ছোটবেলা থেকে আমরা সবাই এক অভিজ্ঞতার শিকার— মশার কামড়। পার্কে বসে আড্ডা দিচ্ছেন, পাশে আরও পাঁচজন আছে, কিন্তু মনে হচ্ছে সব মশাই যেন আপনার উপরেই হামলে পড়েছে। কখনও কি ভেবেছেন, কেন মশা আপনাকে এত পছন্দ করে? এটা কি কেবল কাকতালীয়, নাকি বিজ্ঞানের কোনো ব্যাখ্যা আছে?
সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে— এটা নিছক কল্পনা নয়। কিছু মানুষ সত্যিই মশার কাছে ‘ভিআইপি আকর্ষণ’!
‘মশক চুম্বক’ আপ্নিই হওয়ার কারণ _
নিউ ইয়র্কের রকফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুজীববিদ্যা গবেষক লেসলি ভসহল ও তার সহকর্মীরা কয়েক বছরের গবেষণায় খুঁজে পেয়েছেন, যাদের মশা বেশি কামড়ায়, তাদের ত্বকে কিছু বিশেষ ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড সবসময় উপস্থিত থাকে।
এই অ্যাসিডগুলো ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং ত্বকে বসবাসকারী কিছু ব্যাক্টেরিয়ার খাবার হিসেবেও কাজ করে। এই ব্যাক্টেরিয়া অ্যাসিডগুলো ভেঙে এমন এক ধরনের গন্ধ তৈরি করে, যা মশার জন্য যেন একধরনের ‘পারফিউম’।
গবেষণায় দেখা গেছে, ‘মশক চুম্বক’ ব্যক্তিদের দিকে মশারা সাধারণ মানুষের তুলনায় ১০০ গুণ বেশি আকৃষ্ট হয়। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়— এটা সারাজীবন একই রকম থাকে! অর্থাৎ আপনি যদি আজ মশার প্রিয় হন, ভবিষ্যতেও তাই থাকবেন।
গবেষণার পদ্ধতি _
এই গবেষণায় ৬৪ জন স্বেচ্ছাসেবক অংশ নেন। তাদের হাতের গন্ধ সংগ্রহ করে এডিস ইজিপ্টাই মশার সামনে রাখা হয়। দেখা যায়, কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবকের প্রতি মশার আকর্ষণ ছিল বিপুল পরিমাণে বেশি, এবং বহু বছর ধরে পরীক্ষার ফল একই থেকে গেছে।
সমাধান কি আছে?
দুঃখজনক হলেও সত্য—গবেষকরা বলছেন, যেহেতু এই ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয়, তাই এটিকে শরীর থেকে দূর করা স্বাস্থ্যকর নয়। অর্থাৎ, মশার কামড় থেকে চিরতরে বাঁচার কোনো প্রাকৃতিক উপায় নেই।
তবে সাময়িক সমাধান হিসেবে—
মশা প্রতিরোধক লোশন বা স্প্রে ব্যবহার
পূর্ণ হাতা ও মোজা পরা
মশারি ব্যবহার
মশা প্রজনন ক্ষেত্র (স্থির পানি) দূর করা—এসব উপায় কাজে লাগাতে পারেন।
শিক্ষণীয় বিষয়
এই গবেষণা আমাদের দেখায়, প্রাকৃতিক দেহগঠন ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যও পোকামাকড়ের আচরণকে প্রভাবিত করে। এটি শুধু মশার ক্ষেত্রেই নয়, আরও অনেক কীটপতঙ্গ ও প্রাণীর ক্ষেত্রেও সত্য হতে পারে।
তাই, পরের বার যদি বন্ধুরা হাসতে হাসতে বলে— ‘তুমি তো মশার প্রিয় মানুষ!’
মনে রাখবেন, এর পেছনে কিন্তু কঠিন বিজ্ঞান কাজ করছে।