বাচ্চাটি পড়তে চায় না। স্কুলে যাওয়ার নাম শুনলেই গা বাঁচিয়ে পালাতে চায়। বইয়ের পাতায় চোখ আটকে না, বরং কার্টুন কিংবা খেলাধুলায় মন পড়ে থাকে সারাক্ষণ। এমন চিত্র এখন অনেক মা-বাবার ঘরেই দেখা যায়। দুশ্চিন্তায় পড়ে যান অভিভাবকরা—কীভাবে পড়াশোনায় মনোযোগী করানো যায় সন্তানকে?
অনেকেই ভাবেন, বকাঝকা, শাসন, এমনকি কখনো কখনো শারীরিক শাস্তিও হয়তো তাকে ‘ঠিক’ করে তুলবে। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, এই পদ্ধতি হয়তো সাময়িকভাবে শিশুকে পড়ার টেবিলে বসাতে পারে, কিন্তু তার ভেতরের আগ্রহ, ভালোবাসা কিংবা শেখার আনন্দ তৈরি করতে পারে না। বরং এতে জন্ম নেয় ভয়, বিরক্তি ও আত্মবিশ্বাসহীনতা।
তাহলে উপায়?
১. ভালোবাসা ও বোঝাপড়া:
শিশুর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করুন। তার পছন্দ-অপছন্দ, ভালো লাগা, ভয়—সব কিছু শুনুন মন দিয়ে। আপনার ভালোবাসার অনুভব পেলে সে ধীরে ধীরে নিজের কথা বলতে শিখবে, এবং নিজেই তার সমস্যার কথা জানাবে।
২. শেখাকে মজার করে তুলুন:
শুধু বইয়ের পাতায় আটকে না রেখে গল্প, ছবি, ভিডিও, খেলাধুলা কিংবা হাতে-কলমে কাজের মাধ্যমে শেখানোর চেষ্টা করুন। গণিত শেখাতে কিচেনের মাপঝোক, ইতিহাস শেখাতে ছোট্ট নাট্যাংশ—সবকিছুই কাজে লাগানো যায়।
৩. চাপ নয়, উৎসাহ দিন:
ভুল করলে ধমক না দিয়ে বোঝান। ছোট ছোট সাফল্যে উৎসাহ দিন, প্রশংসা করুন। এতে শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ তৈরি হবে।
৪. রুটিন তৈরি করুন, তবে নমনীয়ভাবে:
শিশুকে নিয়ে একটি রুটিন বানান, যাতে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা, ঘুম ও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোও থাকে। জোর করে নয়, বরং শিশুর সাথে আলোচনা করে রুটিন মেনে চলার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
শিশু মানেই কাদামাটির মতো, যেভাবে গড়বেন— সেভাবেই হবে _
সন্তানকে শুধু পরীক্ষায় ভালো ফল করার মেশিন না ভেবে, একজন মানুষ হিসেবে দেখুন। যার অনুভব আছে, জেদ আছে, ভালো লাগা আছে। তার মন জিততে চাইলে দরকার আপনার ধৈর্য, বোঝাপড়া আর অগাধ ভালোবাসা।
শাসনের বদলে যদি শিশুর মনে শেখার আনন্দ জাগাতে পারেন, তাহলে সেও একদিন নিজ থেকেই বইয়ের পাতায় ডুবে যাবে—আপন মনেই।
শেষ কথা _
বকাঝকা নয়, বরং ভালোবাসা আর সহযোগিতা দিয়েই জয় করা যায় শিশুর মন। আর মন জয় করলেই, পড়াশোনা শুধু দায়িত্ব নয়, হয়ে উঠবে আনন্দ।