তেহরানে ভাষা শহীদ স্মরণে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৬:৪৩
তেহরানস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি দুই দিনব্যাপী মহান ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করেছে। ইউনেস্কো আঞ্চলিক অফিস এবং এশিয়ান কোঅপারেশন ডায়ালগ (এসিডি)- এর সাংস্কৃতিক সমন্বয় কেন্দ্রের সহায়তায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দূতাবাস। ঢাকায় পাওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
আয়োজনে ইউনেস্কো ও এসিডির আঞ্চলিক অফিসপ্রধান ও কর্মকর্তারা ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, সিরিয়া, লেবানন, মঙ্গোলিয়া, ইরান ও তেহরানে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রী, প্রবাসী বাংলাদেশি, স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিনিধি এবং দূতাবাসের কর্মকতা-কর্মচারীরা সপরিবার অংশ নেন।
প্রথম দিন (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা, শহীদমিনারের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো, শহীদদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা ও মোনাজাত করা হয়। এসময় দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনানো হয়।
উল্লেখ্য যে, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে ইরানে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় ২২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বৃহত্তর পরিসরে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভায় বক্তারা ভাষাশহীদ দিবসের তাৎপর্য এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রাসঙ্গিকতার ওপর আলোকপাত করেন। দূতাবাসের কাউন্সেলর মো. হুমায়ুন কবিরের সঞ্চালনায় এ সভায় স্বাগত বক্তব্যে কমার্সিয়াল কাউন্সেলর মো. সবুর হোসেন অমর একুশের প্রেক্ষাপট এবং দিবসটি কীভাবে ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষিত হল তা বর্ণনা করেন।
এসিডি সাংস্কৃতিক সমন্বয় কেন্দ্রের সভাপতি মো. ইসা রেজাজাদেহ মহান ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। ভাষা-দার্শনিকদের উদ্ধৃত করে তিনি বলেন যে, নতুন একটি ভাষা শেখার অর্থ কেবল কিছু নতুন শব্দ শেখাই নয়, বরং একটি নতুন চিন্তাপদ্ধতি শেখা। কোনো একটি ভাষা হারিয়ে গেলে তার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট জ্ঞানের বিশ্বও হারিয়ে যায়।
ইউনেস্কোর আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান স্ফেতান স্ফেতকভস্কি ইউনেস্কো ঘোষিত এ বছরের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতিপাদ্য “ভাষার কোনো সীমানা নেই” (ল্যাঙ্গুয়েজ উইদাউট বর্ডারস) এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন এবং বিলুপ্তপ্রায় ভাষাসমূহ সংরক্ষেণর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
আলোচনা অনুষ্ঠানের সভাপতি ইরানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এএফএম গওসোল আযম সরকার গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে বাংলা ভাষার অধিকারের দাবিতে প্রাণ উৎসর্গকারী শহীদদের আত্মত্যাগ এবং ভাষা আন্দোলনের সূচনা থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের মধ্যেই জাতীয় ঐক্য ও পরিচিতির বীজ নিহিত ছিল যা পরবর্তীতে স্বাধীনতা আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রেরণা যুগিয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাস বিনির্মাণে দিনটির ভূমিকা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত সর্বস্তরে বাংলা ভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখার পাশাপাশি ভাষাবৈচিত্র সংরক্ষণ করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আর্ন্তাতিক মাতৃভাষা দিবসের মূল বার্তা হলো ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র সংরক্ষণ করা এবং পৃথিবীর বুক থেকে লোকজ সংস্কৃতির আধার ভাষাসমূহকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা। ইউনেস্কো কর্তৃক ১৯৯৯ সালে মহান ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার পেছনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভূমিকার কথা আলোকপাত করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘ভাষাবৈচিত্র রক্ষায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার ও উদ্যোগের অংশ হিসেবে তিনি ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিউট স্থাপন করেছেন।’
আলোচনা শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এতে প্রবাসী বাংলাদেশি, ছাত্রছাত্রী এবং শিশুরা নাচ, গান ও কবিতা আবৃত্তি করে। দিবসটি উপলক্ষে দূতাবাস প্রাঙ্গন অমর একুশে সম্পর্কিত পোস্টার ও ব্যানার দিয়ে বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হয়।
সবশেষে উপস্থিত সবাইকে বাংলাদেশি খাবার দ্বারা আপ্যায়ন করা হয়। বিদেশি অতিথিরা বাংলাদেশি খাবারের পরিবেশনা ও স্বাদের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
সারবাংলা/এমএম