আমাদের সমাজে একটা প্রচলিত ধারণা রয়েছে— ৪০ বছর পার হলেই বয়স যেন থমকে যায়, মানুষ বুড়ো হয়ে যায়। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। গবেষণা বলছে, ৪০– এর পরে মানুষ মানসিকভাবে আরও পরিপক্ব হয়ে ওঠে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বাড়ে, অভিজ্ঞতা জীবনের নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক হয়। তাই এ বয়সকে জীবনের পতন নয়, বরং নতুন দিগন্তে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ হিসেবেই দেখা উচিত।
তবে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে— শরীর এবং মনকে সজীব রাখতে গেলে জীবনযাপনে কিছু ইতিবাচক অভ্যাস গড়ে তুলতে হয়। কারণ এ সময় থেকেই শরীরে ধীরে ধীরে নানা পরিবর্তন আসতে শুরু করে। যেমন হরমোনের ওঠানামা, বিপাক ক্রিয়ার গতি কমে যাওয়া, অথবা হাড় ও পেশির শক্তি কমতে শুরু করা। যদি শুরুতেই সচেতন হওয়া যায়, তাহলে অনেক দিন সুস্থভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব।
প্রথমেই আসে নিয়মিত ব্যায়াম। প্রতিদিন অন্তত আধঘণ্টা হাঁটা, হালকা দৌড়ানো, যোগব্যায়াম বা সাঁতার শরীরকে ফিট রাখে, ওজন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। একইসঙ্গে সুষম খাদ্যাভ্যাসও জরুরি। অতিরিক্ত ভাজাপোড়া, মিষ্টি ও তৈলাক্ত খাবার কমিয়ে ফলমূল, শাকসবজি, বাদাম ও উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত।
এ বয়সে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোও খুব প্রয়োজন। রক্তচাপ, রক্তে শর্করা, কোলেস্টেরল, লিভার ও কিডনির কার্যকারিতা প্রতি বছর একবার পরীক্ষা করলে রোগ দ্রুত শনাক্ত করা যায়। পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক প্রশান্তি, ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা সুস্থ জীবনযাপনের অংশ।
শুধু শারীরিক নয়, মানসিক সুস্থতাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। ৪০-এর পরে অনেকেই পরিবার, পেশা ও ব্যক্তিগত টানাপোড়েনে মানসিকভাবে চাপে থাকেন। এসময় আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুদের সঙ্গে বেশি সময় কাটানো, বই পড়া, ভ্রমণ কিংবা প্রিয় কোনো শখ পূরণ মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখে।
অর্থাৎ, ৪০ বছর পার হওয়া মানেই জীবনের গতি কমিয়ে দেওয়া নয়। বরং নতুন অভ্যাস, সচেতনতা আর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে জীবনকে সাজালে এই বয়সই হয়ে উঠতে পারে সবচেয়ে সুন্দর, পরিপূর্ণ ও সার্থক অধ্যায়।