Thursday 08 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পুরুষও মানুষ—তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের খোঁজ কি রাখি আমরা?

সানজিদা যুথি
৮ মে ২০২৫ ১৯:৫৪ | আপডেট: ৮ মে ২০২৫ ২০:২৪

একজন ছেলে যখন উপার্জন করা শুরু করে, তখনই তার কাঁধে উঠে আসে এক অদৃশ্য কিন্তু অসহনীয় দায়িত্বের ভার। প্রথমে বাবা-মা, তারপর ভাই-বোন, এরপর স্ত্রী-সন্তান—সবাই যেন তার দিকে চেয়ে থাকে। পরিবার, সমাজ এমনকি প্রিয়জনদের চাওয়ার তালিকায় সবচেয়ে ওপরে থাকে ‘সে কী দিতে পারছে’, কিন্তু কেউ ভাবে না, ‘সে কেমন আছে?’আমরা ভুলে যাই—পুরুষরাও মানুষ। তাদেরও ভালো লাগা আছে, শখ আছে, ভাঙার মতো মন আছে। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই তাদের শেখানো হয়, ‘ছেলেরা কাঁদে না’, ‘তুমি মেয়ে না যে দুর্বলতা দেখাবে।’ সেই থেকে শুরু হয় তাদের অনুভূতিগুলোকে গলা টিপে ধরে রাখার অভ্যাস।

বিজ্ঞাপন

সংসারের দায়িত্ব পালন করতে করতে একজন পুরুষ কখন যে নিজের অস্তিত্বকে বিসর্জন দেন, তা তিনি নিজেও জানেন না। স্ত্রীর অভিযোগ, মায়ের আবদার, সন্তানের চাহিদা, অফিসের চাপ—সবকিছু সামলে যখন নিজের একটা জায়গা খোঁজেন, তখন কোথাও সেই জায়গা মেলে না। এর মধ্যে আবার বৌ-শাশুড়ির দ্বন্দ্বে পড়ে যায় পুরুষটি। মা-কে কিছু বললে সে হয় ‘মায়ের প্রতি অকৃতজ্ঞ’, আর স্ত্রীকে কিছু বললে হয় ‘স্ত্রীর প্রতি অবিচারকারী’। এই দ্বন্দ্বে পড়ে সে চুপসে যেতে থাকে। ধীরে ধীরে তার ভেতরের সমস্ত আলো নিভে যায়।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি বাংলাদেশের এক তরুণ পুলিশ কর্মকর্তা আত্মহত্যা করেছেন। সামাজিক চাপ, পারিবারিক টানাপোড়েন—সব মিলে মানসিকভাবে এতটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি যে জীবনের শেষ সিদ্ধান্তটি নিয়ে ফেলেছেন। এই ঘটনা কেবল একজনের মৃত্যু নয়, এটি আমাদের সমাজের এক ভয়াবহ বাস্তবতার নগ্ন প্রকাশ।

আমাদের ভাবা উচিত, আমরা নারীরা কি সত্যিই পুরুষদের অনুভূতির প্রতি যত্নশীল? আমরা কি কখনও জিজ্ঞেস করি, ‘তুমি কেমন আছো?’—শুধু দায়িত্ব পালনের জন্য নয়, তার মনটা কেমন আছে, তা জানার জন্য? তাই মানসিক স্বাস্থ্য শুধু নারীর নয়, পুরুষেরও প্রয়োজন। বরং তারা বেশি একা, বেশি চুপচাপ। কারণ তারা জানে, তাদের কষ্টের কথা শোনার কেউ নেই। তাই সমাজ হিসেবে, পরিবার হিসেবে, জীবনসঙ্গী হিসেবে আমাদের দায়িত্ব পুরুষের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া। একটা সময় আসবে, যখন ‘শক্ত পুরুষ’ নয়, ‘সচেতন মানুষ’ হয়ে ওঠাটাই হবে বড় পরিচয়। পুরুষরাও কাঁদে—তাদের কান্নাকে সম্মান করুন।

পুরুষের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য আমরা কিছু টিপস ফলো করতে পারি_

১. নিজের অনুভূতি স্বীকার করুন

নিজেকে শক্ত প্রমাণ করতে গিয়ে কষ্ট চেপে রাখবেন না। কাঁদতে ইচ্ছে করলে কাঁদুন। নিজের আবেগ প্রকাশ করাটাই সাহসের পরিচয়।

২. একজন বিশ্বাসযোগ্য বন্ধু রাখুন

মন খারাপ হলে যার সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পারেন, এমন একজন বন্ধু বা আত্মীয় রাখুন। কথা বলা অনেক সময় ওষুধের থেকেও বেশি কাজ করে।

৩. না বলতে শিখুন

সবসময় ‘আমি পারব’ বলার দরকার নেই। আপনারও সীমাবদ্ধতা আছে। পরিবার বা অফিসে নিজের সীমা বুঝিয়ে দিন।

৪. নিজের জন্য সময় রাখুন

প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট নিজের জন্য রাখুন—হোক সেটা জগিং, গান শোনা, বই পড়া বা চুপচাপ বসে থাকা।

৫. শখের চর্চা করুন

ছবি আঁকা, গান গাওয়া, গার্ডেনিং—যে কোনো সৃজনশীল কাজে নিজেকে যুক্ত রাখুন। শখ মানসিক চাপ কমাতে অসাধারণ কাজ করে।

৬. শরীরচর্চা করুন

নিয়মিত ব্যায়াম, হাঁটা বা দৌড়ানোর মাধ্যমে শরীরে ভালো হরমোন নিঃসৃত হয় যা মনকে ভালো রাখে।

৭. সাহায্য চাইতে ভয় পাবেন না

মানসিকভাবে ভেঙে পড়লে কাউন্সেলর, সাইকোলজিস্ট বা থেরাপিস্টের সাহায্য নিন। এটি দুর্বলতা নয়, সচেতনতা।

৮. সামাজিক চাপকে ‘না’ বলুন

আপনি কে কী ভাববে সেটা না ভেবে নিজের মানসিক শান্তিকে গুরুত্ব দিন। সবকিছু পারফেক্ট হতে হবে—এই চাপ নিজের উপর দেবেন না।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক

সারাবাংলা/জিএস/এএসজি

পুরুষ মানসিক স্বাস্থ্য লাইফস্টাইল সানজিদা যুথি সুস্থ থাকুন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর