মনের মত গহনা
২৮ জুন ২০১৮ ১৩:২২
সাবরিনা শারমিন বাঁধন।।
একটা সময় ছিল মেয়েরা কেবল সোনার গহনাই পরতো। কিন্তু সময়ের আবর্তনে সাজগোজের ধরন বদলেছে। তাই বিয়ে মানেই কনে গৎবাধা সোনার গহনা পরবে, তা নয়। বিয়ের কনে এখন কুন্দন, মিনাকারী, মুক্তা কিংবা পাথর সেটিং রুপা বা সোনার পানিতে ধোয়া রুপা গহনা পরে শাড়ি কিংবা ল্যাহেঙ্গার সাথে। গায়ে হলুদে ফুলের গহনাই চলে সবচেয়ে বেশি। তারপরও বৈচিত্র আনতে কৃত্রিম ফুল, কাঠ, বিডসের গহনার চলও এসেছে।
বিয়েবাড়িতে নিমন্ত্রিত অতিথিরাও আজকাল শুধু সোনার গহনা পরেন না। পোশাকের সাথে মিলিয়ে মেটাল, পাথরের গহনা বেছে নেন। কেউ বিয়ে কিংবা অন্যকোন অনুষ্ঠানে গহনা উপহার দিতে চাইলেও অনেকেই সোনা ছেড়ে এখন উপহার দিচ্ছেন রূপা, মেটাল বা পাথের সেট করা গহনা।
কিছুদিন আগেও গহনা পরার চল বেশি ছিল বিবাহিত ও একটু বয়সী মেয়েদের মধ্যে। এখন সব বয়সী মেয়েই গহনা পরছে। কেবল শাড়ির সাথেই নয়, প্যান্ট টপ কিংবা সালোয়ার কামিজের সাথেও চলে নানারকম গহনা।
গহনার নকশাও বদলেছে অনেক। ম্যাট, অক্সি, কপার কালারের চল এখন বেশি। রকমারি পাথর বসানো নতুন বাহারি গহনা এসেছে। রুপায় মিনা করা গহনা, মুক্তা, জাংক জুয়েলারি এখন চলছে বেশি। যে কোন উৎসবে মেয়েরা নিজেদের এমন সব গহনায় সাজায়। এছাড়া এখন হাতে আঁকা গহনাও চলছে বেশ। হাতে আঁকার পাশাপাশি এতে যুক্ত হচ্ছে রুদ্রাক্ষ, পুঁতি, কড়ি, হাড়। ফলে এতে আলাদা আবেদন তৈরি হচ্ছে। আবার টাইডাই করা কাপড় কি গ্রামীন চেক পেঁচিয়ে তৈরি হচ্ছে ইউনিক চুড়ি যা মেয়েরা পরছে পোশাকের সাথে মিলিয়ে।
এখন নকশাদার কাজ চলছে বেশি। ত্রিভুজ কি গোলাকারের পাশাপাশি আছে মুখের অবয়ব, প্রজাপতি। আবার জমকালো পোশাকের জন্য আছে ধাতুর দুল থেকে গলার মালা। পুঁতি বিডসের গহনাও আছে হরেক রকম। কয়েক লহরির মালা রয়েছে এবার পছন্দের শীর্ষে।
কানপাশা, দুল,মাকড়ি, চুড়ি, ব্রেসলেট, বালা,পায়েল, বাজু, হাতের আংটি, পায়ের আংটি, চুলের কাটাসহ আরও নানা ধরনের গয়না পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া পাওয়া যাচ্ছে ইয়োকের গয়না, মাটির লকেটের সাথে কাপড়ের মালা কিংবা কড়ির সংমিশ্রন।
হাতে আজকাল তরুণীরা বালা বা সিঙ্গেল চুড়ি ও ব্রেসলেট পরতে পছন্দ করে। চুড়ি বা ব্রেসলেটেও কড়ি, বিডস্, সুতা, হাড়, পুঁতির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
এখন আফগানি দুল ও নেপালি মালার চাহিদা বেশি সাথে বাহারি নথ ও বাজুবন্ধ। সোনার গহনার কদর কিছুটা কম থাকলেও অনেকে কিনছেন বিয়ে উপলক্ষ করে। শিমুল আহমেদ এসেছেন বসুন্ধরা সিটিতে একটি স্বর্ণের দোকানে। বললেন, সামনে মেয়ের বিয়ে। কিছু গহনা তো দিতে ইচ্ছা হয় তাই এখন কিনে রাখছি।
দেশি ফ্যাশন হাউজগুলো ক্রেতার পছন্দমত বিভিন্ন ডিজাইনের ধাতু কিংবা সুতা, কাপড়, পুঁতি ও কাঠের গহনা বানায়।
জনপ্রিয় ফ্যাশন হাউজ আড়ং’র বিক্রয়কর্মীরা জানান, রুপার ছোট ঝুমকা, কানের দুল ও রুপার উপর পলা বেশি পছন্দ করেন ক্রেতারা। সাথে কাঠ, সুতা, পুঁতি কিংবা অন্যান্য ধাতু তো আছেই।
ফ্যাশন হাউজ বিশ্বরঙ, অঞ্জনস, কে ক্র্যাফট, বিবিয়ানা তৈরি করেছে হরেক রকমের গয়না। তারা বলছেন, এখন চোকার ও লম্বা মালার চাহিদা বেশি। কাঠ কিংবা ধাতুর চোকার ক্রেতারা পছন্দ করছে।
অপরদিকে ব্যস্ততা, যানজটের ঝক্কি এড়াতে অনলাইনে কেনাকাটাকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন অনেকে।
অনলাইনে দেশি, ইন্ডিয়ান, নেপালী গহনা বিক্রি হচ্ছে। অনেকে ইন্ডিয়ান কিংবা নেপালী মেটেরিয়াল সংগ্রহ করে নিজেই নানারকম গয়না বানিয়ে সন্তুষ্ট করছেন ক্রেতাদের।
তবে হাতে তৈরি গহনার চাহিদা বাড়ছে। বিশেষ করে কাঠের ওপর হাতে আঁকা চিত্রপটের গহনা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
জনপ্রিয় অনলাইন গয়নার পেজ আরটোপলিস এর স্বত্বাধিকারী সুমাইয়া সায়েদ বলেন, আজকালকার মেয়েরা যেকোনো পোশাকের সাথেই গহনা পছন্দ করে। যেকোন পোশাকের সাথেই কাঠের বিডস্, ফেল্ট ফেব্রিক, মেটালের তৈরি গহনা পরে। এই মেটেরিয়ালগুলো সব বাংলাদেশে পাওয়া যায়না। ফলে ইন্ডিয়া, চায়না, নেপাল থেকে আনাতে হয়। কাজেই দাম একটু বেশিই হয়। তারপরও গহনায় ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়ছে। তবে গরমে ঈদ বলে হালকা কিন্তু ইউনিক গহনাই বেছে নিচ্ছেন বেশিরভাগ ক্রেতা।
অনলাইন পেজ স্বাক্ষর এর স্বত্বাধিকারী নওরীন জাহান একজন চিত্রশিল্পী। সখ থেকে হাতে গহনা বানান। তিনি বলেন, একটা পেইন্টিংয়ের মতই ভালোবাসা থাকে আমার হাতে বানানো গহনায়। সবাই সময়ভেদে হাল্কা বা ভারি গহনা চায়। বিষয়গুলো মাথায় রেখেই গহনা বানাই। এই গরমে সবাই হালকা গলার মালা কিংবা দুল চান। তবে মেয়েরা নেপালি ট্রাইবাল গহনা চায় বেশি।
এছাড়া ঈদ, পয়লা বৈশাখসহ নানা উৎসবকে ঘিরে বছরজুড়ে আয়োজন করা হচ্ছে নানা ধরনের মেলা। সেখানেও পছন্দমত গয়না পাওয়া যায়। আর হাতের নাগালে হকার্স মার্কেট, চাঁদনীচক,নিউমার্কেট তো আছেই। সেখানে পাওয়া যাবে মনের মত গহনা এবং দামও একদম সাধ্যের মধ্যেই।
মডেল- প্রিয়তা,বীথি, ঝিলমিল, মম ও রথী
সারাবাংলা/এসএস
আধুনিক গহনা কাঠের গহনা কানের দুল গহনা চুড়ি নেপালি গহনা ভিন্নধর্মী গহনা মাটির গহনা মালা রুপার গহনা