বাংলার ঋতুচক্রে বৈচিত্র্যের কোনো শেষ নেই। বর্ষার টানা বৃষ্টির পর যখন প্রকৃতি ধীরে ধীরে শুকনো রোদে উজ্জ্বল হয়, ঠিক তখনই হাজির হয় শরৎকাল। এই ঋতুর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সচ্ছ নীল আকাশ আর দিগন্তজোড়া সাদা কাশফুল। যেন আকাশের মেঘ নেমে এসে মাটির বুকে ছড়িয়ে পড়েছে। নীল আর সাদার এই মায়াবি মিশেলে প্রকৃতি সাজে অন্য রকম এক মোহনায়, যা মানুষকে অজান্তেই টেনে নিয়ে যায় ভালোবাসার ঘোরে।
শরৎকালে কাশফুল শুধু প্রকৃতিকে নয়, মানুষের হৃদয়কেও ছুঁয়ে যায়। নরম তুলোর মতো সাদা পাপড়ি আর বাতাসে দুলে ওঠা কাশবনের দৃশ্য অনেকের কাছে প্রেম ও স্বপ্নের প্রতীক হয়ে ওঠে। বিশেষ করে নগর জীবনে ব্যস্ত মানুষগুলো এই ঋতুতে প্রকৃতির কোলে একটু শান্তি খুঁজে নিতে ছুটে যায় কাশবনের কাছে।
রাজধানী ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ি কিংবা আফতাবনগরের মাঠঘাট এখন কাশফুলপ্রেমীদের মিলনমেলা। এখানে প্রায়ই দেখা যায় পরিবার, বন্ধুবন্ধু কিংবা তরুণ-তরুণীদের ভিড়। কেউ ছবি তুলছে, কেউ হেঁটে বেড়াচ্ছে, আবার কেউবা নিরিবিলি বসে প্রকৃতির সৌন্দর্যে ডুবে যাচ্ছে। সেলফি আর ক্যামেরায় বন্দি হচ্ছে শরতের সাদা সৌন্দর্য। অনেকেই বলেন, কাশফুলের এই দোলা যেন মানুষকে জীবনের ব্যস্ততা থেকে ছুটে গিয়ে কয়েক মুহূর্তের জন্য নির্ভেজাল আনন্দ উপহার দেয়।
শুধু দর্শনার্থী নয়, ফটোগ্রাফার ও কনটেন্ট নির্মাতাদের কাছেও কাশবন এখন এক অপরাজেয় আকর্ষণ। অনেকে প্রাকৃতিক আলোয় ফটোশুটের জন্য কাশবনকে বেছে নিচ্ছেন। শরৎ আসলেই তাই দিয়াবাড়ি বা আফতাবনগরের কাশবন যেন উৎসবমুখর হয়ে ওঠে।
প্রকৃতির এই সৌন্দর্য কেবল চোখে দেখার নয়, হৃদয়ে অনুভব করারও। কাশফুলের দোলায় শরতের বাতাস যেন মানুষকে নতুন করে বাঁচার প্রেরণা দেয়। ব্যস্ত নগর জীবনে এই ক’টি মুহূর্তের প্রশান্তিই হয়তো মানুষকে ভরিয়ে তোলে নতুন উদ্যমে।
শরৎ তাই শুধু একটি ঋতু নয়, বরং প্রকৃতির এক বিশেষ প্রেমপত্র— যেখানে সাদা কাশফুলের ছোঁয়ায় ধরা দেয় নির্মল সৌন্দর্য আর জীবনের সহজ আনন্দ।