Thursday 26 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

একটা ক্ষমা আর এক কাপ চা; কারন আজ ‘ক্ষমা দিবস’

ফারহানা নীলা
২৬ জুন ২০২৫ ১৩:১৮

ধরুন, সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখলেন—ফোনে একগাদা ‘স্যরি’ মেসেজ। কারোটা দুই লাইনের, কারোটা আবার একেবারে কবিতা। আজ যে ক্ষমা দিবস— সেটা বুঝতেই আর সময় লাগে না!

হ্যাঁ, আজ ২৬ জুন, বিশ্ব ক্ষমা দিবস। এটা সেই দিন, যেদিন আপনি ইচ্ছে করলেই আপনার ‘এক্স’কে মাফ করতে পারেন (যদিও সেটা ওর ‘ডিজার্ভ’ করার ওপর নির্ভর করে!), ছোটবেলার সেই বন্ধুকে ক্ষমা করতে পারেন যে আপনার চকলেট না বলে খেয়েছিল, কিংবা অফিসের কলিগকে যিনি আপনার লাঞ্চবক্সে হাত দিয়েছিলেন- ভুল করে।

ক্ষমা করা কি সত্যিই সহজ?

না, মোটেই না! বিশেষ করে যাদের নাম শুনলেই মেজাজ গরম হয়ে যায়—তাদের ক্ষমা করা একটা কঠিন ব্যায়াম। কিন্তু এই দিনটা মনে করিয়ে দেয়, মাফ করা মানে দুর্বলতা নয়। বরং এটি নিজের মন হালকা করার একটা বড় সুযোগ।

বিজ্ঞাপন

একটু ভেবে দেখুন তো, আপনিও তো কাউকে কষ্ট দিয়েছেন হয়তো। আর আপনার জন্যও কেউ আজ ‘Forgiveness Day’ দেখে বলে ফেলেছে— ‘আচ্ছা, ওকে ক্ষমা করেই দিই’।

বিজ্ঞান কী বলে?

মানসিক স্বাস্থ্যের গবেষণা বলছে—ক্ষমা করতে পারা মানুষের ঘুম ভালো হয়, রক্তচাপ কমে, এমনকি হাসিও বেশি আসে! তো, যারা দিনে ৭ বার ‘পাইসেন না?’ বলেন, আজ তাদের একবার ‘ক্ষমা করলাম ভাই’ বলেই দিন। হালকা লাগবে।

মজার কিছু ক্ষমা মুহূর্ত _

আপনার ভাই যিনি ছোটবেলায় আপনার খেলনা ভেঙে ফেলেছিল, আজ বলছে: ‘ভুল হয়েছে বোন, ক্ষমা করো।’

বান্ধবী যে আপনার ডায়েট চলাকালীন আপনার সামনে ফুচকা খেয়েছিল, বলছে, ‘আমি বুঝতে পারিনি তুমি এত সিরিয়াস ছিলে!’

বিশ্ব ক্ষমা দিবস (Forgiveness Day) একটি অপ্রাতিষ্ঠানিক, কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্য ও মানবিক সম্পর্ক জড়িত একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এটি জাতিসংঘ ঘোষিত নয়, তবে বিভিন্ন সামাজিক, ধর্মীয় ও মানবাধিকার সংগঠন, বিশেষত পশ্চিমা বিশ্বে, বেশ গুরুত্ব দিয়ে পালন করে থাকে।

দিবসটি কবে থেকে পালন শুরু হয়?

বিশ্ব ক্ষমা দিবস কবে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পালিত হচ্ছে—তা নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো রেকর্ড নেই। তবে ধারণা করা হয়- ১৯৯৪ সালের পরবর্তী সময় থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কিছু খ্রিস্টান ধর্মীয় গোষ্ঠী, বিশেষত ‘Christian Embassy’ বা কিছু ‘forgiveness movement’-এর অংশ হিসেবে দিবসটি পালন শুরু করে।

এর মূল প্রেক্ষাপট ধর্মীয়, সামাজিক এবং আত্মশুদ্ধির ধারণার সঙ্গে সম্পর্কিত।
কিছু ক্ষেত্রে দিবসটি প্রতি বছরের ২৬ জুন, আবার কিছু দেশে বা সংস্থায় আগস্ট মাসের প্রথম রবিবারে পালিত হয়। তবে ২৬ জুন দিনটি সোশ্যাল মিডিয়া ও কিছু আধুনিক সচেতন নাগরিক সমাজে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

বিশ্বে কারা পালন করে?

১. ধর্মীয় সম্প্রদায় ও সংগঠন

বিশেষ করে খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও ইসলাম ধর্মে ক্ষমাকে একটি মহৎ গুণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। চার্চ, মসজিদ বা ধর্মীয় বক্তৃতায় ‘ক্ষমা’র গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়।

২. মেন্টাল হেলথ ও কাউন্সেলিং সংগঠন

বিভিন্ন সাইকোথেরাপি বা মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সংগঠন এই দিবসে ক্ষমার উপকারিতা তুলে ধরে ক্যাম্পেইন চালায়। সেলফ-হিলিং, ট্রমা রিকভারি বা ইননার পিস প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে ক্ষমার ওপর জোর দেওয়া হয়।

৩. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও তরুণদের সংগঠন

বিশেষত পশ্চিমা দেশের স্কুল-কলেজে এই দিন উপলক্ষে ‘ক্ষমা চাওয়ার চিঠি লেখা’, ‘ক্ষমা বোর্ড’ বা ‘I’m Sorry Booth’ এর আয়োজন করা হয়।

৪. সোশ্যাল মিডিয়া ও ইউথ মুভমেন্ট

তরুণ প্রজন্ম এখন এই দিবসটিকে নিজের সম্পর্ক, পরিবার, বন্ধুত্ব ঠিক করার একটা ‘দরজা’ হিসেবে ব্যবহার করে।

ইনস্টাগ্রাম বা ফেসবুকে ‘Forgiveness Challenge’ বা ‘Let It Go’ হ্যাশট্যাগে নানা কনটেন্ট ছড়ায়।

ক্ষমা পাঠানোর আইডিয়া _

একটা নোট লিখুন- ‘তোমার করা ভুলগুলোর জন্য আজ তোমাকে মাফ করলাম… কাল আবার শুরু করলে আবার চিন্তা করব!’

ফেসবুকে একটা পোস্ট দিন: ‘যারা আমাকে কষ্ট দিয়েছে, আজ তোমাদের মাফ করলাম। কিন্তু সাবধান, আবার দিও না!’

ক্ষমার ফাইনাল ভাবনা _

ক্ষমা মানে ভুলে যাওয়া নয়, বরং সেই ব্যথার উপর একটুকরো শান্তির ছায়া ফেলে দেওয়া। কিছু সম্পর্ক আবার গড়া যায় না, কিন্তু নিজের মনের জঞ্জাল পরিষ্কার করে নেওয়া যায়—ক্ষমার শক্তি দিয়ে।

সবশেষে _

জীবন ছোট, অভিমান রাখার জায়গা খুবই কম। ভালো থাকুন, হালকা থাকুন। আর কেউ আপনাকে মাফ না করলেও—নিজেকে মাফ করতে কখনো ভুলবেন না।

তো চলুন, আজ অন্তত একবার মন থেকে বলি: ‘ঠিক আছে, তোমাকে মাফ করলাম। এবার চা খাওয়াও।’

সারাবাংলা/এফএন/এএসজি

বিশ্ব ক্ষমা দিবস