চকচকে প্যাকেট, রঙিন মোড়ক, আর বিজ্ঞাপনের লোভনীয় ভাষা— এই তিনের মিলেই শিশুরা আজকাল বেশি আকৃষ্ট হয় বাইরের খাবারের প্রতি। পিৎজা, বার্গার, ফ্রাইড চিকেন— এগুলো যেন এখন তাদের প্রিয় তালিকার শীর্ষে। অথচ, ঘরে রান্না করা সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবারের প্রতি তৈরি হচ্ছে একধরনের অনাগ্রহ। ফলে মা-বাবারা পড়েন দুশ্চিন্তায়— কীভাবে ফিরিয়ে আনবেন সন্তানকে সেই ঘরের খাবারে?
কেন শিশুরা ঘরের খাবার খেতে চায় না?
১. চেহারা ও উপস্থাপনায় একঘেয়েমি
২. স্মার্টফোনে বা টিভিতে ফাস্টফুডের প্রলোভন
৩. পিতামাতার ব্যস্ততা ও সময়ের অভাব
৪. বন্ধুদের প্রভাব— স্কুলে লাঞ্চের সময় বাইরের খাবার দেখা
কীভাবে বাড়াবেন শিশুর ঘরের খাবারে আগ্রহ?
১. উপস্থাপনাকে রঙিন ও মজাদার করুন
শিশুরা চোখ দিয়ে খাবার খায়। তাই তাদের খাবার প্লেটে ব্যবহার করুন নানা রঙের সবজি, ফল, আর আকর্ষণীয় আকার। যেমন— ভাত দিয়ে বানাতে পারেন মিনি বল, রুটিকে কেটে দিতে পারেন তারা বা হৃদয় আকৃতিতে।
২. শিশুকে রান্নার অংশ বানান
আপনার সোনামনি যদি দেখে, তার বানানো রুটিটা সে নিজেই খাচ্ছে— তবে কিন্তু আগ্রহ দ্বিগুণ হবে। তাকে দিন ছোট ছোট দায়িত্ব— ডিম ফাটানো, সবজি ধোয়া, কিংবা নিজ হাতে টিফিনের বাক্স সাজানো।
৩. খাবারের গল্প বলুন
ঘরের খাবারকে দিন একটি গল্প। যেমন— ‘আজ তোমার সুপারহিরো খাবে গাজরের স্যুপ’, বা ‘এই পায়েস কিন্তু খায় রাজকুমার!’ গল্প শুনে শিশুর আগ্রহ অনেকটাই বাড়ে।
৪. প্রতিযোগিতা বা চ্যালেঞ্জ দিন
‘আজ আমরা দেখবো কে আগে শেষ করতে পারে সবজি ভর্তা!’— এমন মজাদার খেলা শিশুকে উৎসাহিত করে।
৫. সপ্তাহে একদিন শিশুর পছন্দের মেনু রাখুন
যদি সপ্তাহে একদিন ওর পছন্দমতো পাস্তা রাখেন, তবে বাকি দিনগুলোতে তাকে রাজি করানো সহজ হবে ঘরের খাবারে।
৬. নিজেরা উদাহরণ হোন
আপনি যদি সবসময় বাইরের খাবার খান, শিশুও তাই শিখবে। তাই নিজে ঘরের খাবার উপভোগ করুন, শিশুকে নিয়ে বসে একসাথে খান।
শেষ হলো, শিশুকে কখনও জোর করে খাবার খাওয়ানো ঠিক নয়। বরং তাকে ধীরে ধীরে বোঝান, ঘরের খাবারে আছে ভালোবাসা, যত্ন, আর পুষ্টি। বাইরের খাবার কখনোই সেই ভালোবাসা দিতে পারে না। আপনার সামান্য সময় আর একটু কৌশলেই বদলে দিতে পারেন শিশুর খাদ্যাভ্যাস— আর তাতেই থাকবে সুস্থ-সবল ভবিষ্যতের বীজ।