একটা সময় ছিল, যখন সন্তানের লালন-পালন, পরিবারের ভেতরের কাজ কিংবা দৈনন্দিন দায়িত্ব বলতেই বোঝাত শুধু ‘মা’কে। সমাজ ব্যবস্থায় নারীর পরিচয় যেন সীমাবদ্ধ ছিল গৃহস্থালি আর সন্তানের যত্ন-আত্তিতে। অন্যদিকে পুরুষ মানেই ছিল পরিবার চালানোর যন্ত্র—যিনি শুধু বাইরে কাজ করবেন, উপার্জন করবেন, দায়িত্ব পালন করবেন বাইরের জগতে।
কিন্তু সময় বদলেছে। বদলেছে মানসিকতা, বদলেছে সমাজের কাঠামো। এখন নারীরা শুধু ঘরের গণ্ডিতেই আবদ্ধ নন—তারা যেমন চাকরি করছেন, ব্যবসা গড়ে তুলছেন, নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তেমনি পুরুষেরাও গৃহস্থালি ও সন্তান লালন-পালনের দায়িত্বকে নিচ্ছেন সমান গুরুত্বের সঙ্গে।
আজকাল অনেক বাবা আছেন যারা সন্তানকে স্কুলে দিয়ে আসেন, হোমওয়ার্কে সাহায্য করেন, শিশুর অসুস্থতায় রাত জাগেন, এমনকি রান্নাঘরেও হাত লাগান। এসব কাজ আর শুধু ‘মায়ের কাজ’ বলে নয়, বরং ‘পিতৃত্বের দায়িত্ব’ হিসেবে দেখছেন তারা।
এই পরিবর্তন শুধু পরিবারের ভেতরেই নয়, সমাজেও ছড়িয়ে দিচ্ছে ইতিবাচক বার্তা। এখনকার পিতারা জানেন, সন্তান মানুষ করতে কেবল মায়ের একার ভূমিকা যথেষ্ট নয়। একটি সুস্থ, সুরক্ষিত ও সহানুভূতিপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তুলতে বাবা-মা উভয়ের সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি।
নারী-পুরুষের এই পরিপূরক ভূমিকাই পরিবারকে করছে আরও শক্তিশালী, সন্তানকে দিচ্ছে ভারসাম্যপূর্ণ মানসিক বিকাশের সুযোগ।
সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, পিতার এই সক্রিয় উপস্থিতি সন্তানদের আত্মবিশ্বাস, আচরণ ও সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অন্যদিকে, নারীর কর্মজীবনেও আসে স্বস্তি, সৃষ্টিশীলতা ও স্বনির্ভরতা।
বদলে যাওয়া এই চিত্র আমাদের শেখায়—লিঙ্গ নয়, দায়িত্ববোধই বড়। আর সন্তান লালন-পালন কেবল কোনো এক পক্ষের নয়, এটি একটি সমান অংশীদারিত্বের যাত্রা।