সীমানা প্রাচীর নির্মাণ বাবদ আট লাখ দুই হাজার টাকা এবং তিনটি নতুন গেট নির্মাণ বাবদ ৫০ লাখ ৪০ হাজার টাকাসহ মোট ১৮ কোটি টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে নতুন ভাবে প্রস্তাবিত এ সকল নির্মাণধর্মী কার্যক্রম বাদ দেওয়া যেতে পারে।
সর্বশেষ অনুমোদিত ডিপিপিতে ৫৮টি অফিস ভবন সংস্কার বাবদ ১২ কোটি ৩২ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এরমধ্যে ৪৮টি ভবন সংস্কার শেষ হয়েছে এবং চারটির কাজ চলমান। ছয় অফিস ভবন মেরামতের প্রয়োজন নেই। অপরদিকে ১০টি অফিস ভবন মেরামত প্রয়োজনীয় বিবেচনায় ৬২ অফিস ভবন মেরামত বাবদ দুই কোটি ৪৮ লাখ টাকা বাড়িয়ে ১৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন প্রস্তাবিত ১০ অফিস ভবন সংস্কার কাজ প্রকল্প প্রস্তাব থেকে বাদ দেওয়া যেতে পারে।
এছাড়া প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রকল্পের কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের উৎসাহ দিতে ভ্রমণ ভাতা বা ওভার টাইম ও প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে হবে। তাই মূল ডিপিপিতে উল্লেখ থাকায় অতিরিক্ত এক বছরের জন্য ভ্রমণ ভাতা বাবদ অতিরিক্ত ১৮ লাখ টাকা, তেল ও জ্বালানী খাতে অতিরিক্ত ৪৪ লাখ টাকা, মনিহারী, সিল ও ষ্ট্যাম্প বাবদ অতিরিক্ত ২৩ লাখ ২০ হাজার টাকা, অন্যান্য ব্যয় বাবদ অতিরিক্ত ১৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা , যানবাহন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ অতিরিক্ত ২১ লাখ টাকা , কম্পিউটার মেরামত বাবদ অতিরিক্ত ২০ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।
সারাবাংলা/জেজে/ইআ