Tuesday 08 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বর্ষায় শিশুকে সুরক্ষিত রাখার উপায়

সারাবাংলা ডেস্ক
৮ জুলাই ২০২৫ ১৮:০০

প্রকৃতিতে এখন বর্ষাকাল। গ্রীষ্মের তাপদাহের পর বর্ষা আসে বৃষ্টির স্বস্তি নিয়ে। কিন্তু বর্ষার আগমনের সাথে সাথে দেখা দেয় নানা রোগের। যা নিঃসন্দেহে আপনার শিশুর জন্য ক্ষতিকর। তাই পরিবারের ছোট সদস্যকে এই মৌসুমে নিরাপদ ও আরামে রাখতে প্রয়োজন সচেতনতা। কিছু বাড়তি দায়িত্ব।

আসুন জেনে নেই বর্ষাকালে শিশুকে যত্ন নেয়ার কিছু বাড়তি কৌশল …

ঘরের পরিবেশ শুষ্ক ও পরিচ্ছন্ন রাখা

পরিষ্কার ও শুষ্ক ঘরের পরিবেশ শিশুর নিরাপত্তা ও সুস্থতার জন্য জরুরি। জীবাণুর বিস্তার এড়াতে শিশুর খেলনা পরিষ্কার ও জীবাণুরোধী করে নেয়া প্রয়োজন।

সেসঙ্গে ঘরে পর্যাপ্ত আলো বাতাস চলাচল আর্দ্রতা ও জীবাণুর বিস্তার কমায়। সরাসরি ভেজা বা আর্দ্র স্থানে বসে থাকা সংবেদনশীলতা ও সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। শিশুর থাকার স্থান পরিচ্ছন্ন ও শুষ্ক হলে শ্বাসনালীর সমস্যাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকটাই হ্রাস পায়।

বিজ্ঞাপন

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা

বর্ষায় হঠাৎ পরিবেশ অনেক গরম হলে দীর্ঘসময় ধরে ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করানো বা বৃষ্টি হচ্ছে পরিবেশ ঠাণ্ডা বলে একদমই গোসল করানো হলো না এটা ঠিক নয়। শিশুকে মোটামুটি ২৫ ডিগ্রি তাপমাত্রার পানি দিয়ে ১০-১৫ মিনিট শরীর, মাথা, হাত-পা, চোখ ভালো করে ধোয়াতে হবে। শরীর ও মাথা ধোয়ানোর সময় সাবান বা স্যাভলন-জাতীয় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ব্যবহার করা আবশ্যক। এ ছাড়া ফুটন্ত পানি ঠাণ্ডা করে চোখ ও মুখমণ্ডল পরিষ্কার করা উত্তম।

উপযুক্ত পোশাক

শিশুকে পাতলা সুতির কাপড় পরাতে হবে। বৃষ্টিতে পরিবেশ ঠাণ্ডা থাকলেও শিশুর দেহের একটা তাপমাত্রা আছে। ফেনিল বা উলের কাপড় পরিয়ে বর্ষার শীত থেকে শিশুকে রক্ষা করার কিছু নাই। এতে আরও তাদের দেহের তাপমাত্রা আটকে গিয়ে গরমে ঠাণ্ডা বা জ্বর বেঁধে যেতে পারে।

খাবার ও পানি

শিশুকে নিরাপদ পানীয় জল সরবরাহ করতে হবে এবং যেহেতু বর্ষায় মাছি প্রজনন করে, তারা নানাবিধ রোগ তাদের পাখা ও পায়ের মাধ্যমে খাদ্যে ছড়াতে পারে। তাই সবসময় খাবার ঢেকে রাখতে হবে। আর প্রতিবার খাদ্য পরিবেশন করার আগে ভালোভাবে গরম করে, ঠাণ্ডা করে কুসুম গরম অবস্থায় পরিবেশন করতে হবে। পানীয় জলের ফিল্টার পরিষ্কার রাখতে হবে অথবা পানি ফুটিয়ে জীবাণুমুক্ত করে শিশুকে খেতে দিতে হবে। না হলে ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েডের মতো পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি থেকে যাবে।

ভেজা ডায়াপার এড়িয়ে চলা

বর্ষাকালে ভেজা ডায়াপার শিশু র‌্যাশ ও অস্বস্তি সৃষ্টি করে। তাই ডায়াপার ভিজে উঠেছে কিনা তা কিছুক্ষণ পর পর দেখে নেওয়া প্রয়োজন।

শিশুকে নিরাপদ ও সুস্থ রাখতে ভেজা ডায়াপার পালটে দিতে হবে। আর হালকা, আরামদায়ক উন্নতমানের এবং রাসায়নিক উপাদান মুক্ত ডায়াপার ব্যবহার করাতে হবে।

শিশুকে শুষ্ক ও র‌্যাশমুক্ত রাখতে দীর্ঘ শোষণ ক্ষমতা সম্পন্ন ডায়াপার ব্যবহার করতে হবে। আর প্রতি ছয় ঘণ্টা অন্তর শিশুর ডায়াপার পরিবর্তন করতে হবে। তবে শিশু যদি বেশি বেশি হিসু করে, তা হলে ছয় ঘণ্টা অপেক্ষা করার অবকাশ নেই। যখনই ডায়াপার ভিজে যাবে তখনই পরিবর্তন করে দিতে হবে। আর অস্বস্তি ও ভেজাভাব কমাতে ডায়াপার র‌্যাশ ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে।

বৃষ্টিতে ভেজা থেকে বাঁচানো

শিশুরা সবসময়ই বৃষ্টি দেখলে আনন্দিত হয়। বৃষ্টিতে ভেজার অনুমতি না পেলেও জানালা গলিয়ে হাত বের করে একটু হাত-মুখ ভেজায়। আবার বৃষ্টি শেষে কোথাও পানি জমে থাকলে তাতে পা ভেজাতে চেষ্টা করে। তাই বাইরে গেলে শিশুকে ছাতার নিচে, সম্ভব হলে কোলে তুলে রাখতে হবে। যাতে বৃষ্টিতে ভিজে না যায়। বর্তমানে বায়ুদূষণের কারণে অ্যাসিড বৃষ্টি হয়, যা শিশুর ত্বকের সমস্যা তৈরি করতে পারে।

মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা

বর্ষা মশার প্রজনন মৌসুম। তাই মশার কামড় থেকে শিশুকে রক্ষা করতে মশারি এবং মশা তাড়ানোর স্প্রে ব্যবহার করুন। বাইরে খেলতে গেলে শিশুকে মস্কুইটো রিপেলেন্ট ক্রিম লাগিয়ে দেবেন, যাতে মশা কামড়াতে না পারে।

ঘরের পরিবেশ

বর্ষায় এমনিতেই ঘরের পরিবেশ স্যাঁতসেঁতে হয়ে থাকে। ঘর মুছলে সহজে শুকাতে চায় না। ঘরের যেসব দরজা, জানালা দিয়ে আলো-বাতাস প্রবেশ করে, সেগুলো খুলে রেখে ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করুন। তবে বৃষ্টির ছাঁট যাতে প্রবেশ না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি

শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার দিন। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত প্রোটিন, শর্করা ও চর্বিজাতীয় খাবার নিশ্চিত করতে হবে। বাইরে আর্দ্রতার তারতম্য অনুযায়ী সুস্থ থাকতে পর্যাপ্ত পানি পান নিশ্চিত করতে হবে।

ত্বকের যত্ন

বর্ষায় শিশুর ত্বক ঘামে বেশি, আবার বৃষ্টি হলে শুষ্কও হয়ে যায়। এমতাবস্থায় শিশুর ত্বকে হালকা ময়েশ্চারাইজার ও পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে ত্বক আর্দ্রতার কারণে বেশি ঘামবে না। আবার ময়েশ্চারাইজার ত্বককে ভালো রাখবে।

ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ

জ্বর, শারীরিক ব্যথা, হাঁচি এবং অন্যান্য লক্ষণগুলো বর্ষাজনিত অসুস্থতার বৈশিষ্ট্য। এমনকি ভাইরাল সংক্রমণের কারণেও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে, শীঘ্রই সরাসরি ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করুন।

সারাবাংলা/এনএল/এএসজি

বর্ষায় শিশুকে সুরক্ষিত রাখার উপায়