ডাবের পানি একদিকে যেমন প্রাকৃতিক শক্তির উৎস, অন্যদিকে আবার অনেকের জন্য ঝুঁকিও বয়ে আনতে পারে। কম ক্যালোরি, ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ এবং শরীরকে দ্রুত হাইড্রেট করার জন্য একে ‘সুপারড্রিংক’ বলা হলেও নির্দিষ্ট কিছু শারীরিক সমস্যায় এটি ক্ষতির কারণ হতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগী _
ডাবের পানিতে প্রাকৃতিকভাবে শর্করা থাকে। প্রতি ২০০ মিলিলিটারে প্রায় ৬–৭ গ্রাম চিনি পাওয়া যায়। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি রক্তে গ্লুকোজ বাড়িয়ে দিতে পারে, বিশেষ করে নিয়মিত বা বেশি খেলে। আবার বাজারজাত বা বোতলজাত ডাবের পানিতে অতিরিক্ত চিনি মেশানো হয়, যা ঝুঁকি আরও বাড়ায়। তাই ডায়াবেটিস থাকলে সীমিত পরিমাণে বা একেবারে এড়িয়ে চলাই ভালো।
অ্যালার্জি সমস্যা _
যদিও ডাবের পানিতে অ্যালার্জি তুলনামূলক কম দেখা যায়, তবুও সংবেদনশীল ব্যক্তিদের মধ্যে চুলকানি, ত্বক লাল হওয়া, ফোলাভাব, এমনকি গুরুতর ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট ও অ্যানাফিল্যাক্সিসের মতো সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে যাদের বাদামে অ্যালার্জি রয়েছে, তাদের বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। শিশুদের ক্ষেত্রেও ডাবের প্রোটিন মারাত্মক প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।
কিডনি রোগী _
ডাবের পানি পটাশিয়ামে সমৃদ্ধ, যা সুস্থ শরীরের জন্য ভালো হলেও কিডনি সমস্যায় ভুগছেন এমন রোগীদের জন্য বিপজ্জনক। কিডনি ঠিকভাবে কাজ না করলে পটাশিয়াম রক্তে জমে গিয়ে হাইপারক্যালেমিয়ার ঝুঁকি তৈরি করে। এতে বমি বমি ভাব, দুর্বলতা, এমনকি হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তাই কিডনির সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ডাবের পানি পান করা ঠিক নয়।
ঠান্ডা-কাশি বা ফ্লুর সময় _
আয়ুর্বেদ মতে ডাবের পানি শরীরকে শীতল রাখে। গরমকালে এটি উপকারী হলেও ঠান্ডা বা ফ্লুর সময় এটি সমস্যা বাড়াতে পারে। কারণ এর ঠান্ডাভাব শ্লেষ্মা বৃদ্ধি করে, শরীরকে আরও দুর্বল করে দিতে পারে। সর্দি, গলা ব্যথা, বা শীতে ঘন ঘন অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা থাকলে এই সময়ে ডাবের পানি এড়িয়ে চলাই ভালো।
উচ্চ রক্তচাপের রোগী _
ডাবের পানির পটাশিয়াম সোডিয়ামের প্রভাব কমিয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। তবে যারা ইতিমধ্যে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ (বিশেষ করে ACE ইনহিবিটর বা পটাশিয়াম-স্পেয়ারিং ডায়ুরেটিকস) খান, তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বাড়তে পারে। এতে শরীরে অতিরিক্ত পটাশিয়াম জমা হয়ে সমস্যা তৈরি হতে পারে।
শেষ কথা হলো, ডাবের পানি একটি চমৎকার প্রাকৃতিক পানীয় হলেও সবার জন্য সমান উপকারী নয়। ডায়াবেটিস, কিডনি সমস্যা, অ্যালার্জি, ঠান্ডা-কাশি বা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ সেবনকারীদের এ ব্যাপারে বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে।