চর্চা না থাকায় হারিয়ে যাচ্ছে সাদ্রি ভাষা
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৮:২০
জয়পুরহাট: প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা না থাকায় হারিয়ে যাচ্ছে সাদ্রি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষা। তবে চলতি বছর জেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে সাদ্রি ভাষার বই। কিন্তু শিক্ষক না থাকায় বইগুলো রপ্ত করতে পারছে না ওই সম্প্রদায়ের শিশুরা। ফলে মাতৃভাষাটি ভুলতে বসেছে তারা।
জানা যায়, প্রায় এক লাখ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন জয়পুরহাট জেলায়। যাদের অধিকাংশের বসবাস পাঁচবিবি উপজেলায়। সাঁওতাল, মাহাতো, পাহান ও ওঁড়াও’সহ ১৩ গোত্রের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বাস করেন এখানে। এর মধ্যে অধিকাংশই কথা বলেন সাদ্রি ভাষায়। যা হাজার বছরের চর্চার মধ্য দিয়ে বিকশিত হয়েছে এই ভাষা। কিন্তু এসব ভাষার বই পড়ানোর জন্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি বিদ্যালয়গুলোতে। ফলে বইগুলো শিশুদের কোনো কাজেই আসছে না। পারিবারিকভাবে এই ভাষার চর্চা অব্যাহত থাকলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চর্চা না থাকায় নিজেদর মাতৃভাষা ভুলতে বসেছে এই নৃগোষ্ঠীর শিশুরা।
পাঁচবিবি উপজেলার কাঁশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বর্ষা মাহাতো বলেন, ‘আমরা স্কুলে খালি বাংলা ও ইংরেজি পড়ি। তাই আমরা বাড়িতে গিয়েও বাংলা ভাষায় কথা বলি। আমাদের ভাষা বলতে পাড়ি না।’
আরেক শিক্ষার্থী অমিত পাহান বলেন, ‘আমাদের স্কুলে তো আমাদের ভাষায় পড়ায় না। খালি বাংলা ভাষা পড়ায়। তাই আমরা আমাদের মায়ের ভাষা বলতে পারি না, লিখতেও পারি না।’
রতন মাহাতো বলেন, ‘আমাদের পূর্ব পুরুষরা সাদ্রি ভাষায় কথা বলতে পারলেও আমরা এখন পারি না। কারণ স্কুলে আমরা বাংলা ভাষা শিখে বড় হয়েছি। আমরা চাই সরকার স্কুলগুলোতে আমাদের ভাষায় শিক্ষাদান চালু করুক।’
কাঁশপুর আদিবাসী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক চিত্ত কুমার মাহাতো বলেন, ‘আগে পারিবারিকভাবে এ ভাষার প্রচলন থাকলেও এখন বাংলা ভাষার ব্যবহার বেড়ে গেছে। সরকারি উদ্যোগ আর প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগ দিলেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সাদ্রি ভাষা সংরক্ষণ করা সম্ভব। তা না হলে সম্ভব না।’
আদিবাসীদের সংগঠন পামডোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হৈমন্তী সরকার দেবী বলেন, ‘সরকার আমাদের ভাষার বই দিলেও তা পাঠদানের জন্য কোনো শিক্ষক দেয়নি। আমরা চাই আমাদের ভাষা টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা হোক। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের চেতনাই হলো, কোনো জনগোষ্ঠীর ভাষা হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। ভাষা আন্দোলনের চেতনা তখনই সার্থক হবে, যখন প্রতিটি জনগোষ্ঠী তার নিজের মায়ের ভাষায় কথা বলতে পারবে, মাতৃভাষায় শিক্ষালাভ করতে পারবে, শিল্প-সাহিত্য সৃষ্টি করতে পারবে।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের ভাষায় পারদর্শী শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এর মাধ্যমে এ অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজনের ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চা করা সম্ভব হবে।’
সারাবাংলা/এনএস