চোখ শুধু আমাদের দৃষ্টিশক্তির মাধ্যম নয়, অনেক সময় শরীরের ভেতরের জটিল সমস্যার আগাম সতর্কবার্তাও দেয়। কিডনির অসুখও সেই তালিকায় রয়েছে। কিডনি ও চোখ দুটোই সূক্ষ্ম রক্তনালি ও তরলের সঠিক ভারসাম্যের ওপর নির্ভর করে কাজ করে। তাই কিডনিতে সমস্যা দেখা দিলে তার প্রভাব চোখে পড়া অস্বাভাবিক নয়। নিচে এমন পাঁচটি চোখের লক্ষণের কথা বলা হলো, যেগুলো কিডনি সমস্যার সম্ভাব্য ইঙ্গিত বহন করে।
সারাদিন স্থায়ী চোখ ফোলা _
অনেকেরই সকালে ঘুম থেকে উঠলে চোখে হালকা ফোলাভাব থাকে, যা কিছু সময় পর স্বাভাবিক হয়ে যায়। কিন্তু যদি এই ফোলা সারাদিন স্থায়ী হয়, বিশেষত চোখের পাতার চারপাশে, তাহলে এটি উদ্বেগের বিষয়। এমন অবস্থা প্রোটিনুরিয়া হতে পারে, যেখানে প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে অতিরিক্ত প্রোটিন বেরিয়ে যায়। এর ফলে নরম টিস্যুতে তরল জমে, যা প্রথমে চোখের চারপাশে দৃশ্যমান হয়। কিডনির ক্ষতির প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
ঝাপসা বা দ্বিগুণ দেখা _
হঠাৎ করে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া, ফোকাস করতে অসুবিধা বা একটার বদলে দুটো দেখা-এসব ঘটতে পারে চোখের সূক্ষ্ম রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে। উচ্চ রক্তচাপ ও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস যা কিডনি রোগের মূল কারণ, এই ক্ষতির জন্য দায়ী। এ ধরনের সমস্যা হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথি বা ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি নামে পরিচিত। এতে রেটিনায় ফোলাভাব ও তরল জমতে পারে, গুরুতর ক্ষেত্রে দৃষ্টি নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। যদি ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ থাকে এবং হঠাৎ দৃষ্টিতে পরিবর্তন লক্ষ্য করেন তবে চোখের পাশাপাশি কিডনিও পরীক্ষা করান।

কিডনিতে সমস্যা দেখা দিলে তার প্রভাব চোখে পড়া অস্বাভাবিক নয়
চোখের শুষ্কতা, চুলকানি বা জ্বালা _
পরিবেশগত কারণে চোখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। তবে যদি দীর্ঘসময় ধরে চোখে শুষ্কতা, খচখচ ভাব বা জ্বালা অনুভূত হয়, বিশেষত কিডনি রোগের শেষ পর্যায়ে বা ডায়ালাইসিসের রোগীদের ক্ষেত্রে, তবে এটি কিডনির সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। ক্যালসিয়াম ও ফসফেটের ভারসাম্যহীনতা কিংবা শরীরে বর্জ্য পদার্থ জমে যাওয়ার কারণে চোখে অশ্রু উৎপাদন কমে যায়। সাময়িক স্বস্তির জন্য কৃত্রিম অশ্রু ব্যবহার করা গেলেও মূল কারণ নির্ণয় জরুরি।
রক্তাভ বা লাল চোখ _
চোখ লাল হওয়ার কারণ অ্যালার্জি, ঘুমের অভাব বা সংক্রমণ হতে পারে। তবে কিডনি সমস্যার ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসও দায়ী হতে পারে। রক্তচাপ বেড়ে গেলে চোখের ক্ষুদ্র রক্তনালি ফেটে গিয়ে চোখ লালচে হয়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে লুপাস নেফ্রাইটিসের মতো অটোইমিউন রোগও কিডনি ও চোখে একসঙ্গে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। চোখ লাল হওয়ার সঙ্গে যদি জয়েন্টে ব্যথা, ফোলাভাব বা ত্বকে র্যাশ থাকে, তবে দেরি না করে চিকিৎসা নিন।
রং চিনতে অসুবিধা _
কিডনির অসুখে অনেক সময় রং বোঝার ক্ষমতা কমে যায়, বিশেষত নীল ও হলুদ রঙের ক্ষেত্রে। এটি ঘটে যখন দীর্ঘমেয়াদি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা শরীরে ইউরেমিক টক্সিন জমে অপটিক নার্ভ বা রেটিনার ক্ষতি করে। পরিবর্তনটি ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং প্রথমে চোখ এড়িয়ে যেতে পারে, তবে সময়ের সঙ্গে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বয়সের দোহাই দিয়ে বসে না থেকে দৃষ্টি নিস্তেজ হয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সতর্কতা _
যদি চোখের কোনো সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং তার সঙ্গে ক্লান্তি, শরীরে ফোলাভাব বা প্রস্রাবের পরিবর্তন দেখা দেয়, তবে চোখ ও কিডনি দুটোই পরীক্ষা করানো জরুরি।
তথ্যসূত্র: মায়ো ক্লিনিক