আধুনিক জীবনে প্রতিদিনের ব্যস্ততা আমাদেরকে এতটাই আচ্ছন্ন করে রাখে যে, পরিবারের কাছের মানুষদের জন্য সময় বের করা যেন ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। কর্মক্ষেত্রের চাপ, সন্তানদের পড়াশোনা, নিত্যদিনের দৌড়ঝাঁপ— সবকিছুর ভিড়ে সবচেয়ে অবহেলিত থেকে যান পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠরা। অথচ এঁরাই একসময় পরিবারের মূল ভরসা ছিলেন। হাড়ভাঙা পরিশ্রম, সংগ্রাম আর ত্যাগের বিনিময়ে আজ আমরা সুস্থ-সবল, স্বাবলম্বী হয়েছি।
বর্তমানে অনেক পরিবারেই দেখা যায়— ছেলে-মেয়েরা কর্মস্থলে ব্যস্ত, নাতি-নাতনিরা স্কুল-কলেজে যায়, আর ঘরে থেকে যান বৃদ্ধ বাবা-মা বা দাদা-দাদীরা। দিনের পর দিন একাকিত্বে কাটাতে কাটাতে তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। পরিবারে তাদের ভূমিকা কমে গেছে— এই অনুভূতি তাদের ভেতরে এক ধরনের নিঃসঙ্গতা তৈরি করে। অথচ বাস্তবতা হলো, বয়োজ্যেষ্ঠদের অভিজ্ঞতা, জ্ঞান আর ভালোবাসা একটি পরিবারের জন্য অপরিসীম সম্পদ।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বৃদ্ধ বয়সে মানুষ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন অনুভব করেন আপনজনের সান্নিধ্য ও মানসিক শান্তির। সামান্য সময় দিয়ে তাদের সঙ্গে বসে গল্প করা, তাদের অভিজ্ঞতার কথা শোনা কিংবা হাঁটতে নিয়ে যাওয়া—এসব ছোট ছোট উদ্যোগই তাদের জীবনে আনন্দ নিয়ে আসতে পারে। শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, মানসিক সমর্থন ও ভালোবাসা দেওয়াই সবচেয়ে বড় প্রয়োজন।
আমাদের মনে রাখা দরকার, আজকের তরুণ প্রজন্ম একদিন বার্ধক্যে পৌঁছাবে। তখন সেও চাইবে আপনজনের স্নেহ, যত্ন আর ভালোবাসা। তাই এখন থেকেই পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে। তাদের প্রতি অবহেলা নয়, বরং আন্তরিক যত্নই হতে পারে আমাদের কৃতজ্ঞতার প্রকৃত প্রতিফলন।
পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষগুলো বোঝা নন—তাঁরা আশীর্বাদ। তাই তাদের পাশে দাঁড়ানো শুধু নৈতিক দায়িত্ব নয়, মানবিক কর্তব্যও। পরিবারের প্রতিটি সদস্য যদি সামান্য সময় দিতে পারে, তাহলে বয়োজ্যেষ্ঠদের বার্ধক্য আর একাকিত্বে নয়, বরং ভালোবাসা ও সম্মানের আবহে কেটে যাবে।